পটিয়ায় নির্বাচন করা বিদ্রোহীদের স্থায়ীভাবে বহিস্কার

দক্ষিণ চট্টগ্রাম প্রতিনিধি, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
দক্ষিণ চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার ইউপিসমূহের নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী যারা দলের বিরুদ্ধে গিয়ে কাজ করেছে তাদের আ’লীগ থেকে স্থায়ীভাবে বহিস্কার করেছে উপজেলা আওয়ামী লীগ।  আ’লীগ নেতা ও হাইদগাঁও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি জিতেন কান্তি গুহকে কাপড় খুলে গাছে বেঁধে মারধরের ঘটনার পর কেন্দ্রীয় নির্দেশে এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে সাংবাদিক সম্মেলনে জানানো হয়েছে।
শনিবার (৩০ এপ্রিল) দুপুরে পটিয়ার একটি কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়- কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নির্দেশে হাইদগাঁও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিএম জসিমসহ গত নির্বাচনে বহিস্কৃতদেরও বহিস্কারাদেশ স্থায়ী করা হয়েছে।  দলীয় কঠোর নির্দেশনার পর এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
বহিস্কৃতরা আর কখনো দলের পরিচয় দিতে পারবেন না, দলীয় কোনো সভা-সমাবেশে যোগ দিতে পারবেন না এবং তাদের আমন্ত্রণ জানানো হবে না বলে নিশ্চিত করেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম সামশুজ্জমান চৌধুরী।
বহিস্কৃতরা হলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নুর রশিদ চৌধুরী এজাজ, কুসুমপুরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাকারিয়া ডালিম, কোলাগাঁও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাহাবুল হক চৌধুরী, জঙ্গলখাইন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাহাদাৎ হোসেন সবুজ ও হাইদগাঁও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিএম জসিম।
এদিকে আওয়ামী লীগ নেতাকে বেঁধে মারধরের অভিযোগে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান বিএম জসিম (৫৫) ও তার ছেলে মুসফিক উদ্দিন ওয়াসি (২৫) কে গ্রেফতার করা হয়েছে।  শনিবার ভোরে তার বাড়ি থেকে পালানোর সময় পুলিশ পিতা ও পুত্রকে গ্রেফতার করে।  পুলিশের অভিযানের সময় ঘর থেকে পালানোর চেষ্টা করেন জসিম ও তারপুত্র।  ওই সময় তিনি পায়ে আঘাত পেয়েছেন বলেও স্থানীয়রা জানান।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার বিকেল ৩ টায় উপজেলার পূর্ব হাইদগাঁও গাউছিয়া কমিউনিটি সেন্টারের সামনে ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিএম জসিমের নেতৃত্বে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি জিতেন কান্তি গুহকে ধরে কাপড় খুলে নেয়ার পর গাছের সাথে বেঁধে মারধর করে মাথা ফাটিয়ে দেয়া হয়।  গাছে বেঁধে মারধরের ছবি মুহূর্তেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়।  পন্ড হয়ে যায় ইফতার মাহ্ফিল।  ওই ঘটনায় তার ভাই তাপস কান্তি গুহ বাদি হয়ে পটিয়া থানায় একটি মামলা করেন।  সেই মামলায় ৭ জনকে আসামি করা হয়।
পটিয়া থানার ওসি রেজাউল করিম মজুমদার জানান, আওয়ামী লীগ নেতাকে মারধরের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় চেয়ারম্যান ও তার পুত্রকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।  তাদের আদালতে নেয়ার প্রস্তুতি চলছে।  ঘটনায় জড়িত অন্য আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চলমান রয়েছে।
এদিকে স্থানীয় একটি কমিউনিটি সেন্টারে উপজেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিএম জসিমসহ দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়।  সেই সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম সামশুজ্জমান বলেন, এখন থেকে বহিস্কৃত নুর রশিদ চৌধুরী এজাজ বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হতে পারেননি।  তাই তিনি উপজেলা পরিষদের সাথে সংযুক্ত থেকে সরকারি কোনো অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ারও সুযোগ নেই।  এখন থেকে বহিস্কৃত কোনো ব্যক্তিকে উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সরকারি কোনো প্রোগ্রামে অংশ নিতে এবং দলের পরিচয় ব্যবহার করতে দেয়া হবে না বলে জানান। বিদ্রোহী যারা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন তাদের সাথে উপজেলা পরিষদ ও চেয়ারম্যানের সম্পর্ক থাকতে পারে, দল কিংবা দলীয় কর্মসূচি বা নেতার সাথে নয়।
সভায় দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রদীপ দাশ বলেন, বিদ্রোহীরা এখন গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।  বহিস্কৃতরাই একের পর এক বিতর্কিত ঘটনার জন্ম দিয়ে যাচ্ছেন।  তাদেরকে উপজেলা আওয়ামী লীগের কোনো নেতা যাতে সহযোগিতা না করেন।  কোনো রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে যাতে তারা অংশ নিতে না পারেন সে দিকে নজর রাখার পরামর্শ দেন।  তিনি বলেন, বিদ্রোহীরা কখনোই দলের জন্য শুভকর নয়।  আমরা তাদের প্রশ্রয় দেয়া মানে জেনেশুনে বিষপান করার মত।  এদের আচরণে আমরা বিব্রত।
হাইদগাঁও ইউনিয়নে জিতেন কান্তির উপর হামলার ঘটনা সাম্প্রদায়িক নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন- এটি একটি রাজনৈতিক ঘটনা।  বহিস্কৃতদের সাথে আওয়ামী লীগের সম্প্রীতি হতে পারে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, এদের সাথে সম্প্রীতি হলে আওয়ামী লীগ, বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার নৌকা ডুবে যাবে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন দক্ষিণ জেলা আ’লীগের সহ-সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক প্রদীপ দাশ, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক তিমির বরণ চৌধুরী, সদস্য বিজন চক্রবর্ত্তী, জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান দেবব্রত দাশ দেবু, পটিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম শামসুজ্জামান চৌধুরী, সাবেক সভাপতি রাশেদ মনোয়ার, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক হারুনুর রশিদ, আবদুল খালেক চেয়ারম্যান, সহ-সভাপতি রতন চক্রবর্ত্তী, যুগ্ম সম্পাদক আলমগীর খালেদ, চেয়ারম্যান মুহাম্মদ ছৈয়দ, ইঞ্জিনিয়ার ছৈয়দ মোরশেদ, হাইদগাঁও ইউনিয়ন আ’লীগের আহবায়ক মাহফুজুল হক হাফেজ, যুগ্ম আহবায়ক শহীদুল ইসলাম জুলু, ফয়সাল আহমেদ, টিটু দেব মেম্বার প্রমুখ।

ডিসি/এসআইকে/এসইউ