নানান বিড়ম্বনায় চবির প্রীতিলতা হলের ছাত্রীরা

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) প্রীতিলতা হলে সুপেয় পানির সংকট দেখা দিয়েছে।  এ নিয়ে হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা ফেসবুক গ্রুপ ও নিজ ওয়লে হ্যাশট্যাগ পোস্ট দিয়ে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন।  শিক্ষার্থীদের দাবি, ওই হলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা হাজারেরও বেশি।  তারপরও সেখানে পানির ফিল্টার আছে মাত্র তিনটি।  আর ওই ফিল্টারগুলো থেকে ফোঁটায় ফোঁটায় পানি পড়ে।  ফলে এই গরম আবহাওয়ার মাঝে তৃষ্ণার্ত সময় কাটছে তাদের।
মুশফিকা তনু নামে এক শিক্ষার্থী ফেসবুকের কয়েকটি গ্রুপ ও নিজ ওয়ালে লিখেন, ‘আমরা আর পানির সমাধান চাই না।  আমরা এখন চাই বিচার।  এখন ২০২২ সাল।  এই আধুনিক যুগে বসে আমরা দিনের পর দিন খাওয়ার পানি পাচ্ছি না প্রীতিলতা হলে।  বাধ্য হয়ে টেপের লাল পানি খাচ্ছি’।
তনু জানান, তৃষ্ণা নিবারণের জন্য তারা কখনও শেখ হাসিনা হল থেকে আবার কখনও টিউশনি করতে গিয়ে কোনো বাসা থেকে বোতলে করে পানি নিয়ে আসেন।  তিনি আরও লিখেন, ‘রাতে ঘুমানোর সময় বিশুদ্ধ পানি পেলাম না।  সকালে ক্লাসে যাওয়ার আগে পানি পেলাম না।  এখন ক্লাস থেকে এসেও দেখি ফিল্টারে প্রতি ২ সেকেন্ডে ১ ফোঁটা পানি পড়ছে।  ম্যামকে কল দিয়েও পাচ্ছি না’।
ঘটনার সত্যতা জানতে প্রীতিলতা হলের একাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে বলে বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত হওয়া গেছে।
প্রীতিলতা হলের আবাসিক ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী রাহিমা আক্তার প্রিয়া বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমরা ফিল্টারের পানি পাচ্ছি না।  ফিল্টার নষ্ট হয়, ঠিক করে।  কী যে ঠিক করে- ২ দিন পর আবার নষ্ট! স্টুডেন্ট বেশি, তাই প্রতি ব্লকে অন্তত ৩টি ফিল্টার দরকার।  সেখানে পুরো হলে ফিল্টার মাত্র ৩টি।  এগুলোর ফ্লো খুব কম।  আর টেপের পানি খাওয়ার অনুপযোগী।  গোসলের পানিগুলো আয়রন যুক্ত হলুদ টাইপের।  ওনারা নাকি ট্যাংক পরিষ্কার করে।  কি যে করে আল্লাই ভালো জানেন’।
এ ছাড়া ক্যান্টিনের খাবার নিয়েও অভিযোগ করেন প্রিয়া।  প্রভোস্টকে জানিয়েও এসবের কোনো সমাধান পাওয়া যায়নি বলে দাবি করেছেন তিনি।
সুজানা মালিহা নামের হলের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘মারাত্মক পানির সমস্যায় আছি আমরা।  ফিল্টার থেকে যদি ঠিকঠাক পানি পড়তো, তাহলে এত সমস্যা হতো না।  কিন্তু ফিল্টার থেকে পানি পড়ে ফোঁটায় ফোঁটায়।  এক লিটার বোতল ভরতে কম করে হলেও পৌনে এক ঘণ্টা সময় লাগে’।
মালিহা জানান, এ অবস্থায় বাধ্য হয়ে অনেকেই লাইনের পানি পান করছেন।  এই পানি পান করে অনেকের অসুখ হচ্ছে।  অথচ ‘বাজেট নেই’ বলে প্রতিবারটি বিষয়টিকে অবজ্ঞা করছে কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে প্রীতিলতা হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক পারভীন সুলতানা বলেন, ‘আমার হলে পানির ফ্লো কম।  আর ৫৩১ জন ছাত্রী থাকার কথা থাকলেও এখানে ১১০০ জন থাকে’।
ছাত্রীদের প্রতি পাল্টা অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘ফিল্টারে পানি আসতেও যেমন সময় লাগে, ফিল্টারেশন হতেও সময় লাগে।  সারাদিন ধরে এখানে পানি চলমান আছেই।  এই ফিল্টারেশনের সময়টাও পাচ্ছে না।  ওরা (শিক্ষার্থী) সারাদিন এটা প্রেস করে থাকে।  পানি ফিল্টার হবার আগেই তারা পানি নিতেই থাকে।  আগে দুটো ছিল, নতুন একটা যোগ করেছি।  ওরা যদি বলে এটা দিয়ে হচ্ছে না আমরা অন্য উপায় দেখবো’।  তিনি আরও বলেন, ‘আজকেও (রবিবার) মিস্ত্রি এসে ফিল্টারগুলো চেক করে গেছে।  এর এক মিনিট পরেই সবাই এসে পানি নিতে শুরু করেছে।  তাহলে তো এটা অনেক সময় লাগবেই।  একজনের পর আরেকজন নিতে থাকলে ফিল্টারশনে সময় লাগবে’।

ডিসি/এসআইকে/এনএনপি