চাউলে অস্থিরতা বাড়ছেই

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
চাউলের মূল্যে অস্থিরতা যেন কমছেই না।  পাশাপাশি ক্রমশই বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম- ডাল, ভোজ্যতেল, রসুন, আদা, পেঁয়াজের পর নতুন করে এ তালিকায় যুক্ত হয়েছে চাউল।  গত কয়েকদিনে বাজারে সব ধরনের চাউলের দাম বেড়েছে।  চাউলের বাজারে নতুন সংকট দেখা দিয়েছে, আর সেটি হচ্ছে- গরিব মানুষের মোটা চাউলের সরবরাহ কম।  ফলে চাপ পড়েছে সব ধরনের চিকন চাউলের ওপর।  ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ কারণেই নাকি বেড়েছে চাউলের দাম।  বাজার ভেদে প্রতিকেজিতে চাউলের দাম বেড়েছে ৪ থেকে ৬ টাকা।  ৫৪ টাকা কেজি দরের মাঝারি মানের মিনিকেট চাউল এখন বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি দরে।  আর ৫৬ টাকা কেজি দরের নাজিরশাইল চাউল বিক্রি হচ্ছে ৬২ টাকা করে।  বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, চাউলের এই মূল্য বৃদ্ধির পেছনে কোনো ধরনের কারসাজি নেই।  চাউলের দাম বাড়ার প্রধান কারণ হচ্ছে- প্রথমত, চাউলের চলতি মৌসুম শেষের দিকে।  দ্বিতীয়ত, এবার সারাবছর কেটেছে প্রাকৃতিক দুর্যোগে।  প্রথমে হলো শিলাবৃষ্টি।  এরপর ঘূর্ণিঝড় আম্পানের ছোবল।  তারপর দেশের ৩৩ জেলাজুড়ে বন্যা, যা এখনও চলছে।  এছাড়া বছরজুড়ে করোনার তাণ্ডবতো রয়েছেই।  এর বাইরে এবছর বৃষ্টিপাতের পরিমাণও বেশি।  প্রায় প্রতিদিনই বৃষ্টি হচ্ছে।  এসব কারণে বাজারে ধানের সরবরাহ কমে গেছে বিধায় দামও বেশি।  ধানের দাম বেশি হলে চাউলের দাম বাড়বে, এটাই স্বাভাবিক- এমন দাবি ব্যবসায়ীদের।
রাজধানীর চাউল ব্যবসায়ীরা বলছেন, মিনিকেট চাউলের দাম বাড়লে তা সব ধরনের চাউলের দামের ওপরে প্রভাব ফেলে।  কারও কারও অভিযোগ- মিনিকেট চাউলের দাম বাড়ানোর পেছনে এই চাউলের উদ্ভাবক কুষ্টিয়ার আব্দুর রশিদ দায়ী, যিনি ‘মিনিকেট রশিদ’ নামে পরিচিত।  আব্দুর রশিদ তার মিনিকেট চাউলের দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছেন বলে বাজারে সব ধরনের চাউলের দাম বেড়েছে।
এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে আব্দুর রশিদ বলেন, ‘গত ছয় মাসে আমরা মিনিকেট চাউলের দাম বাড়াইনি।  বাজারে যদি আমার মিনিকেট চাউলের দাম বেড়ে থাকে, তাহলে তা অন্য কারও কারসাজিতে বেড়েছে।  যা আমি জানি না’।  তিনি বলেন, ‘তবে বাজারে ধানের সংকট রয়েছে।  কারণ, সিজন শেষ।  এতে চাউলের বাজার কিছুটা বাড়তি হতে পারে।  সরবরাহ কমে গেলে ধানের দামও বাড়ে।  আর ধানের দাম বাড়লে চাউলের দামও বাড়বে’।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ-টিসিবি’র হিসাবে, গত এক বছরে গরিব মানুষের মোটা চাউলের দাম বেড়েছে ২৭ শতাংশ। চিকন চাউলের দামও বেড়েছে ১৪ শতাংশ।  মাঝারি মানের বিভিন্ন চাউল বিক্রি হয়েছে প্রতিকেজি ৪৮ থেকে ৫৩ টাকা।  আর প্রতিকেজি চিকন মিনিকেট চাউল বিক্রি হয়েছে বাজারভেদে ৫৬ থেকে ৬০ টাকা।  টিসিবির হিসাবে, গত বছরের এই সময়ের তুলনায় এখন মাঝারি মানের চাউলের দাম ৯ শতাংশ ও সরু চাউলের দাম ১৫ শতাংশ বেশি।
টিসিবির তথ্যমতে, শুধু চাউলই নয়, ডাল, তেলসহ সব ধরনের পণ্যের দাম এখন বাড়তি।  সরকারি এই সংস্থা জানায়, গড়ে ২০টি পণ্যের মধ্যে ১৭টি পণ্যের দামই বেশি ও বাড়তি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আড়তে চিকন চাউলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, যা আগে ছিল ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা।  আর মাঝারি মানের চাউলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪২ থেকে ৪৪ টাকা, যা আগে ছিল ৪০ থেকে ৪২ টাকা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক লায়েক আলী জানান, চাউলের বাজারে কারও কোনো কারসাজি নাই।  ধানের মৌসুম শেষের দিকে।  এখন বাজারে ধান নাই।  এবার বছরজুড়েই একটার পর একটা দুর্যোগ লেগেই রয়েছে।  প্রতিদিন বৃষ্টি হচ্ছে।  কারোনার তাণ্ডব তো আছেই।  এসব কারণে বাজারে ধানের সরবরাহ কম, দামও বেশি। ধানের দাম বেশি হলে তো চাউলের দাম বাড়বে।
এদিকে আইসিডিডিআর,বি এবং ওয়াল্টার এলিজা হল ইনস্টিটিউট-অস্ট্রেলিয়ার এক যৌথ গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় বছরজুড়ে করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে সারাদেশ লকডাউনে থাকার কারণে ৯৬ শতাংশ পরিবারের গড় আয় কমেছে।  করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে গত মার্চের শেষের দিকে সাধারণ ছুটি ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়ার কারণে দেশে ৯৫ শতাংশ মানুষের আয় কমেছে বলে জানিয়েছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক।  ব্র্যাকের জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৫১ শতাংশের কোনো আয় নেই এবং কাজ হারিয়েছেন ৬২ শতাংশ নিম্ন আয়ের মানুষ।  এছাড়া, ২৮ শতাংশ মানুষ মহামারির কারণে অর্থনৈতিকভাবে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন।
এ বিষয়ে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘করোনার কারণে মানুষ নানা ধরনের সংকটে রয়েছেন।  মানুষের আয় নাই।  হাতে জমানো টাকা শেষ হয়ে গেছে।  এ সময় অনেকেই কর্মসংস্থান হারিয়েছেন।  এমন অবস্থায় কোনো মহলের কারসাজিতে নিত্যপণ্যের দাম বাড়াটা দুঃখজনক।  এক্ষেত্রে সরকারের নজরদারি প্রয়োজন বলে মনে করি’।
এ প্রসঙ্গে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, ‘চাউলের বাজার নিয়ে কেউ কারসাজি করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  দেশে পর্যাপ্ত চাউল মজুত আছে।  তাই চাউল নিয়ে কোনো ধরনের কারসাজি সরকার বরদাশত করবে না’। সূত্র : বাংলাট্রিবিউন

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ