চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলায় এবার বাদ পড়ছেন বিদ্রোহী ও বহিস্কৃতরা

দক্ষিণ চট্টগ্রাম প্রতিনিধি, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলায় ইউপি নির্বাচনের হাওয়া বইতে শুরু করেছে। আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীদের তালিকা প্রস্তুত শুরু করছে শনিবার থেকে। মনোনয়নে এবার কঠোর অবস্থানের কারণে স্থান পাবে না হাইব্রিড ও দল এবং এলাকায় অগ্রহণযোগ্য ব্যক্তিরা। কেন্দ্রের নির্দেশনা মোতাবেক ইউপি নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশিদের তালিকা প্রণয়নের জন্য কাজ শুরু করেছেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ। তারা প্রতিটি উপজেলায় বর্ধিতসভার মাধ্যমে তৃণমূল থেকে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশিদের নাম সংগ্রহ করবেন। এরপর সেখান থেকে যাচাই-বাছাই করে জেলা আওয়ামী লীগ কেন্দ্রে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম প্রেরণ করবেন।
জানা গেছে, গত ইউপি নির্বাচনে বহিস্কৃত ৪৯ বিদ্রোহী ও অনুপ্রবেশকারীরা জেলা কমিটির সুপারিশের তালিকায় স্থান পাবে না। বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান জানান, জেলা থেকে প্রস্তাবিতদের মধ্য থেকে কেন্দ্র নির্ধারণ করে দেবেন কে পাচ্ছেন দলীয় মনোনয়ন। আগামি ১৬ অক্টোবর শনিবার থেকে ধারাবাহিকভাবে আট উপজেলায় ৮ দিন চলবে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের নিয়ে বর্ধিতসভা। সেখান থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশিদের নাম নেয়া হবে।
জানা গেছে, গত ইউপি নির্বাচনে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার আট উপজেলায় আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীদের বিরুদ্ধে নির্বাচন করেছিলেন ৪৯ জন নেতা ও সমর্থক। ওই সময় জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তাদের বহিস্কার করে পত্রপত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজন চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হন। গত ইউপি নির্বাচনের সময় চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার মধ্যে ৮টি উপজেলায় আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী থাকার পরও বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে যারা নির্বাচন করেছিলেন তারা হলেন কর্ণফুলী উপজেলার শিকলবাহা ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম, বড়উঠান ইউনিয়নে আবদুল মন্নান খাঁন ও মোহাম্মদ শাহজাহান, জুলধা ইউনিয়ন থেকে বর্তমান চেয়ারম্যান রফিক আহমদ, চরলক্ষ্যা ইউনিয়ন থেকে নাজিম উদ্দিন হায়দার। পটিয়া উপজেলার ধলঘাট ইউনিয়নে ছালামত উল্লাহ মল্ল, হাইদগাঁও ইউনিয়নে বিএম জসিম উদ্দিন, খরনা ইউনিয়নে জেলা আওয়ামী লীগের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক একেএম আবদুল মতিন চৌধুরী। আনোয়ারা উপজেলা থেকে সদর ইউনিয়নের মোহাম্মদ সৈয়দ, দিদারুল আলম টিপু ও সুশিল ধর, বারখাইন ইউনিয়নে এস এম আলমগীর চৌধুরী ও আবদুল গফ্ফার, বৈরাগ ইউনিয়নে মোহাম্মদ সোলাইমান, বটতলী ইউনিয়নে নিজাম উদ্দিন মাসুদ, বুরুমছাড়া ইউনিয়নে খোরশেদ আলম, চাতরী ইউনিয়নে সামশুদ্দিন আহমদ, জুঁইদন্ডী ইউনিয়নে মোহাম্মদ ইদ্রিস। চন্দনাইশ উপজেলার বরমা ইউনিয়নে জাবেদ মোহাম্মদ গউস মিল্টন, বরকল ইউনিয়ন থেকে শওকত হোসেন ফিরোজ, ধোঁপাছড়ি ইউনিয়নে আবদুস ছালাম। বোয়ালখালী উপজেলার চরণদ্বীপ ইউনিয়নে মোহাম্মদ ইউনুচ, আমুচিয়া ইউনিয়নে অজিত বিশ্বাস।
সাতকানিয়া উপজেলার চরতি ইউনিয়ন থেকে মমতাজ উদ্দিন আহমদ, কাঞ্চনা ইউনিয়নে মিজানুর রহমান মারুফ, আমিলাইশ ইউনিয়নে এইচ এম হানিফ ও হারুনুর রশিদ, মাদার্সা ইউনিয়নে রিদুয়ানুল হক, বাজালিয়া ইউনিয়নে নুরুল আমিন সিকদার, পুরানগড় ইউনিয়নে রাশেদ হোসেন চৌধুরী, সাতকানিয়া ইউনিয়নে নেজাম উদ্দিন, কেওচিয়া ইউনিয়নে আবু ছালেহ, মনির আহমদ ও মাহবুবুর রহমান, নলুয়া ইউনিয়নে শাহাজাহান মোহাম্মদ ইউনুচ। বাঁশখালী উপজেলার পুকুরিয়া ইউনিয়নে মোহাম্মদ আখতার হোসাইন, সাধনপুর ইউনিয়নে মোহাম্মদ আহসান উল্লাহ চৌধুরী, খানখানাবাদ ইউনিয়নে জাহেদ আকবর জেবু, বাহারছাড়া ইউনিয়নে রেজাউল করিম ইউনুচ ও বখতেয়ার উদ্দিন চৌধুরী করিম, বেলছড়ি ইউনিয়নে নাজিম উদ্দিন চৌধুরী ও রাশেদ আলী, কাথরিয়া ইউনিয়নে জয়নাল আবেদীন চৌধুরী জয়নাল, শৈলকূপ ইউনিয়নে শফিকুল ইসলাম মেম্বার, গন্ডামারা ইউনিয়নে আবদুল মালেক মানিক, পুঁইছড়ি ইউনিয়নে মোহাম্মদ কফিল উদ্দিন, ছনুয়া ইউনিয়নে মোহাম্মদ হারুরুর রশিদ, লোহাগড়া উপজেলার পদুয়া ইউনিয়নে অ্যাড. হুমায়ুন কবির বাদশা ও জহির উদ্দিন। সে সময় নির্বাচনের রেশ শেষ হওয়ার পর বহিস্কৃতদের অনেকে পরবর্তীতে উপজেলা পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত হন। বহিস্কারের পর দলে এদের পদোন্নতি দেখে ক্ষুব্ধ হন দলের তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা।
দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রদীপ দাশ বলেন, গত বার যারা বিদ্রোহী হয়েছিলেন তাদের নাম এবার কেন্দ্রে কোনোভাবেই প্রেরণ করা যাবে না। তার অবস্থান কঠোর থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, কেউ যদি এদের তথ্য গোপন করে নাম কেন্দ্রে পাঠায় তা হবে সংগঠন বিরোধী কাজ। বিষয়টি কোনো না কোনোভাবে কেন্দ্রের কাছে পৌঁছাবে এবং যারা বিদ্রোহীদের নাম পাঠাবে তাদের ক্ষতি হবে। বহিস্কৃতরা দলে শক্ত অবস্থান ও পদোন্নতি কেন পেল- প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোনো কোনো ক্ষেত্রে স্থানীয় এমপি বা কোনো কোনো নেতা তাদের দাওয়াত নেন। নানা কারণে তাদের পদোন্নতি দেন। কিন্তু এদের কারণে দলের চরম ক্ষতি হয়। দলের যতই অর্জন থাকুক তাদের কারণে মানুষ ও নেতা-কর্মীদের মন জয় করা যায় না। বিদ্রোহীদের সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করলে দেখা যায় তারা অসামাজিক কাজে জড়িত থাকে, নানা অপরাধের নিয়ন্ত্রণ করে। তাই তারা দলের কথা না ভেবেই নিজের প্রয়োজনে বিদ্রোহী প্রার্থী হয় এবং জনপ্রতিনিধি হওয়ার চেষ্টা করে। আমি এদের ঘৃণা করি। কেন্দ্রে কোনোভাবে এদের কারো নাম গেলে আমি শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করবো তাদের বিষয়টি সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে দিতে।
পটিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম সামশুজ্জমান চৌধুরী বলেন, প্রাথমিকভাবে দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম সংগ্রহ করা হচ্ছে। ঢাকায় চূড়ান্ত নাম পাঠাবে জেলা আওয়ামী লীগ।
এ বিষয়ে পটিয়া আসনের এমপি ও জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরী পটিয়ায় গ্রহণযোগ্যদের নাম তৃণমূল থেকে উঠে আসবে আশাব্যক্ত করে বলেন, জনগণের সাথে যাদের সম্পর্ক নেই এবং যারা স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীর বিরোধিতা করেছিল তাদের নাম প্রস্তাব দেবে না তৃণমূল। তিনি আশা প্রকাশ করেন- এসব মনোনয়ন প্রত্যাশিরা শেষ পর্যন্ত দলীয় মনোনয়ন পাবে না। তৃণমূলের নেতা-কর্মীরাও যাতে তাদের নাম প্রস্তাব না করেন সে আহবান জানান তিনি।
দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, প্রত্যেক উপজেলায় তৃণমূল নেতা-কর্মীদের নিয়ে সভা আহবান করা হয়েছে। তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা মূল্যয়িত হবে। গত বারের নির্বাচনের সময় বিদ্রোহ করা প্রার্থীদের বিষয়ে কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুসরণ করা হবে। পটিয়া উপজেলায় ১৬ তারিখ তৃণমূলের বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে দক্ষিণ জেলার ৮ উপজেলায় ধারাবাহিক সভা।
দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান জানান, পটিয়া উপজেলায় ১৬ তারিখে বর্ধিত সভা শুরু হয়ে ধারাবাহিকভাবে ৮ দিন চলবে। কেন্দ্রে কখন এসব নাম পাঠাতে হবে সে সিডিউল না দিলেও আমরা আগে থেকে প্রস্তুতি সেরে নিচ্ছি। যাতে তফশিল ঘোষণার পরপরই এসব নাম কেন্দ্রে পাঠাতে পারি। উপজেলা পর্যায়ে বর্ধিত সভায় গত নির্বাচনে বহিস্কৃত এবং অনুপবেশকারীদের নাম প্রস্তাব আকারে দেয়া হলেও জেলা থেকে তাদের নাম বাদ দেয়া হবে। অনুপ্রবেশকারী ও বহিস্কৃতদের নাম বাদ দিয়ে কেন্দ্রে নাম প্রেরণ করা হবে দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের। দলের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে যাকে মনোনয়ন দেন তিনিই হবেন দলের প্রার্থী।

ডিসি/এসআইকে/এসইউ