চট্টগ্রামে শিক্ষা পরিকল্পনা বিষয়ক সংলাপ অনুষ্ঠিত

নগর প্রতিবেদক, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
চট্টগ্রাম নগরে ‘সমন্বিত শিক্ষা পরিকল্পনা’ বিষয়ক বিভাগীয় সংলাপে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এস এম জাকারিয়া বলেছেন, শিক্ষা পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সবার সহযোগিতা যেমন প্রয়োজন, তেমনি মানবীয় মূল্যবোধও থাকতে হবে।  আর বাস্তবায়ন সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বপূর্ণ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।  পাশাপাশি শিক্ষার্থী, শিক্ষক, এসএমসি, গবেষক, সমাজকর্মী এবং দেশের সেবায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে নিজ নিজ অবস্থান থেকে ভূমিকা রাখতে হবে।  তাহলেই সরকারের নেয়া জাতীয় সমন্বিত শিক্ষা পরিকল্পনা কর্মসূচি সফলতার মুখ দেখবে।
তিনি মঙ্গলবার (১৬ মার্চ) সকালে অনুষ্ঠিত সবার জন্য শিক্ষার লক্ষ্য অর্জনে সরকার কর্তৃক প্রণীত ‘এডুকেশন সেক্টর প্ল্যান’ এর উল্লেখযোগ্য অংশ এবং ‘এসডিজি ফোর স্ট্রেটেজিক ফ্রেমওয়ার্ক অর বাংলাদেশ’ সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সামনে উপস্থাপন করা, স্থানীয় পর্যায়ে পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অংশীজনদের মতামত-সুপারিশ সংগ্রহ করা এবং স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে এ ধরনের অ্যাডভোকেসির বিষয়সমূহ চিহ্নিত করার উদ্দেশ্যে আয়োজিত বিভাগীয় পর্যায়ের সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
নগরের থিয়েটার ইনস্টিটিউটস্থ গ্যালারি হলে এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।  সংলাপে সভাপতিত্ব করেন যুগান্তর সমাজ উন্নয়ন সংস্থা (জেএসইউএস) এর নির্বাহী পরিচালক ইয়াসমীন পারভীন।  সংস্থাটির কর্মসূচি সমন্বয়কারী মোহাম্মদ ওবায়দুর রহমানের সঞ্চালনায় শিক্ষা সংলাপের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংস্থার ব্যবস্থাপনা উপদেষ্টা ও পরিচালক সাঈদুল আরেফীন।  এডুকেশন সেক্টর প্ল্যান এর উল্লেখযোগ্য অংশ এবং এসডিজি ফোর স্ট্রেটেজিক ফ্রেমওয়ার্ক ফর বাংলাদেশ’র সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করেন গণসাক্ষরতা অভিযান এর উপ-পরিচালক কে এম এনামুল হক।
উল্লেখ্য যে, সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার ২০২০ সালে প্রথমবারের মতো একটি সমন্বিত শিক্ষা পরিকল্পনা (Education Sector Plan) তৈরি শেষে তা অনুমোদক করেছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়-এর সার্বিক তত্ত্বাবধানে ইউনেস্কো ঢাকা অফিস ও ইএলসিজি-এর সহযোগিতায় Education Sector Plan প্রণয়ন করা হয়। সমন্বিত শিক্ষা পরিকল্পনায় যে তিনটি বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে তা হলো সমতার ভিত্তিতে শিক্ষায় অভিগম্যতা (Access & Equity) নিশ্চিত করা, শিক্ষার প্রাসঙ্গিক ও মান (Quality & Relevance) নিশ্চিত করা এবং সুশাসন ও ব্যবস্থাপনা (Governance & Management) উন্নয়ন করা।  এই পরিকল্পনায় প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা দুই বছর মেয়াদি করা, শিক্ষার মানোন্নয়নে শিক্ষকের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং শিক্ষা ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ বৃদ্ধিসহ শিক্ষায় তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।  এর ফলে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য-৪ অর্জনে সহায়ক হওয়ার আশা করছে সরকার।  অর্থাৎ সবার জন্য মানসম্মত শিক্ষা অর্জনে বাংলাদেশ এক ধাপ এগিয়ে যাবে।  তবে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার উন্নয়নে বিশেষ করে কমিউনিটি পর্যায়ে জীবনব্যাপী শিক্ষার সম্প্রসারণের জন্য আরও উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।
চট্টগ্রামে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষা ও নারীদের অধিকার ও ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে নানামুখী সমাজ ও মানব উন্নয়নমূলক কাজ করে যাওয়া যুগান্তর সমাজ উন্নয়ন সংস্থা (জেএসইউএস) এবং জাতীয় পর্যায়ে মানসম্মত শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রমে শৃঙ্খলা আনয়ন অ্যাডভোকেসীমূলক প্রতিষ্ঠান গণসাক্ষরতা অভিযানের যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত সংলাপে উপস্থিত ছিলেন ও বক্তব্য রাখেন চসিক কাউন্সিলর চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী ও মোহাম্মদ শহীদুল আলম, জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. শহীদুল ইসলাম, জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপপরিচালক মাধবী বড়–য়া, জেএসইউএস এর সভাপতি মোহাম্মদ রফিকুল আলম, শিক্ষাবিদ শামসুদ্দিন শিশির, বাংলাদেশ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি’র সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের পারফর্মিং আর্টস বিভাগের কো-অর্ডিনেটর অধ্যাপক মাসুদুর রহমান, উন্নয়ন সংস্থা সংশপ্তকের প্রধান নির্বাহী লিটন চৌধুরী, সিনিয়র সাংবাদিক বিপুল বড়ুয়া, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের কোষাধ্যক্ষ কাশেম শাহ, দৈনিক চট্টগ্রাম এর প্রধান প্রতিবেদক মো. শফিকুল ইসলাম খান, সালেহ জহুর সিটি কর্পোরেশান উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক টিংকু ভৌমিক, এসডিজি ইয়ুথ ফোরামের সভাপতি নোমান উল্লাহ বাহার, ইউনিসেফের শিক্ষা কর্মকর্তা আফরোজা ইয়াসমিন, জেলা উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো প্রতিনিধি মর্জিনা বেগম, ঢাকা আহসানিয়া মিশনের জেলা কার্যক্রম ব্যবস্থাপক এসএম কামরুল ইসলাম, গণসাক্ষরতা অভিযানের উপ-কার্যক্রম ব্যবস্থাপক মো. আব্দুর রউফ, কার্যক্রম কর্মকর্তা সামছুন নাহার বেগম।  সংলাপে চট্টগ্রামের সাংবাদিক, গবেষক, স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যবৃন্দ, শিক্ষক এবং সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

ডিসি/এসআইকে/আইএস