চট্টগ্রাম-আনোয়ারা সড়ক হচ্ছে ৬ লেনের, ব্যয় ৪০৭ কোটি টাকা

দক্ষিণ জেলা প্রতিনিধি, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু টানেলের সংযোগ সড়ক প্রকল্প নামে চট্টগ্রাম-আনোয়ারা সড়কের কালাবিবির দীঘি হতে ক্রসিং ওয়াই জংশন পর্যন্ত ছয় লেনের সড়ক প্রশস্তকরণের কাজ শুরু হতে যাচ্ছে।  এ লক্ষ্যে টেন্ডার আহ্বান করেছে সড়ক ও জনপদ বিভাগ (সওজ)।  আগামি ১০ সেপ্টেম্বর টেন্ডার জমাদানের শেষ দিন।  চূড়ান্ত মূল্যায়ন শেষে ডিসেম্বরেই শুরু হবে সড়ক নির্মাণের মূল কাজ- এমনটাই জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।  বর্তমানে দুই লেনের ১৮ ফুটের সড়কটি হবে সম্প্রসারণের ফলে হবে ১৬০ ফুট।  সাড়ে ১১ কিলোমিটার এই সড়ক নির্মাণে ব্যয় হবে ২৯৫ কোটি।  অন্যান্য খরচসহ মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪০৭ কোটি টাকা।  মূলত কর্ণফুলীর তলদেশে বাস্তবায়নাধীন বঙ্গবন্ধু টানেলের অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ সামাল দিতে এই প্রশস্তকরণের কাজ করছে সরকার।  বঙ্গবন্ধু টানেলের সংযোগ সড়ক নামে পরিচিত এই প্রকল্পের কাজ ২০২২ সালের জুন মাস নাগাদ শেষ হবে বলে জানা গেছে।
কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেল ও চায়না ইকোনমিক জোন ঘিরে বদলে যাওয়া দক্ষিণ চট্টগ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থায়ও আসছে ব্যাপক পরিবর্তন।  চট্টগ্রামের শিকলবাহা ওয়াই জংশন থেকে আনোয়ারা কালা বিবির দীঘি পর্যন্ত সাড়ে ১১ কিলোমিটারের এই সংযোগ সড়কের মাধ্যমে একদিকে যেমন অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ সামাল দেয়া যাবে তেমনি ঢাকা থেকে কক্সবাজারের দূরত্ব কমবে ৫০ কিলোমিটার।  এতে সময় ও অর্থ সাশ্রয়ের পাশাপাশি বেগবান হবে এতদাঞ্চলের অর্থনীতিও।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) সূত্র জানায়, কর্ণফুলী টানেল চালু হলে প্রথম বছরেই ৬৩ লাখ গাড়ি টানেলের ভেতর দিয়ে চলাচল করবে।  এই চাপ সামলাতে হবে সংযোগ সড়কগুলোকে।  ক্রসিং-কালাবিবির দীঘি সড়কটি সরাসরি কোনো বিভাগীয় সদরকে সংযুক্ত না করলেও অর্থনৈতিক গুরুত্ব বিবেচনায় এটি বিশেষ প্রাধান্য পাচ্ছে।  একটি জাতীয় মহাসড়ক, একটি আঞ্চলিক সড়ক ও কর্ণফুলী টানেল হয়ে এটি চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে যুক্ত হবে।  পাশাপাশি ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের মাধ্যমে মাতারবাড়ি পাওয়ার হাব, মহেশখালী গভীর সমুদ্র বন্দর ও টেকনাফ স্থল বন্দরের সঙ্গে যুক্ত হবে।  কর্ণফুলী টানেল হয়ে যে সড়ক কক্সবাজার যাবে তা কোনো একসময় মিয়ানমার হয়ে প্রসারিত হবে চীনের কুনমিং সিটি পর্যন্ত।  মহাপরিকল্পনার আওতায় চট্টগ্রামে প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে বিদ্যুৎ হাব।  মহেশখালীর মাতারবাড়িতে হচ্ছে এলএনজি টার্মিনাল।  তাই চট্টগ্রাম হয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দ্বার খুলে দেওয়ার যে স্বপ্ন সরকার দেখছে সেটি অন্যতম সংযোগ হয়ে উঠবে সাড়ে ১১ কিলোমিটারের বিকল্প সড়কটি।
সূত্র জানায়, সড়কটি নির্মিত হলে টানেল কেন্দ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে বিশাল পরিবর্তনের পাশাপাশি চট্টগ্রাম-কক্সবাজার দুরুত্ব কমবে ৩৫ কিলোমিটার আর ঢাকা-কক্সবাজারের দূরত্ব কমবে ৫০ কিলোমিটার।  বর্তমানে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের দূরত্ব প্রায় ৪৪৫ কিলোমিটার।  এর মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রামের দূরত্ব ৩০০ কিলোমিটার এবং চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের দূরত্ব ১৫০ কিলোমিটার।  বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণ হলে ঢাকার যানবাহনগুলো ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাট হয়ে বন্দর টোল রোড-নির্মাণাধীন আউটার রিং রোড-পতেঙ্গা হয়ে কর্ণফুলী টানেল ব্যবহার করলে পথ কমবে প্রায় ১৫ কিলোমিটার।  তাছাড়া কর্ণফুলী টানেল হয়ে আনোয়ারা উপজেলার সিইউএফএল ঘাট-চাতরি চৌমুহনী-বাঁশখালী-পেকুয়ার মগনামা হয়ে সরাসরি কক্সবাজার সদরে যুক্ত হতে সড়ক কমবে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার।  দুই দিকে দূরত্ব কমবে প্রায় ৫০ কিলোমিটার সড়ক।
বর্তমানে টানেল ঘিরে দক্ষিণ চট্টগ্রামে চলছে বিশাল অর্থনৈতিক কর্মযজ্ঞ।  টানেল প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ।  যা চট্টগ্রাম প্রান্তের নেভাল একাডেমি থেকে শুরু হয়ে সড়কের কালাবিবি দীঘি নামক স্থানের কাছে মিলিত হবে।  টানেলের কাজ শেষ হলে ঢাকা থেকে কক্সবাজারমুখি ৯০ শতাংশ গাড়ি চলাচল করবে কর্ণফুলী টানেল হয়ে।  সবমিলিয়ে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ স্বপ্নের কাছাকাছি দক্ষিণ চট্টগ্রাম।  কিন্তু এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সড়কের উপর যে চাপ পড়বে তা সামাল দিতে সড়ক উন্নয়ন কাজে হাত দিতে যাচ্ছে এ মাসেই।
সওজের দোহাজারী সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুমন সিংহ বলেন, ক্রসিং ওয়াই জংশন-কালাবিবির দীঘি ৬ লেনের সড়কটি মূলত টানেল সড়কের সংযোগ সড়ক হিসাবে ব্যবহৃত হবে।  এটি হবে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-কক্সবাজার সড়কের সংযোগস্থল।  ১৬০ ফুট প্রশস্তের সড়কটি নির্মাণে ব্যয় হবে ৪০৭ কোটি টাকা।  ১৯৬৫ সালের অধিগ্রহণ অনুসারে বর্তমান সড়কের উভয় পাশে পর্যাপ্ত জায়গা থাকায় খুব বেশি জমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন হচ্ছে না।
আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ জোবায়ের আহমদ বলেন, টানেল সংযোগ সড়ক নির্মাণের প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে।  সড়কটি দক্ষিণ চট্টগ্রামের অন্যতম চাতরী চৌমুহনী বাজারের মাঝখান দিয়ে গিয়ে টানেলের সংযোগ হয়ে কালাবিবির দীঘির মোড়ে চায়না ইকোনমিক জোনের সাথে মিলিত হবে

ডিসি/এসআইকে/এসএমইউ