কৃত্রিম হ্রদের তলদেশ ভরাট : হ্রদে পানির ধারণ ক্ষমতা কমে যাওয়ায় কাপ্তাইয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন অর্ধেকে নেমেছে

মাহফুজ আলম, কাপ্তাই প্রতিনিধি >>>
কৃত্রিম হ্রদের তলদেশ দীর্ঘ ৫০ বছরের ময়লা-আবর্জনায় ভরাট হয়ে পড়েছে।  ফলে হ্রদে পানির ধারণ ক্ষমতা দিন দিন কমে আসছে।  এখন বর্ষা মৌসুম চলছে।  এই সময়ে কাপ্তাই হ্রদে পানিতে ভরপুর থাকার কথা।  এমনকি পানির চাপ কমাতে এবং কাপ্তাই প্রধান বাঁধ ঝুঁকি মুক্ত রাখতে কাপ্তাই হ্রদ থেকে পানি ছাড়া হতো।  অতীতে বহুবার এমনটি হয়েছে।  কিন্তু এখন হ্রদ থেকে পানি ছাড়াতো দূরের কথা; হ্রদে বর্তমানে পানি আশঙ্কাজনক হারে কম রয়েছে।  সাধারণত এই সময় কাপ্তাই হ্রদে কখনো পানির উচ্চতা এতটা কম থাকে না বলে স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে।
কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কন্ট্রোল রুম সুত্র জানায়, রুলকার্ভ (পানির পরিমাণ) অনুযায়ী এখন (২০ আগস্ট) কাপ্তাই লেকে পানি থাকার কথা ৯৫.০৯ ফুট মীন সী লেভেল (এমএসএল)।  কিন্তু রয়েছে ৯৩.৫৬ ফুট এমএসএল।  পানি কম থাকায় কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাঁচটি ইউনিটের সবগুলো চালানো সম্ভব হচ্ছে না।  এখন বর্ষা মৌসুমও শেষ হয়ে আসছে।  আগামিতে আর ভারী এবং লাগাতার বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনাও নেই।  ফলে কাপ্তাই হ্রদে পানির স্তর আরো কমবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন।  হ্রদে পানি কম থাকায় কাপ্তাইয়ে বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে।
কাপ্তাই হ্রদে পানি কম থাকার কথা স্বীকার করেছেন কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী এটিএম আব্দুজ্জাহের।  তিনি বলেন, কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্রে মোট ৫টি জেনারেটর রয়েছে।  এই ৫টি ইউনিট থেকে সর্বোচ্চ ২৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে।  রুলকার্ভ অনুযায়ী লেকে পানি থাকলে সবগুলো জেনারেটর একযোগে চালু করা সম্ভব হতো।  কিন্তু কাপ্তাই হ্রদে পানি কম থাকায় ৫ নম্বর ইউনিটটি বর্তমানে বন্ধ রেখে অন্য ৪টি ইউনিট উৎপাদনে রাখা হয়েছে।  আর সচল ৪টি ইউনিট থেকেও বর্তমানে ১২৩ মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা সম্ভব হচ্ছেনা।  অবশ্য উৎপাদিত ১২৩ মেগাওয়াট বিদ্যুতের পুরোটাই জাতীয় গ্রীডে সঞ্চালন করা হচ্ছে।
অতীতে ভরা বর্ষা মৌসুমে কাপ্তাই হ্রদে পানির পরিমান এত কম ছিলনা বলে সুত্রে জানা গেছে।  বর্তমানে কাপ্তাই হ্রদে পানির পরিমান এত কম কেন জানতে চাইলে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের একটি সূত্র জানায়, কাপ্তাই লেক সম্পূর্ণ প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল। বৃষ্টি হলে কাপ্তাই হ্রদ পানিতে ভরে যাবে।  এটাই নিয়ম।  সাধারণত বর্ষার সময় কাপ্তাই হ্রদে পানির ঘাটতি দেখা যায় না।  কিন্তু এবছর রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য এলাকায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল অনেক কম।  বৃষ্টি না হওয়ায় হ্রদে পানির প্রবাহ বৃদ্ধি পায়নি।  তবে অতীতে সেপ্টেম্বর, অক্টোবর এবং নভেম্বর মাসেও পার্বত্য এলাকায় ভারী বৃষ্টি হবার রেকর্ড রয়েছে।  টানা এক সপ্তাহ মুষলধারে বৃষ্টি হলে কাপ্তাই হ্রদে পানিতে ভরে যাবে।  তখন বিদ্যুৎ উৎপাদন স্বাভাবিক পর্যায়ে চলে আসবে বলেও সুত্র আশা প্রকাশ করছে।  আর কাঙ্খিত মাত্রায় বৃষ্টি না হলে পানির অভাবে কাপ্তাই বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড লক্ষ্যমাত্রা বিদ্যুৎ উৎপাদনে না যেতে পারার আশংকা করা হচ্ছে।

ডিসি/এসআইকে/এ্এ