চম্পক চক্রবর্তী, বিশেষ প্রতিবেদক >>>
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার ১১টি ইউনিটের কমিটি গঠন করা হয় গত সোমবার (৭ সেপ্টেম্বর)। কিন্তু নানান অভিযোগের কারণে ২৪ ঘণ্টা না পেরোতেই স্থগিত হলো এসব কমিটি। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, আর্থিক লেনদেন, সিনিয়র বিএনপি নেতাদের মতামত না নেওয়া, ভাইভিত্তিক গ্রুপের লোকজন কাঙ্খিত পদ না পাওয়াসহ নানান অভিযোগ উঠেছে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের বিরুদ্ধে। তবে, গঠিত কমিটি গুলো সম্পর্কে সংসদীয় এলাকার মনোনীত এমপি প্রার্থীদের নেতিবাচক অভিযোগের বিষয়টিকেই প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।
গত সোমবার (৭ সেপ্টেম্বর) যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাইফুল আলম নীরব ও সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর উপস্থিতিতে যুবদল চট্টগ্রাম বিভাগীয় দলের ১১টি ইউনিটের কমিটি অনুমোদন করা হয়। ৩১ সদস্যবিশিষ্ট এ কমিটি অনুমোদন দেন দক্ষিণ জেলা যুবদলের সভাপতি মোহাম্মদ শাহজাহান ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আজগর। ঘোষিত কমিটিগুলোকে আগামি ৩০ দিনের মধ্যে অধীনস্থ ইউনিটের কমিটি গঠন করে সম্মেলনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ২৪ ঘন্টা না যেতেই এ কমিটিগুলোর কার্যক্রম স্থগিত করে কেন্দ্র। গতকাল মঙ্গলবার (৮ সেপ্টেম্বর) পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত ঘোষিত ১১ কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করে বিজ্ঞপ্তি জারি করে।
কেন্দ্রীয় যুবদলের দপ্তর সম্পাদক কামরুজ্জামান দুলাল স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, স্থানীয় নেতৃবৃন্দের কিছু অভিযোগের ভিত্তিতে সদ্য ঘোষিত চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবদলের ১১ ইউনিটের আহবায়ক কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করেছে কেন্দ্রীয় যুবদল। পর্যাপ্ত যাচাই-বাছাই শেষে পরবর্তীতে কমিটিসমূহের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত জানানো হবে।
বুধবার (৯ সেপ্টেম্বর) যুবদলের কেন্দ্রীয় ও চট্টগ্রামের নেতা-কর্মীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ঘোষিত কমিটি নিয়ে যেসব অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে, তারমধ্যে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ সবচেয়ে বেশি। ৫ থেকে ১৫ লাখ টাকায় পদ বিক্রি করার অভিযোগ তোলা হলেও এগুলো অবান্তর বলে মনে করছেন সংগঠনটির শীর্ষ নেতারা। কমিটি গঠনের প্রক্রিয়ায় সিনিয়র নেতাদের পরামর্শ গ্রহণ না করাকে বড় ত্রুটি হিসাবে দেখা হচ্ছে। ত্যাগী কর্মীদের মূল্যায়ন না করা, এলাকাভিত্তিক ও ভাইভিত্তিক গ্রুপিংয়ের নেতাদের অন্তর্ভুক্তকরণে ব্যালেন্স না করা, কোনো কার্যক্রমে না থাকা কর্মীকেও মূল পদে আনার অভিযোগ আছে।
শীর্ষ নেতাদের মতে, বিএনপির সিনিয়র নেতা হিসাবে সংসদীয় আসনে মনোনীত এমপি প্রার্থীদের মতামত না নিয়ে বা অনুসারীদের পদে স্থান না দেয়ায় দক্ষিণ জেলা যুবদলের ১১টি কমিটি স্থগিত হয়েছে। এমপি প্রার্থীদের সাথে আলোচনা করেই কমিটি গঠন করা হবে। যদিও দক্ষিণ জেলা যুবদলের দাবি- প্রত্যেক এমপি প্রার্থীর সাথে আলোচনা ও প্রস্তাবনা নিয়েই কমিটি গঠন করা হয়েছে।
দক্ষিণ জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আজগর জানান, কমিটি গঠনের একটি নির্দেশিত প্রক্রিয়া রয়েছে। জেলা কমিটি তালিকা প্রস্তুত করে বিভাগীয় কমিটির কাছে পাঠায়। বিভাগীয় কমিটি যাচাই-বাছাই, সংযোজন-বিয়োজন করে কেন্দ্রে পাঠায়। কেন্দ্র সেই তালিকা আমাদের অনুমোদন করতে নির্দেশনা দেয়। এমনিতেই চট্টগ্রামে যুবদলের কমিটি দীর্ঘদিন পর হতে যাচ্ছে। কোথাও ৮ বছর আবার কোথাও ১৪-১৫ বছর পর। এমন অবস্থায় কিছু সিনিয়র নেতা অভিযোগ করেছেন নিজেদের লোক আসেনি। কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করে সেটা দেখা হচ্ছে। কমিটি গঠনে এমপি প্রার্থী ও সিনিয়র নেতাদের সাথে আলোচনা করে প্রস্তাবনা নিয়েই করা হয়েছে। যারা পদ পাননি তারাই এসব অভিযোগ রটাচ্ছেন। আর্থিক লেনদেনের অভিযোগের প্রশ্নে তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক একটি বৃহত সংগঠনে অভিযোগ থাকতেই পারে। সবাইকেতো আর পদ দেয়া যায় না। কাউকে না কাউকেতো ছাড় দিতেই হবে। আমাদের ব্যক্তিস্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে সংগঠনের জন্য ভাবতে হবে। আগামির আন্দোলন-সংগ্রাম পদে না থেকেও করা সম্ভব। আমরা সংগঠনকে সুসংগঠিত করার জন্য কাজ করছি। প্রত্যেক জায়গায় ৫-৭ জন আহবায়ক প্রার্থী। একজন খুশি হলেও বাকিরা তো মন খারাপ থেকে অবান্তর অভিযোগ করতেই পারেন। শেষ কথা হচ্ছে আমাদের সবাইকে সংগঠনের দিকে তাকাতে হবে, ব্যক্তিস্বার্থ নয়।
চট্টগ্রাম মহানগর যুবদলের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় যুবদলের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সহ-সভাপতি মোশাররফ হোসেন দিপ্তি বলেন, কেন্দ্র থেকে কমিটি গঠনের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। আমরা সবার মতামতের ভিত্তিতেই কমিটির তালিকা পাঠিয়েছি। কমিটি গঠনে কেউ বাদ পড়তে পারে- এটা স্বাভাবিক। যাচাই-বাছাই করে এখন সিদ্ধান্ত দিবে। ভুল হলে সেটা ঠিক করে আবার কমিটি দিবে। একটা বড় রাজনৈতিক দলে কিছু ভুল হতেই পারে। চিঠিতেই বলা আছে, যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত নিবে কেন্দ্র। কাজেই যা হচ্ছে সেগুলো অস্বাভাবিক কিছু না। আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, যারা পদ পায় না তারা অভিযোগ করবেন- এটাতো স্বাভাবিক। আমাদের নেতারা এতো টাকা দিয়ে যুবদলের কমিটিতে ঢুকবেন- এটাতো একেবারেই হাস্যকর। শত শত মামলার পেছনে ছুটতে গিয়ে আজ অনেকেই নি:স্ব। তারা এতো টাকা দিয়ে কমিটিতে পদ পেতে চেষ্টা করবে বলেন? তিনি বলেন, কর্মী থেকে টাকা নিয়ে কিভাবে নেতা হবে? নেতাদের তো কর্মীদের কাছেই ফিরে যেতে হয়। আর্থিক লেনদেন হলে সেখানে তো সম্মান থাকার কথা নয়। সুতরাং আর্থিক লেনদেনের অভিযোগটি একেবারেই ভিত্তিহীন।
দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক ও নগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু সুফিয়ান জানান, যুবদলের কমিটি হচ্ছে- সেটাইতো আমি জানতাম না। এব্যাপারে আমার সাথে কোনো আলোচনা করেনি কেউ। সংগঠনের বৃহত্তর স্বার্থ না দেখে তারা ইচ্ছেমত কমিটি করেছে। সেজন্য সবাই অভিযোগ তুলছে। ত্যাগী ও যোগ্য লোক দিয়ে কমিটি করা হলে কেউ প্রশ্ন তুলতো না।
ডিসি/এসআইকে/সিসি