অর্ধশত গানের রচয়িতা ও সংগীতশিল্পী শফি সরকারের উপাখ্যান

মো. শফিকুল ইসলাম প্রকাশ শফি সরকার।

নজরুল ইসলাম তোফা >>>
এই পৃথিবীতে যুগে যুগেই কিছু মানুষের সৃষ্টি হয়েছে।  তাদের আছে কোটি কোটি টাকা, ভোগ-বিলাস, ধন-সম্পদ, বাড়ি-গাড়ি তারা নিজ জীবন নিয়েই যেন স্বপ্নে বিভোর।  কিন্তু এমন কিছু বিকল্প চিন্তা চেতনার মানুষের সন্ধান পাওয়া যায়, তাঁদের জীবনটার ন্যূনতম চাহিদা নেই!  নেই কোনো কিছুর মোহ! নেই মনের ইচ্ছা পূরণের উচ্চাকাঙ্খা।  তাঁদের জীবনকে সঠিক পথে পরিচালনার উদ্দেশ্য অতীব ক্ষীন। অর্থের কোনো লোভ না থাকলেও প্রয়োজন শুধু আছে মনের তৃপ্তি মিটানোর ইচ্ছা।  সুতরাং বলা যায়- এই সরল, প্রতিভাবান, কোমল মনের মানুষটি শুধু স্বপ্ন দেখেন গানের জগৎ নিয়ে।  এই গানের জগতের বহুগুনের অধিকারী মানুষটি, সবাইকে অবাক করে দেওয়ার মতো প্রতিভা রেখে চলেছেন।  তাঁর স্বরচিত গানের নেশাটা নিত্য দিনের জীবন সঙ্গী।  নামটি তাঁর মো. শফিকুল ইসলাম ওরফে শফি সরকার।
ধর্ম ও বিজ্ঞান নিয়ে তার সঙ্গে বিস্তর কথা বার্তা হয়েছে।  ‘ধর্মের সাথা বিজ্ঞান’ এর সংঘর্ষ না কি মানুষের যথেষ্ঠ সন্ধিহান রয়েছে।  কোনো কোনো ধর্মের সাথেই রক্তারক্তির ঘটনাও আছে ইতিহাসের পাতায়।  তবে ‘পবিত্র কুরআন’ থেকে উৎসারিত ধর্ম, ইসলামের সাথে প্রকৃত বিজ্ঞানের বিরোধ ছিলনা অতীতে, বর্তমানেও কোনো বিবোধ নেই এবং ভবিষ্যতেও হবে না- তা তিনি কথা প্রসঙ্গে বললেন।  ধর্ম ও বিজ্ঞান নিয়ে প্রাসঙ্গিক কিছু কথার প্রতিফলনেই তাৎক্ষণিক লিখেন স্বরচিত একটি গান।  আর তা নিয়েই নজরুল ইসলাম তোফা লিখলেন তাঁর ‘জীবন কাহিনী’।  কি যে অবাক- এই মানুষ! তাঁর প্রতিভার তুলনা হয় না।  প্রাকৃতিক জগতটাকে জানার আগ্রহ কতো যে প্রবল তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।  এটা নাকি তাঁর বিনোদনের মাধ্যম।  সঠিজভাবে ‘বিজ্ঞানের জ্ঞান এবং কর্মের মাঝে’ আছে যে সব জ্ঞান তাকে কাজে লাগিয়েই গান লিখেন।  সুতরাং- উক্ত বিষয়ের ওপর কোনো ব্যক্তির যথাযথ জ্ঞান যদি না থাকে তাহলে নাকি বিজ্ঞান এবং নিজ কর্ম নিয়ে গান লেখা সম্ভব নয়।  যেকোনো মানুষ যদি বিজ্ঞানের আলোকে এই পন্থায় সংগীত চর্চায় অগ্রসর হন তাহলেই তাঁদের বিদ্যা বুদ্ধির স্বীকৃতি স্বরূপ- বুদ্ধিজীবী, বিজ্ঞানী, প্রগতিশীল, সুশীল বা আরেও অনেক শিহরণ সৃষ্টিকারী লোক ‘গানের ভান্ডারকে সমৃদ্ধি’ করতে পারবেন বলেই তাঁর ধারণা।
তাঁর সৃষ্টি গানের সুর বা শব্দ ফোক গানের আদলে সমৃদ্ধ রয়েছে।  সমাজে তাঁর অবস্থান সম্পর্কেই তিনি বলেন, বিজ্ঞানের মূল কথাই হচ্ছে যুক্তি ও প্রমাণ।  তাই তিনি গানের সুরেই বলেন- চলছে গাড়ি পজেটিভ,.. ব্রেক মারিলে হয়রে নেগেটিভ।  গানের কথায় শফিকুল, বিজ্ঞানীদের বাজাই ঢোল।  আলোক বর্ষ গেছে কতদূর, ঐ দর্শন হইতে দার্শনিক হয়…. যুক্তি বিদ্যা নাম সপ্তম আসমান।  কত দূরে নবীর হাদীস টান,..আলোক বর্ষ কে বুঝে।  বিজ্ঞানীদের খবর দে।  সপ্তম আসমান পরে আছে কে?
তিনি লেখা পড়া ছেড়ে দিয়েই অত্যন্ত ব্যথিত চিত্তে কৃষি কাজে নেমেছিলেন।  বিকেলে তাঁর আড্ডা স্হান ‘কুলার বিল’ থেকে পদ্মা নদীতে প্রবাহিত মধ্যবর্তী একটি শিবো নদীর পাশেই ধানুরা গ্রামে।  সেই শিবো নদীর পাড়ে বসে সূর্য্যাস্তের লগ্নে যেন মো. শফিকুল ইসলাম ওরফে শফি সরকার আকাশ দেখেন এবং বিজ্ঞান জগতের ভাবনায় জাগ্রত হতে থাকেন।  তাঁর অত্যন্ত জনপ্রিয় স্বরচিত গান যেমনটি- মহাশূন্যের রকেট ঘাঁটি দেখতে যাব নাকি…, বিজ্ঞান বেটা কর্মের সাথী হাতে লাগাও তালি…। তোমরা কেন বুঝনা মঙ্গল গ্রহের ঘটনা, কর্ম ছাড়া ধর্ম হবে না…।
তাঁর সৃষ্টিশীল স্বরচিত গানের বাঁকেবাঁকেই সুরের মুর্ছনা ও কথার ভেতর দিয়ে ভুবনকে দেখার যে আনন্দ, মহান আল্লাহ তাআলার নৈকট্য লাভের আসল দিক, মানুষের মাঝে প্রকৃত মানুষ খোঁজার এক আদর্শিক দৃষ্টান্ত কিংবা প্রকৃতির রূপ বদলের নান্দনিক ও ভয়ানক দুর্যোগ এবং দুর্ঘটনার ‘ইতিবাচক বা নেতিবাচক’ দিকটা তুলে ধরার প্রবণতা রয়েছে।  কৃষি কাজ করতে গিয়ে ‘কৃষক-শ্রমিক’সহ সাধারণদের আচার-আচরণ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমেও অত্যন্ত জনপ্রিয় গান লিখা ও তা গেয়ে গ্রামের অগণিত মানুষদের আনন্দ জুগিয়েছন।  তাঁর গানেই যেন কোমল ফোক সুরের ছোঁয়া ‘ধানুরা গ্রাম বাসি’ বা তানোর থানার মানুষকে অবাক করিয়েছেন।  জেনে নেওয়া যাক, এমন মানুষটির পরিপূর্ণ জীবন কাহিনীর আদ্যোপান্ত।
রাজশাহী জেলার তানোর থানায়- ‘ছয় নম্বর কামার গাঁ’ ইউনিয়নের ধানুরা গ্রামে তাঁর জন্ম।  বাবা স্কুল মাস্টার মো. আব্দুর রহমান আর মাতা মোছা. শুরভান বেওয়া একজন পর্দাশীল গৃহিণী নারী।  তাঁর বাবা সারা জীবন শিক্ষার গর্ভে চলেছেন, গ্রামে অজস্র মানুষকে পরিচালিত করেছেন।  আর ছাত্র-ছাত্রীদেরকে ভালো করে পড়িয়েও বৃত্তি ধরিয়েছেন।  ‘সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে’ তাঁর বাবার বহু ভূমিকা থাকে, সেই অনুষ্ঠানগুলো পরিচালনাও করেন।  এ থেকেই মো. শফিকুল ইসলাম শফি সরকার উদ্বুদ্ধ হয়েই গানের জগতে আসেন।  আর বড় ভাই মো. শহিদ মাস্টার, নিজ গ্রামের- ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’ এর শিক্ষক।  একমাত্র বোন মোছা. শামসুন নাহার হেলেনাসহ দুই ভাইকে নিয়ে বাবার এক ‘ছোট সংসার’।  তাদের বাবার ‘আঠার বিঘা’ পৈতৃক সম্পত্তির ভাগ বাটোয়ারার মধ্যে শফি সরকার পান ৭ বিঘা।  বড় ভাই তিরিশ বিঘা সম্পত্তি ক্রয় করলেও তিনি কোনো সম্পত্তি ক্রয় করতে পারেননি।  সহধর্মিণী মোছা. রহিমা বিবি এবং এক পুত্র সন্তান মো. রাজুকে নিয়ে তিনি গ্রামেই থাকতেন।  তার পরে তিনি গ্রামের পরিবেশ থেকে শহরে আসেন; জীবন-জীবিকার উদ্দেশ্যে রাজশাহী।  তবুও স্বরচিত গান রচনায় থেমে থাকেনি তার মেধা।  তিনি চাকুরি পেলেন রংপুরের রহিমদ্দীন ভরসার সিগারেট কোম্পানীতে।  আজ অবধি কর্মরত আছেন সেখানে, থাকেন রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন এলাকায়।  বলা যায় যে, বিভাগীয় এলাকাজুড়েই তাঁর চাকুরি।  সেই কোম্পানীর বিভিন্ন পণ্য বাজারজাতকরণের সৌজন্যে প্রতি মাসে পান প্রায় আট-নয় হাজার টাকা।  অর্থ কষ্টেই চলেন, তাই তো তার চেহারা দেখলেই টের পাওয়া যায়।  সারাদিন কর্ম ব্যস্ততায় কাটান এবং ভর দুপুরে বর্নালীর মোড়ে শরিফ চা স্টলে একটু জিরিয়ে নেন।  আর সেই সুবাধেই তার সঙ্গে সেখানে এই লেখকের সাক্ষাৎ হয়।  তাঁর জীবন কথাসহ স্বরচিত গানের একবৃহৎ ভান্ডার আছে বলে এই স্বাক্ষাতে জানা সম্ভব হয়।  স্টলের টেবিল বাজিয়ে শুনিয়ে দিলেন অনেক গান।  মুগ্ধ হওয়ার মতো একটি গান, ‘ডিপটিউবলে ফসল ফলায় আসমান ছাড়া জমিনে…., কি যুগ আসিলো গুরু মনে পড়ে তোমারে…।  আকাশেতে মেঘভাসেরে এক ফসলেই জ্বালা, বৃষ্টি ছাড়া ভালো ফসল যায় না ঘরে তোলা….।  অনাবৃষ্টি ধুধু খরাই ফসল কত মইরাছে…., কি যুগ আসিলো গুরু মনে পড়ে তোমারে…।  তরুণ প্রজন্মের প্রতিভাবান ব্যক্তি তারুণ্যের প্রতিক স্বল্প ভাষী, মিউজিক ম্যান কিংবা স্বরচিত গানের শিল্পী মো. শফিকুল ইসলাম প্রকাশ শফি সরকার যেন খুব অল্প বয়সে জয় করেছেন অসংখ্য শ্রোতা ও দর্শকের হৃদয়।  বাড়ির পাশে ধানুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সর্বপ্রথমেই স্বরচিত গান গেয়ে দর্শক প্রিয় হয়েছিলেন।  এখন তাঁর বয়স প্রায় ৪১ বছর হবে।  তিনি এখনতো রাজশাহী একটি মনোরম পরিবেশ অর্থৎ উত্তরবঙ্গের ঐতিহ্যবাহী কাঁচাপাকা ৩টি আম নিয়েই চৌরাস্তার মোড়ে নির্মিত একটি ‘আম চত্ত্বর’ ভাস্কর্য্যের পূর্ব দিকে জিয়া পার্কের পার্শ্ববর্তী নওদা পাড়া প্রামে সন্তানসহ সহধর্মণীকে নিয়ে বসবাস করেন।  ভাড়া বাসায় থেকে এক মাত্র ছেলেটিকে লেখা পড়ার খরচ যোগাতে হিমশিম খাচ্ছেন।  বাবার দেয়া সাত বিঘা সম্পত্তিই এখন তাঁর জীবন যাপনের মূল পাথেয়।  নবম শ্রেণিতে লেখাপড়া করা ছেলেকে মোবাইল ফোন কিনে দিতে নারাজ।  ছেলে নাছোড়বান্দা হয়ে বাবার সঙ্গে জেদ করলে তাকে এ যুগের হালচাল কিংবা অতীতে প্রেমের হালচালে স্বরচিত গান গেয়ে শুনান।  তাহলো ‘আধুনিক যুগ আর মডার্ন যুগে…, প্রেম আলাপে জমায় রে…., কে বানাইলো মোবাইল ফোনটা রে….।  আগে আমরা প্রেম করিতাম চিঠি দিয়া হাতে…, যাওয়া-আসা অনেক দূরে…, প্রেমের আলাপ হয় না রে….’।
সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলেই যে তাঁর বেড়ে ওঠা।  বাল্য বয়সে মস্তিষ্কের কোষেকোষে গেঁথে যায় যাত্রা দলের গান এবং যাত্রার বিভিন্ন মিউজিক।  কৈশোরে স্বরচিত গানের সাথে মিউজিক বাজানোর উৎসাহ ও সেসবের পরিচিতি ছিল মনের অনেক উর্ধে।  সব কিছু ছাপিয়ে যাত্রা দলের ‘ডুগী তবলা বাদ্যযন্ত্রকে নিয়েই যেন যাত্রা দল মাতিয়ে তোলে বাজানোর ঢংঙে।  তরুণ বয়সে নিজ গাঁয়ের স্কুলে প্রতি বছর যাত্রা দল আসতো।  মো. শফিকুল ইসলাম ওরফে শফি সরকার শৈশব থেকে যেন যাত্রাদলের প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছেন।  যশোহরের সেই ‘জি, এস অয়েল অপেরা’ যাত্রাদলটি ধানোরা গ্রামে এলে তাঁদের সাথেই মিউজিক বাজিয়েছেন এবং শৈশবে মনেও করেছেন দলটির সঙ্গে চলে গেলে মন্দ হয় না।  কিন্তু বাস্তবতায় বাবার কারণেই সেই সিদ্ধান্তের কবর হয়েছিল।  তবে তাঁর বাড়ির পাশের একজন দক্ষ প্রবীণ ব্যক্তি উস্তাদ তাসির উদ্দীনের সঙ্গে এলাকা থেকে অন্য এলাকায় ঘুরে ঘুরেই যেন মিউজিক বাজিয়েছেন।  অনেক সুন্দর ‘হারমোনিয়াম এবং অর্গান’ বাজাতো উস্তাদ তাসির উদ্দীন।  তাঁর সাথেই শফি’র উঠা বসা ছিল স্কুল জীবনে।  উস্তাদ তাসির উদ্দীনের সঙ্গীতে ও বাদ্যযন্ত্রে পাগল হয়ে তাঁর সঙ্গে দূর-দূরান্তের অনুষ্ঠানে গানের আসরে ছুটে যেতো এবং সেখানে তাঁর নিজের লেখা গানগুলি গেয়ে আসর জমাতো।  ১২ বছর বয়সে স্কুল ফাঁকি দিয়ে ‘উস্তাদ তাসির উদ্দীনের’ সাথেই যাত্রার সম্পূর্ণ অভিজ্ঞতায় ৭/৮ বছর ধরে যাত্রা দলের বাদ্যযন্ত্র বাজিছেন।  গ্রামের সহজ সরল মানুষদের কাছে গান বা মিউজিক বাজানোটা তাঁর নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়েই গিয়েছিল।  কিন্তু তাঁর, সে কংগো বা ডুগী-তবলার সহিত স্বরচিত গানগুলোর আধিক্যটা ছিল দর্শক জনপ্রিয়তার শীর্ষে।  তানোর থানার বিভিন্ন এলাকাতে তাঁর সুর কিংবা গানের জন্যেও বায়না এসে ছিল।  কিন্তু এখন মিউজিক নিয়ে তাঁর কোনোই পরিকল্পনা নেই।  তবে মনের ইচ্ছা পূর্ণ করার বাসনা সর্বদাই জাগ্রত হয়, তা হলো স্বরচিত গান লেখা আর সে গানগুলি নিজ কন্ঠে গাওয়া।  এই বিজ্ঞান চিন্তা চেতনায় মানুষ, অনেক সময় বহু ভাবনায় অগ্রসর হয়েছেন এবং বর্তমানেও সেসব ভাবনা নিয়েই আছেন।  তার প্রতিফলন এমন গানটি। ‌কবিতা পড়ে বিজ্ঞানী হলে সব কিছুতে মিল দেখা…, গানের কথা শফিকুল বানান। আবার বিজ্ঞানীরা কি দেখা……, গানের কথা শফিকুল বানায়।  হাত বোমা তৈয়ারি করে খেলছে কত খেলা…., সজিদ ঘরে বোমা মারে…, নাস্তিক হয়া সারারে দেখ নাস্তিক হয়া সারা…।  কিতাব পড়ে বিজ্ঞান হলে…, বোমা মারা কি দেখায়? গানের কথা শফিকুল বানায়….। মহা শূন্যে বসত বাড়ি…, বিজ্ঞানের তৈয়ারি…, দেশ-বিদেশে আকাশ পথে…, দিচ্ছে তারা পাড়িরে দেখ দিচ্ছে তারা পাড়ি…।  ওরে চাঁদের দেশে মানুষ গেছে.., হাদীসেতে তার প্রমাণ নাই…।  গানের কথা শফিকুল বানায়…।  চাঁদ আছে আর কতদূরে…,বিজ্ঞান তার উপরে…।  ভিন্নগ্রহে জীবের সন্ধান…, বিজ্ঞানীরা বলে রে দেখ বিজ্ঞানীরা বলে।  মঙ্গল গ্রহে মানুষ যাবে…, আর বেশী দিন দেরি নাই…, গানের কথা শফিকুল বানায়..’।
এ ব্যতিক্রমী চিন্তা ধারার মানুষকে আরও পরে ‘স্বরচিত গানের সাথে হারমোনিয়াম বাজিয়ে বহু গান শিখেছেন, তানোর থানার খুবই বড় গানের উস্তাদ মো. রেজাউল ইসলাম বাবু।  উনার ডাকেই বিয়েসাদি, কিচ্ছা-কাহিনী, যাত্রা-পার্টি এবং স্কুল-কলেজের অনুষ্ঠানে স্বরচিত গান গেয়েছেন।  তাঁর, বাবা মায়ের হাজারো বাধা উপেক্ষা করে দীর্ঘ সময় এই জগতেই ছিলেন।  একটু বলে রাখি, নেশা ও পেশার মধ্যে তাঁর যেন খেলাধুলার প্রতি আগ্রহ ছিল।  গ্রামীণ খেলা হাডুডু পাশাপাশি একই ভঙ্গিতেই ‘স্বরচিত গান’ লেখার চিন্তা যৌবনকালে মাথায় নিয়েছিল অত্যন্ত তীব্র ভাবে।  কিন্তু তখন ‘কাগজে কলমে খাতায়’ লিখাটা হয়নি।  তবে শুরু হয়েছিল কলেজে ভর্তি হবার পর পর।  বলা দরকার যে, তিনি লেখাপড়াতে অনেক ভালো ছাত্র ছিলেন।  এসএসসিতে ছয় মার্ক পেলে অবশ্যই প্রথম স্হান অধিকার করতেন।  তবে তাঁর কলেজ জীবনটায় নেমে আসে অমানিশার ঘোর আঁধার, পড়াশোনা আর হয়নি।  কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল হুচি।  এইচএসসিতে হুচি নামের মেয়ের সঙ্গে ব্যর্থ প্রেমিক হয়ে যান।  কিসের আর লেখাপড়া, কষ্ট পেয়েছিলেন।  তাঁকে অনেক চেষ্টা করেও কোনো লাভ হয়নি।  হুচিকেও নিয়ে অনেক গান লিখেছেন।
তাঁর নিজ ভাতিজা অর্থাৎ বড় ভাইয়ের বড় ছেলে মো. আব্দুর রব দেখেছেন, অত্যন্ত স্পষ্টভাবেই তাঁর উপলব্ধি, সত্যিই চাচা সংগীত রচয়িতা।  প্রত্যক্ষদর্শীরাই উৎসাহ যুগিয়েছেন চাচাকে স্বরচিত গানের জগতে তাঁকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তাঁরাই উঠিয়েছেন।  তাঁর ভাতিজার ভাষ্যমতে বলা যায় যে, আমি চাচার একজন ভক্ত, আমার চাচা অত্যন্ত একজন গুণী ব্যক্তি।  তাঁর স্বরচিত বহু গান আছে, আমি মনে করি সংগীত জগতের এক তৃণমূল বীর, আমি তাঁর লিখিত ‘গান, সুর, মিউজিক’ বাজানোর পারদর্শিকতায় সত্যিই একজন খাটিভক্ত।  খুব পছন্দ হয় চাচার স্বরচিত গান, আবার গাইতেও চেষ্টা করি চাচার নিজস্ব স্টাইলে।  আব্দুর রব আরো বলেছেন যে, সব গান বিজ্ঞান চৈতন্য বোধের ফোক সংগীত।  তাই ফোক সংগীতের রচয়িতা শফিকুল ইসলাম শফি প্রায় ৫০-৫৫টি গান রচনার বড় এক খাতা হাতে করেই ঘুরে বেড়ান।  সুতরাং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এর মাস্টার্স পড়ুয়া ভাতিজার তত্ত্বমতে তাঁর বহু গানসহ জীবনের বিভিন্ন ঘটনার প্রমাণ দিলেন।
শৈশব থেকেই তিনি বাংলাদেশের জনপ্রিয় বাউল শিল্পী, মমতাজের ভক্ত।  শিল্পী মমতাজকে পেলে তাঁকে গানসহ মনের কিছু কথা শুনাতে ইচ্ছে করে।  শিল্পী মমতাজের মোবাইল নম্বর পেলেও মোবাইলে গানগুলো শুনানোর ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন শফি।  তাই তাঁর ০১৭১৭৬৬৪১৪০ এই মুঠোফোন নম্বর দিয়ে দিলেন লেখক নজরুল ইসলাম তোফাকে।  গানগুলো রেকর্ডিং হোক সেই ইচ্ছাও তাঁর আছে।  সব গানগুলোতে নিজে সুর দেওয়া এবং গাওয়া আছে।  কোনো সংগীত প্রিয় ‘ছেলে কিংবা বিত্তবান মানুষ’ এগিয়ে আসলে তাদের গাওয়া ও রেকর্ডিং করায় কোনো বাধা সৃষ্টি করবেন না।
ধর্ম এবং বিজ্ঞান উভয়ের প্রতি গভীর সমর্থনের এক বিশাল জনগোষ্ঠীর আস্থা থাকেই তাঁর এ রচিত গানের কথা ও সুর।  হয়তো কালের আবর্তনে মহা বিশ্বের শুরু থেকে ধ্বংস পর্যন্ত মো. শফিকুল ইসলাম শফির স্বরচিত গান যেন অক্ষুন্ন থাকে সে স্বীকৃতিটাও তিনি গান দ্বারা শ্রোতা ও দর্শকদের কাছে আশা করেন।

লেখক : টিভি ও মঞ্চ অভিনেতা, চিত্রশিল্পী, সাংবাদিক, কলামিষ্ট এবং প্রভাষক।