‘ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের স্বল্প সুদে ঋণ দিন’

ফাইল ছবি

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
কোভিড-১৯ মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়ার বিষয়ে বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  তিনি বলেন, ‘সরকার প্রণোদনা প্যাকেজে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের আর্থিক সহযোগিতা দিয়েছে।  ব্যাংকগুলোও যেন এ বিষয়ে আরেকটু আন্তরিকতা দেখায়’।
বুধবার (২৮ অক্টোবর) প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণভাণ্ডারে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি)-এর পক্ষ থেকে কম্বল গ্রহণ অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে তিনি এই আহ্বান জানান।  অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে কম্বল গ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের প্রণোদনা প্যাকেজে আমরা যেসব সুযোগ দিয়েছি, তাতে অল্প সুদে আমরা বিভিন্ন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের আর্থিক সহায়তা দেওয়ার একটা পদক্ষেপ নিয়েছি।  তবে এ ব্যাপারে আমি মনে করি আমাদের বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে আরেকটু আন্তরিক হওয়া দরকার।  সরকারিভাবে আমরা দিয়ে যাচ্ছি।  কিন্তু বেসরকারি ব্যাংকগুলোও যদি এদিকে এগিয়ে আসে, তাতে আরও ভালো হবে।  শুরুটা হয়তো একটু সমস্যা হবে।  পরবর্তীতে এরা যখন ব্যবসা বাণিজ্যটা চালু করতে পারবে, তখন বেসরকারি ব্যাংকগুলোই কিন্তু লাভবান হবে’।
গৃহহীনদের ঘর বানিয়ে দিন
মুজিববর্ষে দেশে কোনো মানুষ গৃহহীন থাকবে না, ভূমিহীন থাকবে না সরকারের সেই লক্ষ্যের কথা জানিয়ে বিএবি’কেও এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।  সংগঠনের সদস্যদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আপনারা আপনাদের নিজ নিজ এলাকায় যদি কেউ ভূমিহীন থাকে, গৃহহীন থাকে তাদের কিছু ঘরবাড়ি তৈরি করে দিতে পারেন।  আমরা সরকারের পক্ষ থেকে দিচ্ছি, আবার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও দিচ্ছে।  সেখানে আপনারাও সেভাবে একটু সহযোগিতা করতে পারেন, মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারেন’।
বাধার মুখের বেসরকারি ব্যাংক অনুমোদন
বাংলাদেশে একসময় এত প্রাইভেট ব্যাংক ছিল না, কিন্তু অনেকের আপত্তির মধ্যেও আওয়ামী লীগ সরকার দেশের উন্নতির কথা বিবেচনায় নিয়ে প্রাইভেট ব্যাংক করার অনুমতি দিয়েছে বলেও উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।  তিনি বলেন, ‘আমি যখন সরকারে আসি তখন থেকেই প্রাইভেট ব্যাংকগুলো দেওয়ার জন্য আমরা পদক্ষেপ নিই।  অনেক বাধাবিঘ্ন ছিল।  অনেকেরই আপত্তি ছিল।  অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থা আপত্তি জানিয়েছে যে বাংলাদেশে আবার এত ব্যাংক দিয়ে কী হবে?  আমরা কিন্তু সেটা শুনিনি।  কারণ দেশটা আমাদের।  আমরা জানি দেশের উন্নতিটা কীভাবে করতে হয়।  আর বিশেষ করে আওয়ামী লীগ এ ব্যাপারে সব সময়ই সচেতন।  সেই কারণে আমি ব্যাপকভাবে এই প্রাইভেট ব্যাংক দিয়ে দিয়েছি।  এতে একদিকে মানুষে কর্মসংস্থান হচ্ছে, অপরদিকে সামাজিক নিরাপত্তামূলক সহযোগিতা হচ্ছে।  এছাড়া আমাদের সরকারি ব্যাংক তো পড়েই থাকে।  তারা কিন্তু করে যাচ্ছে।  যার ফলে আমি বলবো, যেকোনও দুর্যোগে মানুষের পাশে দাঁড়ানোটা আমাদের জন্য সহজ হচ্ছে’।
ব্যাংকের ঋণে উন্নয়ন প্রকল্প
সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমাদের নিজেদের অনেক উন্নয়নের কাজ যেন আমরা অন্যের কাছ থেকে ধার না এনে নিজেদের অর্থায়নে করতে পারি বা আমরা আমাদের ব্যাংকের থেকে লোন দিয়েই কাজ করাতে পারি।  যাতে আর বাইরে যেতে না হয়।  অন্তত কিছু কাজ আমরা নিজেরা করবো।  তারও একটা ব্যবস্থা নিয়েছি।  খুব তাড়াতাড়ি এ ব্যাপারে বিস্তারিত আপনারা জানতে পারবেন।  আমি সিদ্ধান্ত দিয়ে দিয়েছি।  এখন প্রস্তুতি চলছে।  বাংলাদেশ নিজের পায়ে দাঁড়াবে, স্বাবলম্বী হবে।  কারও কাছে ধার করে না, কারও কাছে হাত পেতে না।  আমরা মর্যাদাশীল জাতি হিসেবে বিশ্বে সম্মান নিয়ে চলবো’।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি সব সময় মনে করি যে একটা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে সরকারের যেমন দায়িত্ব, তেমনি বেসরকারি খাতও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।  সেজন্য সেই ১৯৯৬ সালে যখন সরকারে এসেছি তখন থেকেই বেসরকারি খাতকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে যাচ্ছি এবং সব ধরনের কাজ করার ব্যাপক সুযোগ আমরা করে দিচ্ছি।  বিভিন্ন ক্ষেত্র প্রস্তুত করে দিচ্ছি।  কাজেই আপনারা সেভাবে দায়িত্ব পালন করবেন’।
করোনার সেকেন্ড ওয়েভ নিয়ে সচেতনতার আহ্বান
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করোনা এখন আমরা অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আনলেও আপনারা দেখেছেন ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে আবার করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দিচ্ছে।  সেক্ষেত্রে আমাদের এখন থেকেই সচেতন হতে হবে।  ইতোমধ্যে আমরা কিন্তু এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছি।  সবাইকে আহ্বান করছি, আপনার একটু সচেতন হোন।  সবাই নিজেকে ও অন্যকে সুরক্ষিত করুন।  আমরা যেন এই করোনার প্রাদুর্ভাব থেকে মানুষকে বাঁচাতে পারি সেদিকে আমরা বিশেষভাবে দৃষ্টি দিচ্ছি।  সরকার এই ভাইরাস প্রতিরোধে প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে।  এর ফলে আমাদের অর্থনীতির ওপর যেন কোনো রকম প্রভাব না পড়ে, মানুষের জীবনযাত্রা যেন ঠিক থাকে।  আর আমাদের অর্থনীতির চাকা যেন সচল থাকে, আমরা সে চেষ্টা করছি’।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ