বিদেশে রপ্তানির জন্য অপেক্ষায় চারশত কুমির, নতুন সম্ভাবনা কুমির চাষে

কক্সবাজার প্রতিনিধি, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
৪০০টি কুমির বিদেশে রপ্তানির জন্য প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।  ফলে এই খাত থেকে প্রতিবছর চারশত কোটি টাকা আয়ের সম্ভাবনা উঁকি মারছে।  আর এটি সম্ভব হলে নতুন সম্ভাবনা নিয়ে আসা এই কুমির চাষে আগ্রহী হবেন অনেকেই।  সাড়ে তিন হাজার কুমির নিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম খামারটি পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবানে অবস্থিত।  আকিজ গ্রুপের এ খামারটি এবার বিদেশে কুমির রফতানি করতে যাচ্ছে।  ফলে বছরে ৪০০ কোটি টাকা আয়ের সম্ভাবনা জাগাচ্ছে মিয়ানমার সীমান্তের নিকটবর্তী এ খামার।
জেলার নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম মৌজার তুমব্রু গ্রামের ২৫ একর পাহাড়ি জমিতে আকিজ গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ ২০০৮ সালে গড়ে তোলে ‘আকিজ ওয়াইল্ড লাইফ ফার্ম’।  ২০১০ সাল থেকে সেখানে বাণিজ্যিকভাবে কুমিরের চাষ শুরু হয়।  কুমিরের এ খামারটি নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূরত্বে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের কাছাকাছি ঘুমধুম পাহাড়ি এলাকার তুমব্রু গ্রামে।  বর্তমানে ওই খামারে কাজ করছেন দুই প্রকল্প কর্মকর্তার অধীনে ২০ জন কর্মচারী।  তবে উখিয়া থেকে এর দূরত্ব মাত্র ৪ কিলোমিটার।
ডিসেম্বরের মধ্যেই আকিজ ওয়াইল্ড লাইফ ফার্ম থেকে চার শতাধিক কুমির মালয়েশিয়ায় রফতানি হতে যাচ্ছে।  ২০১০ সালের আগস্টে অস্ট্রেলিয়া ও মালয়েশিয়া থেকে ৫০টি অস্ট্রেলীয় প্রজাতির কুমির আনা হয়।  এর একেকটির দাম পড়ে ৩ লাখ টাকা।  পরে নাইক্ষ্যংছড়ির ওই খামারের উন্মুক্ত জলাশয়ে সেগুলো ছাড়া হয়।  এরমধ্যে মারা যায় চারটি কুমির।  ৪৬টি সুস্থ কুমিরের মধ্যে পরে স্ত্রী কুমিরের সংখ্যা দাঁড়ায় ৩১টি এবং পুরুষ কুমির ১৫টি।  সেই ৪৬টি কুমির থেকে নাইক্ষ্যংছড়ির আকিজ ওয়াইল্ড লাইফ ফার্মে বর্তমানে বাচ্চাসহ ছোট-বড় কুমিরের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৪০০টি।  খামারে দুভাবেই রাখা হয়েছে কুমির- উন্মুক্ত জলাশয় ও খাঁচায়।
এখানে কুমিরের বাচ্চা ফোটানো হয় ইনকিউবেটরে।  ডিম ফোটার সঙ্গে সঙ্গেই ছোট বাচ্চাদের সংগ্রহ করে আরেকটি ইনকিউবেটরে রাখা হয়।  কারণ বাচ্চাগুলোর নাভি থেকে কুসুম ছাড়তে সময় লাগে ৭২ ঘণ্টা।  এরপর ছোট কুমিরদের নার্সারিতে নিয়ে ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রাখা হয়।  জন্মের পর একটি কুমির প্রায় ১২ ইঞ্চি লম্বা হয়ে থাকে।  প্রায় দুই বছর বয়স হওয়ার পর বাচ্চা কুমিরগুলোকে আকারভেদে পুকুরে স্থানান্তর করা হয়।
কুমিরের চামড়া বেশ দামি। এ চামড়া দিয়ে ব্যাগ, জুতাসহ অনেক দামি জিনিস তৈরি করা হয়।  এছাড়া কুমিরের মাংস, হাড়, দাঁত এসবও দামি।  কুমিরের হাড় থেকে তৈরি হয় পারফিউম।  দাঁত থেকে গহনা বানানো হয়।  আবার পায়ের থাবা থেকে চাবির রিং তৈরি হয়।  কুমিরের মাংসও বেশ সুস্বাদু ও পুষ্টিকর।  তাই দেশে ও বিদেশে চাহিদা প্রচুর।  এক-কথায় কুমিরের কোনো কিছুই ফেলনা নয়।
আগামি ডিসেম্বরের মধ্যেই আকিজ ওয়াইল্ড লাইফ ফার্ম থেকে চার শতাধিক কুমির মালয়েশিয়ায় রফতানি হতে যাচ্ছে।  রফতানির জন্য তৈরি করা এসব কুমির গড়ে ৫ ফুট লম্বা।  এগুলোর ওজন ২০ থেকে ২৫ কেজি।  চামড়া ছাড়াও কুমিরের প্রতি কেজি মাংস ৩০ ডলারে বিক্রি হয় বিদেশে।  ১২ ডলার দামে বিক্রি হয় ১ বর্গ সেন্টিমিটার চামড়া।  কুমির রফতানি থেকে বছরে কমপক্ষে ৪০০ কোটি টাকা আয়ের সম্ভাবনা দেখছে প্রতিষ্ঠানটি।
প্রাণিবিজ্ঞানীদের মতে, এসব কুমির প্রায় ১০০ বছর বাঁচে।  প্রাপ্তবয়স্ক হতে একেকটি কুমিরের সময় লাগে অন্তত ৮ থেকে ১২ বছর।  প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর তারা হাঁস-মুরগির মতো ডিম দেয়।  তবে কুমিরের ডিমের আকৃতি রাজহাঁসের মতো বড়।  এরা ডিম দেয় সাধারণত বর্ষাকালে এবং একবারে ২০-৮০টি করে ডিম দেয় একেকটি প্রাপ্তবয়স্ক স্ত্রী কুমির।  ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ৮০ থেকে ৮৬ দিনেই ডিম থেকে কুমির ছানারা ফুটে বের হয়।
দেশের একমাত্র সরকারি কুমির প্রজনন কেন্দ্র বাগেরহাট পূর্ব সুন্দরবনের করমজলে।  ২০০০ সালে করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্র শুরু হওয়ার পর সেখানে কুমির প্রথম ডিম দেয় ২০০৫ সালে।  এখন পর্যন্ত করমজলে বিভিন্ন সময় ২৯২টি কুমিরের ছানা জন্ম নিয়েছে।  যার মধ্যে ১৯৫টি ছানা এখনো প্রজনন কেন্দ্রে রয়েছে।  ৯৭টি কুমিরের ছানা সুন্দরবনের বিভিন্ন নদী ও খালে অবমুক্ত করা হয়েছে।

ডিসি/এসআইকে/এফআর