রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি >>>
ঘনিয়ে আসছে পবিত্র ঈদ-উল আযহা। জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি ইতোমধ্যে আগামি ১ আগস্ট কোরবানির ঈদ পালনের ঘোষণা দিয়েছে। সেই হিসেবে হাতে আছে আর মাত্র ৯ দিন। আর পশু কোরবানির এই সময়ে তাই সারাদেশের কামারেরাই ব্যস্ত সময় পার করবেন এটাই স্বাভাবিক। দা-ছুরি শান দিতে তাই এখন ব্যস্ততম সময় পার করছেন তারা। দিন-রাত- এতোটুকু অবসর নেই এখন। সারা বছর বসে থাকা কিংবা অন্য কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করা কামারেরাও এখন খুব ব্যস্ত। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত তাদের দা ও ছুরিতে শান দেয়ার কাজ করতে হচ্ছে পালাক্রমে।
এমনিতেই চট্টগ্রামের মানুষ ভোজনরসিক। কোরবানির ঈদে পশুর জবাইয়ের পর তার মাংস প্রক্রিয়াকরণের জন্য ধারালো দা, বটি, ছুরি, ধামা, কিরিচ ইত্যাদির প্রয়োজন পড়ে। বছরের অন্য সময়ে কাজ না থাকলেও দা-ছুরিতে শান দিতে চট্টগ্রামের লাখ লাখ মানুষ কামারদের দোকানে লাইন ধরেন। এই ধারার বাইরে নয় উত্তর চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার অধিবাসীরাও।
জানা গেছে, উপজেলার ১৫ টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার ২১টি হাট-বাজারে দা-ছুরিতে শান দেওয়ার কাজ চলছে। অধিকাংশ কামারেরাই এখন দা-ছুরিতে শান দেওয়ার নতুন অর্ডার পারতঃপক্ষে নিচ্ছেন না। এতে স্থানীয়দের সাথে কামারদের বৎসা হচ্ছে প্রতিনিয়তই। উপজেলার চন্দ্রঘোনা দোভাষি বাজার ও লিচুবাগানে ৬টি কামারের দোকানে দা-ছুরিতে শান দিতে আসা লোকজনের ভীড় দেখা যায়। লিচুবাগানের জনপ্রিয় ধনা দাশের কামারের দোকানে দা-ছুরি শান দেওয়া ও নেওয়ার জন্য মানুষের জটলা ছিল চোখে পড়ার মতো। অনেকে তৈরিকৃত দা-ছুরি-বটি কিনতে যাচ্ছেন কামারের দোকানে।
ধনা দাশ জানান, কোরবানির ঈদ এলেই আমাদের কাজ বেড়ে যায়। সারা বছর খুব কষ্টে জীবন-সংসার চালাতে হয়। এখন দোকানে ৫ জন কর্মচারী রাখতে হয়েছে। এই একটি মাসের কাজের জন্য আমরা ১১ মাস বেকার থাকি। যৎসামান্য আয় দিয়ে সংসার চালাই। এখন দোকানে রাত-দিন ২৪ ঘন্টাই কাজ করতে হচ্ছে। খাওয়া হয় না অনেক সময়। তিনি জানান, ছোট ছুরি থেকে বড় কিরিচ, ধামায় শান দেওয়ার জন্য ৫০ টাকা থেকে শুরু করে কাজের উপর ভিত্তি করে টাকা নেওয়া হয়। অনেকে সঠিক মজুরি দেয় না। ছুরি শান দিতে কয়লার প্রয়োজন হয়। বাজারে কয়লার দাম অনেক বেশী। দা-ছুরি শান দিতে আগে কয়লা পেতে সমস্যা হতো না। এখন কয়লার দাম আগের চেয়ে ৩ গুণ বেড়েছে। এ জন্য দা-ছুরিতে শান দিতে যে টাকা খরচ হয় তা অনেকে দিতে চায় না। বিভিন্ন স্থান থেকে কয়লা ১ বস্তা ৩’শ টাকা দিয়ে কিনতে হয়।
চন্দ্রঘোনা মা মণি ডায়াগণস্টিক সেন্টার ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের চেম্বারের পরিচালক দ্বীন মোহাম্মদ জানান, কামারদের দোকানে দা-ছুরি শান দিতে এসে দেখা যায়- তাদের কর্ম ব্যস্ততা অনেক বেড়ে গেছে। তাদের ব্যস্ততার কারণে সঠিক সময়ে দা-ছুরি নিতে না পারার আশঙ্কা থেকে যায়। কামারদের দোকানে দা-ছুরি শান দেওয়ার জন্য রীতিমত প্রতিযোগিতা চলছে বলে তিনি জানান।
ডিসি/এসআইকে/এমজে