‘অলিখিত কথাটি’ রাখেনি ভারত, পেঁয়াজ কূটনীতি শুরু

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
বাংলাদেশে অব্যাহতভাবে পেঁয়াজ রপ্তানি করবে ভারত।  কোনো কারণে তা বন্ধ করতে চাইলে আগেই জানাবে।  বন্ধুপ্রতীম রাষ্ট্র হিসেবে দেশটির সঙ্গে এমন একটি ‘অলিখিত কথা’ ছিল বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।  কিন্তু না জানিয়ে হঠাৎ পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করায় সেই ‘অলিখিত কথাটি’ না রাখার বিষয়টিই অস্বস্তিতে ফেলেছে বাংলাদেশকে।  সে কারণে ভারত যাতে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে, সে বিষয়ে জোর কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু করেছে ঢাকা।
জানা গেছে, ভারত থেকে হঠাৎ করে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর ঢাকা ও দিল্লি থেকে কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু হয়েছে।  ঢাকার পক্ষ থেকে দিল্লির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।  অপরদিকে সঙ্কট সামাল দিতে ভারত ছাড়াও বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।
সূত্র জানায়, ভারত থেকে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের একদিন পরেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য ঢাকা ও দিল্লি থেকে কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু করা হয়।  দিল্লির বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দেওয়া হয়েছে।  একইসঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশনকে একটি কূটনৈতিক পত্র দেওয়া হয়েছে।  ঢাকার পক্ষ থেকে পেঁয়াজ বন্ধের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।  একইসঙ্গে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য প্রতিবেশী দেশটিকে অনুরোধ জানানো হয়।
গত বছর সেপ্টেম্বর মাসেও ভারত হঠাৎ করে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয়।  সে সময় বাংলাদেশের বাজারে পেঁয়াজের বাজার অস্থির হয়ে পড়ে।  কোথাও কোথাও ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি দরেও পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল।  এবারও সেই সেপ্টেম্বর মাসেই ভারত হঠাৎ করে পেঁয়াজ বন্ধ করে দেওয়ায় বাংলাদেশে পেঁয়াজের বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে।
ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের পর গত বছর ৩ অক্টোবর দিল্লি সফরে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  সে সময় ভারত সরকারকে অনুরোধও করেছিলেন পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের আগে তারা যেন বাংলাদেশকে আগাম জানিয়ে দেয়।  এছাড়া সে সময় প্রধানমন্ত্রী ভারতের ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে দেওয়া এক বক্তৃতায় বলেছিলেন, তিনি তার কাজের লোকদের বলে দিয়েছেন পেঁয়াজ ছাড়া রান্না করতে।  তখন প্রধানমন্ত্রীর ওই বক্তব্য নিয়ে আলোচনাও হয়েছিল।
চলতি বছর ১৪ সেপ্টেম্বর ভারত থেকে হঠাৎ করেই পেঁয়াজ আসা বন্ধ হয়ে যায়।  তবে ওই দিন রাতে ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের বৈদেশিক বাণিজ্য বিভাগের মহাপরিচালক অমিত যাদব স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, ১৯৯২ সালের ভারতের বৈদেশিক বাণিজ্য আইনের ৩ ধারা অনুযায়ী পরবর্তী আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত সব ধরনের পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ থাকবে।  তবে পেঁয়াজের কুচি, পাউডার ও অন্য কোনো অবস্থায় পেঁয়াজ রপ্তানি অব্যাহত থাকবে।  ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন জারির পর বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যায়।
সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ভারতে ইলিশ রপ্তানি বন্ধ রেখেছে বাংলাদেশ।  তবে দুর্গাপূজা সামনে রেখে ভারতে প্রায় ১৫০০ মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দেওয়া হয়।  গত ১৪ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ থেকে সেই ইলিশের প্রথম চালান যায় ভারতে।  আর ঠিক সেই একই দিনে ভারত থেকে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ সরকারের জন্য অস্বস্তি তৈরি হয়েছে।  বিষয়টি নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা চলছে।  আর সে কারণেই সরকার থেকে ভারতের কাছে পেঁয়াজ রপ্তানি আদেশ প্রত্যাহারে জোর কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।
এদিকে ভারত থেকে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিকল্প দেশ খোঁজা হচ্ছে।  মিয়ানমার, তুরস্ক ও মিশর থেকে পেঁয়াজ আমদানির জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।  এসব দেশের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে সরকার। 
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম জানিয়েছেন, ভারত থেকে পেঁয়াজ রপ্তানির নোটিশ আমাদের নজরে আসার সঙ্গে সঙ্গেই দিল্লি মিশন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।  কারণ আমাদের মধ্যে অলিখিত কথাটি ছিল যে, ভারত অব্যাহতভাবে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি করবে।  তবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যদি কোনো পরিবর্তন আনে, আগে থেকে আমাদের জানিয়ে দেবে।  এই ধরনের বোঝাপড়ার মধ্যে আছে, এটা বন্ধু প্রতিম রাষ্ট্র হিসেবে।  আমরা তাদের খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে এই সিদ্ধান্তটি প্রত্যাহারের জন্য অনুরোধ জানিয়েছি।  প্রত্যাশা করছি, এটার একটা ভালো ফলাফল পাবো।
উল্লেখ্য, প্রতি বছর বাংলাদেশে প্রায় ২৩ লাখ টন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়।  তবে ৪ থেকে ৫ লাখ টন পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যায়।  আর প্রতি বছর বাংলাদেশে চাহিদা রয়েছে ৩০ লাখ টন।  ফলে প্রতি বছর প্রায় ১০ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়।  আর আমদানির ৯০ শতাংশই আসে ভারত থেকে।- বাংলানিউজ

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ