চট্টগ্রামে গোপাল কৃষ্ণ মুহুরী হত্যা : তিন আসামির মৃত্যুদণ্ড কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
চট্টগ্রামের নাজিরহাট কলেজের অধ্যক্ষ গোপাল কৃষ্ণ মুহুরী হত্যা মামলায় ৩ জনের মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়েছে আপীল বিভাগ।  মৃত্যুদণ্ড কমিয়ে তাদেরকে আমৃত্যু কারাভোগের আদেশ দেয়া হয়েছে।  অর্থাৎ স্বাভাবিক মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত এই তিন আসামিকে কারাগারেই থাকতে হবে।
মঙ্গলবার বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ভার্চুয়াল আপীল বেঞ্চ এ প্রদান করেছে।
এই তিন আসামি হলেন তসলিম উদ্দীন ওরফে মন্টু, আজম ও আলমগীর কবির ওরফে বাইট্টা আলমগীর।  হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে করা আপীলের ওপর শুনানি শেষে এ রায় দেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত।  আসামি আলমগীর কবির ওরফে বাইট্টা আলমগীরের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন, তসলিম উদ্দীন ওরফে মন্টু ও আজমের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন হেলাল উদ্দিন মোল্লা।  রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশগুপ্ত।
আপীল বিভাগের আদেশের পর ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশগুপ্ত বলেন, ‘২০০১ সালে নাজিরহাট ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ গোপাল কৃষ্ণ মুহুরীকে নিজ বাসভবনে গুলি করে হত্যা করে আসামিরা।  এ মামলায় বিচারিক আদালত চার জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং অপর চার জন আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করে। এরপর হাইকোর্ট ডেথ রেফারেন্স শুনানি নিয়ে মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত চার আসামির মধ্যে একজন মারা যাওয়ায় বাকি তিনজনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছিল। ওই তিন আসামি আপিল দায়ের করলে আপীল বিভাগ মঙ্গলবার (০৬ অক্টোবর) তিনজনের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন সাজা দেন।
আদালত বলেছেন, এই যাবজ্জীবন মানে আমৃত্যু কারাদণ্ড।  এই ঘটনায় গোপাল মুহুরীর স্ত্রী রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের তৎকালীন অডিট কর্মকর্তা উমা মুহুরী বাদি হয়ে নগরীর কোতোয়ালী থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।  ২০০৩ সালের জানুয়ারি মাসে মামলাটি নিয়মিত আদালত থেকে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হলে বিচারে গতি আসে।  ২০০৩ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল থেকে চার আসামির মৃত্যুদণ্ডের আদেশ প্রদান করে।  একই রায়ে আরও চারজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়।  চারজন খালাস পান।

রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত চার আসামি হলেন শিবির ক্যাডার হিসেবে পরিচিত তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী নাছির ওরফে গিট্টু নাছির, আজম, আলমগীর কবির ওরফে বাইট্ট্যা আলমগীর ও তছলিমউদ্দিন মন্টু। যাবজ্জীবন কারাদ- দেওয়া হয় সাইফুল ইসলাম ওরফে সাইফুল, মো. শাহজাহান, মহিউদ্দিন ওরফে মহিন উদ্দিন (পলাতক) ও হাবিব খানকে (পলাতক)।  খালাস পান নাজিরহাট কলেজের অধ্যাপক মো. ইদ্রিছ মিয়া চৌধুরী, অধ্যাপক মো. জহুরুল হক, অধ্যাপক তফাজ্জল আহম্মদ ও দুর্ধর্ষ শিবির ক্যাডার নাসির।
২০০৪ সালের জুনে নিজ বাসায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন সাইফুল।  ২০০৫ সালের মার্চে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি নাছির ওরফে গিট্টু নাছির র‌্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়।  ২০০৬ সালের ১৭, ১৮ ও ১৯ জুলাই হাইকোর্ট ডেথ রেফারেন্স ও আপীলের শুনানির ওপর রায় দেন।  এতে আজম, আলমগীর কবির ও তছলিমউদ্দিন মন্টুর মৃত্যুদ- বহাল থাকে।  বিচারিক আদালত থেকে খালাস চারজনের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপীল করেছিলেন বাদি উমা মুহুরী।  সেই আপীল খারিজ হয়েছিল।  ২০০৮ সালে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত আসামি আলমগীর আপীল বিভাগে আপীল দায়ের করেন।  অপর দুজন তসলিম উদ্দিন মন্টু ও আজম ২০০৬ সালে জেল পিটিশন করেন।  আপীল বিভাগ এসব আপীল খারিজ করে দিয়েছেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের সময় ২০০১ সালের ১৬ নভেম্বর সকালে চট্টগ্রাম নগরীর জামাল খান এলাকায় নাজিরহাট কলেজের অধ্যক্ষ গোপাল মুহুরীর বাসায় ঢুকে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা তাকে নৃশংসভাবে গুলি করে হত্যা করে।  সর্বজনশ্রদ্ধেয় এই শিক্ষককে হত্যার খবর ছড়িয়ে পড়লে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরাসহ সর্বস্তরের মানুষ রাস্তায় নেমে আসে।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ