শিল্পী সমিতির সভাপতি-সম্পাদককে কড়া জবাব দিলেন হিরো আলম

উম্মে সালমা, বিনোদন ডেস্ক, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
সম্প্রতি বাংলাদেশ শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক চিত্রনায়ক জাহেদ খান হিরো আলম নামের কাউকে চেনেন না এবং এফডিসির সাথে এই নামের কারো কোনো সম্পর্ক নেই বলে মন্তব্য করার পর ফেসবুক লাইভে এসে কড়া ভাষায় এর জবাব দিলেন আলোচিত চরিত্র হিরো আলম।  আজ সোমবার (১ জুন) রাত সাড়ে ১০ টায় তিনি মোট ১৩ মিনিটের লাইভ কথনে চিত্রনায়ক জাহেদ খান ও অভিনয় শিল্পী মিশা সওদাগরকে উদ্দেশ্য করে তাদের ব্ক্তব্যের কড়া সমালোচনা করেন।  জনপ্রিয়তা মাপতে তিনি জাহেদ খানকে চ্যালেঞ্জও ছুড়ে দেন।
জানা গেছে, এক ভার্চুয়াল ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নেন অভিনয় শিল্পী শাহরিয়ার নাজিম জয়, বাংলাদেশ শিল্পী সমিতির সভাপতি অভিনয় শিল্পী মিশা সওদাগর, সাধারণ সম্পাদক চিত্রনায়ক জায়েদ খান।  ভিডিও কনফারেন্সের এক পর্যায়ে শাহরিয়ার নাজিম জয় মিশা সওদাগরের কাছে প্রশ্ন করেন, একটি শেষ প্রশ্ন।  চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সদস্যতো অনেকেই।  হিরো আলম নামের কেউ কি শিল্পী সমিতির সদস্য?  সেওতো চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছে।  এসময় মিশা সওদাগর কিছুটা সময় পর বলেন- অবশ্যই, হ্যাঁ, উনি আজীবন সদস্য…। এভাবে বেশ কয়েকবার বলার মাঝেই সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান বলে ওঠেন- না না না, ভুল আছে ভুল আছে..।  হিরো আলম সদস্য না।  আমার প্রেসিডেন্ট কথাটা শুনতে পায়নি।  হিরো আলম শিল্পী সমিতির সদস্য না।  তিনি ভুল করছেন।  এসময় মিশা সওদাগর বলে ওঠেন- ও (জয়) কার কথা বললো?  এমন সময় জায়েদ খান বলেন- ওই যে মিউজিক ভিডিও করে ছেলেটা, হিরো আলম, হিরো আলম।  এমন সময় মিশা সওদাগর বলেন- কোন আলম? ঠিক সেই সময় জয় আবারো বলেন- হিরো আলম।  এমন সময় জায়েদ খান বলেন- আমরা হিরো আলম নামের কাউকে চিনি না।  হিরো আলম কি, আমরা হিরো বলতে বুঝি নায়ক রাজ-রাজ্জাককে, আমরা হিরো বুঝি ফারুক, আমরা হিরো বুঝি আলমগীর, আমরা এ ছাড়া কাউকে হিরো আলম নামে চিনি না।
এর জবাবে হিরো আলম বলেন, শ্রদ্ধেয় মিশা ভাই ও জায়েদ খান ভাই বলেছেন, তারা নাকি হিরো আলম নামে কাউকে চিনেন না।  হিরো আলম নামে শিল্পী সমিতিতে কেউ সদস্য নেই।  আমি মানলাম, আমি শিল্পী সমিতির সদস্য না।  এর আগে আমি একটি সিনেমা করেছি, এর নাম ছিল ‌‘মার ছক্কা’, বাণিজ্যিক ছবি।  আমার দ্বিতীয় চবি ‘‌সাহসী হিরো আলম’।  এই সিনেমার কিন্তু আমি নিজেই প্রযোজক ও হিরো।  এই সিনেমাটা কিন্তু এই ২৭ তারিখে রিলিজ হওয়ার কথা ছিল, সেটাও আপনারা জানেন।  তাহলে আমি এফডিসির কোনো লোক কেমন করে হলাম না আমাকে বলেন।  আরেকটা কথা, হিরো আলম বলে ওরা তুচ্ছ করে কথা বললো।  কি বললো ওরা, হিরো আলম নামে কাউকেই নাকি তারা চিনে না।  আমি জায়েদ খান ভাইকে একটা কথা বলতে চাই- আপনি যে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে এমন একটা কথা বললেন।  আপনি জায়েদ খান একপাশে দাঁড়াবেন।  আমি হিরো আলম আরেকপাশে দাঁড়াবো।  দেখি আপনাকে কয়জন চেনে, আর আমাকে কয়জন চেনে।  আপনাদের মতো ব্যক্তিদের কারণে আজ চলচ্চিত্র ধ্বংসের পথে।  আপনাদের কিছু কিছু শিল্পী দেখতে পারে না।  আপনাদের কারণে অনেক শিল্পী কাজ পায় না।  অনেকের এফডিসিতে ঠাঁই নেই, শুধু এদের (মিশা-জায়েদ) কারণে।  আপনাদের (মিশা-জায়েদ) কারণে আজ চলচ্চিত্র শিল্প ধ্বংসের পথে। আপনারা নিজেরা কোনো কিছু করবেন না, কাউকে করতেও দেবেন না। শুধু চিন্তা করেন কিভাবে মানুষকে ধ্বংস করা যায়।
হিরো আলম বলেন, আমি জানিনা আল্লাহ আমাকে কেন এতোদূর নিয়ে এলো, আমার নাম ডাক ছড়ালো।  মানুষের এতো ভালোবাসা দিলো।  আর এতোদূর আসার পর যে মানুষের এতো গালমন্দ, লাত্তি, কটু কথা শুনতে হবে তাও আমি জানি না।  আমার চেহারাটা কালো সে জন্যই কি এসব, তা আমি জানি না।  একটার পর একটা লোক আমার পেছনে লাগে।  আমি কিন্তু এখনো ওতো বড় হইনি।  তারপরেও আমার পেছনে লাগে।  আমি কি কারো ক্ষতি করি?  আমি আমার যোগ্যতা দিয়ে আল্লাহর দয়ায় এতোটুকু এসেছি।  আল্লাহ আমার মাথার উপরে আছে, আর কিছু মানুষের ভালোবাসা আছে বলেই আমি এখনো এগুচ্ছি।  এ পর্যন্ত আসতে গিয়ে হিরো আলম কখনো কোনো শিল্পী, পরিচালক, প্রযোজক- কারো কাছেই কখনো মাথা নত করেনি।  হিরো আলম না খেয়ে মারা যাবে, কিন্তু কখনো আল্লাহ ছাড়া কারো কাছে মাথা নত করবে না।  এই জায়েদ খান কত বড় স্টার তা আপনারা জানেন, এই হিরো আলম কত বড় স্টার তাও আপনারা জানেন, সেটা আমি জানি না।  তিনি বলেন, আমি জায়েদ খানের মতো ৭ ফুট লম্বা না, জায়েদ খানের সাথে আমার চেহারা যায় না।  সে হিসেবে আমি হিরো না।  সেই হিসেবে আমি শিল্পী সমিতির কেউ না, সে হিসেবে কি আমি এফডিসির কেউ হতে পারি না?  আমি কি শিল্পী সমিতির সদস্য হতে পারি না?  আমি আপনাদের একটি কথা বলতে চাই।  হিরো আলম কাউকে ভয় পায় না।  সত্য কথা বলতে ভয় পায়না।  কেন তারা আমাকে এতো তুচ্ছ করে কথা বলবে?  কেন তারা আমাকে ইগনোর করে কথা বলবে?  কেন?  আমি কি জায়েদ খানের কাছে কখনো গিয়েছিলাম, যে আমাকে একটু সাহায্য করেন, হিরো হিসেবে আমাকে একটু সেট করে দেন?  এটা চাইতে কি আমি উনার কাছে গিয়েছিলাম? তাহলে উনি কেন আমাকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে কথা বলবেন?  হিরো আলম বলেন, আমার নতুন ছবি ‘‌সাহসী হিরো আলম’ ছবিতে রেহানা জলি, আনোয়ার সিরাজীসহ বাংলাদেশ চলচ্চিত্রের অনেক নামী তারকারা অভিনয় করেছেন।  ছবিটি ছাড়পত্রও পেয়েছে।  আমি যদি এফডিসির কিছুই না হতাম, তাহলে আমার ছবি ছাড়পত্র পায় কিভাবে?  আমি প্রযোজক হিসেবে তালিকাভুক্ত না হলে আমার ছবি ছাড়পত্র পায় কিভাবে?  আমারতো সব ডকুমেন্টস আছে।  আপনারা আমাকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করলেও দর্শক আমাকে ভালোবাসে বলেই আমি অসম্ভবকে সম্ভব করছি।
হিরো আলম বলেন, আমি যদি এফডিসির কেউ না-ই হতাম, তাহলে আমার ছবি কিভাবে রিলিজ হওয়ার সুযোগ পায়?  কিভাবে আমাকে সেন্সর ছাড়পত্র দেয়?  আমি হিরো না, আমি আর্টিস্ট না।  আমি আপনাদের (দর্শকদের) একজন হিরো আলম হতে চাই।  আমি হিরো আলম আপনাদের ভালোবাসা নিয়ে থাকতে চাই।  আমার বড় কোনো হিরো হওয়ার ইচ্ছা নাই।  আজ পর্যন্ত কেউ আমাকে গুরুত্ব দেয়নি।  কেউ একটু জায়গা করে দেয়নি।  বরং অপমান করেছে।  আমি অনেক কষ্টে নিজের চেষ্টায়, নিজের যোগ্যতায় আজকে এ পর্যায়ে এসেছি।  আমি এমনও অপমাণিত হয়েছি, কষ্ট পেয়েছি, মাঝে মাঝে মনে হয়েছে আমি আত্মহত্যা করি।  কিন্তু আত্মহত্যা মহাপাপ।  আমি এই জিনিসটি মেনেছি।  যারা আমাকে অপমান করে, কষ্ট দেয়, তাদের বিচার আল্লাহ করবে।  আমি আপনাদের দোয়া নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই।

ডিসি/এসআইকে/ইউএস