দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
অদক্ষ মানুষকে চট্টগ্রাম বন্দরের দায়িত্ব দিতে চান না বলে জানিয়েছেন নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। রবিবার (২০ ডিসেম্বর) বেলা ২ টায় শহীদ ফজলুর রহমান মুন্সী অডিটোরিয়ামে চট্টগ্রাম বন্দরের ১৪তম উপদেষ্টা কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে তিনি এসব কথা বলেন।
নিয়োগ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের উত্তরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, চট্টগ্রাম বাংলাদেশকে রিপ্রেজেন্ট করে। বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেয় হচ্ছে চট্টগ্রাম। এখানে আঞ্চলিকতার কোনো বিষয় নেই। কারণ চট্টগ্রাম তো সমগ্র বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিচ্ছে। আমরা চট্টগ্রামের দিকে তাকিয়ে থাকি। আমি দিনাজপুরের মানুষ, চট্টগ্রামের দিকে তাকিয়ে থাকি। চট্টগ্রামের মানুষের যদি আমি সহানুভূতি না পাই তাহলে দিনাজপুর আটকে যাবে। কিন্তু দিনাজপুরের মানুষের সহানুভূতি না পেলে চট্টগ্রাম আটকাবে না। আমাদের সংসদ সদস্যরা, মন্ত্রীরা নিয়োগের বিষয়টি এনেছেন আলোচনায়।
আমি দায়িত্ব নেওয়ার সময় বলেছি, চাকরির ক্ষেত্রে বন্দর, নদী, সমুদ্রকেন্দ্রিক প্রতিষ্ঠানে উপকূলীয় অঞ্চলের জনগোষ্ঠীকে প্রাধান্য দিতে হবে। আমরা সেই নীতিতে বিশ্বাসী আছি। এ নীতিতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ নিয়োগ প্রক্রিয়াগুলো চালু রাখে। তবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার একটা কথা আছে- আগে যেমন বিনা অভিজ্ঞতায়, বিনা দক্ষতায়, কোনো ধরনের জ্ঞান ছাড়াই বিভিন্ন চেয়ারে বসা যেত, বিভিন্ন কাজে যুক্ত হওয়া যেত সেটি এখন সম্ভব নয়। যোগ্যতার পরিচয় দিতে হবে। অভিবাসী দিবসে বলা হয়েছে-দক্ষ হয়ে বিদেশ যান। আগে একটা শরীর নিয়ে দেশের বাইরে কাজ করতে যেতাম, এখন দক্ষতা অর্জন করে যেতে হচ্ছে। কাজেই দক্ষতা মূল বিষয়। আমরা অদক্ষ মানুষকে চট্টগ্রাম বন্দরের দায়িত্ব দিতে চাই না। সেভাবে নিয়োগগুলো দিতে চাই না। তবে অবশ্যই চট্টগ্রামের মানুষের, উপকূলীয় মানুষের অনুভূতির সঙ্গে, চিন্তা-ভাবনার সঙ্গে একমত আছি। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ যথাযথভাবে প্রতিপালন করবে।
চট্টগ্রাম বন্দর সংশ্লিষ্ট সড়কগুলো উন্নয়নে ব্যবস্থা নেবে। বন্দরের কোভিড হাসপাতাল আধুনিকায়ন করা হবে। বন্দর স্টেডিয়ামকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার আলোচনা হয়েছে।
নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী বলেন, কর্ণফুলী নদীর ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের ডিপিপি এবং রিভাইস ডিপিপি করা হচ্ছে। কর্ণফুলী ড্রেজিং করতে যে ধরনের ইক্যুইপমেন্ট দরকার সেগুলো আমরা সংগ্রহ করছি। বন্দর কর্তৃপক্ষ সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নিচ্ছে। চট্টগ্রাম বন্দর চালু রাখতে গেলে আমাদের ড্রেজিং করতে হবে। চট্টগ্রাম বন্দর এখন পর্যন্ত চালু আছে। চট্টগ্রাম বন্দর কিন্তু দিন দিন এগিয়ে যাচ্ছে। ২০১৯ সালে কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে ৬৪তম স্থানে, ২০২০ সালে এসেছি ৫৮তম জায়গায়। আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। আজকের উপদেষ্টা কমিটির সভায় চট্টগ্রাম বন্দরের সমস্যা, এগিয়ে যাওয়ার কথা হয়েছে। যত অংশীজন আছে সবাই কথা বলেছে। তারা প্রস্তাবনা দিয়েছে সেগুলো লিপিবদ্ধ হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের পোর্ট লিমিট বাড়ানো হয়েছে, মাতারবাড়ী পর্যন্ত চলে গেছে, মিরসরাই পর্যন্ত চলে গেছে। বন্দরের সক্ষমতা বাড়ছে। বিদেশি বিনিয়োগ আসছে। বন্দর স্বমহিমায় উদ্ভাসিত হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরকে বাংলাদেশের অর্থনীতির লাইফলাইন বলা যায়। এর ব্যত্যয় ঘটেনি। কারণ আশঙ্কার কিছু নেই। বিশ্বের সেরা ১০০ কনটেইনার বন্দরের তালিকায় চট্টগ্রাম বন্দরকে ৫৮ থেকে ৩০ এ আনার লক্ষ্যে কাজ করছি।
একটি নেতিবাচক সংবাদ মানুষকে হতাশ করে। মানুষ এখন আশাবাদী। এখন নিয়োগের ক্ষেত্রে জাল করে ধরা পড়ে। আগে নিয়োগ হয়ে যেত। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করবো।
তিনি বলেন, বে-টার্মিনালে অনেক আগ্রহী বিদেশি বিনিয়োগকারী আছে। সমঝোতা হলে চূড়ান্ত হবে।
এ সময় শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, নৌসচিব মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী, সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সূত্র জানায়, উপদেষ্টা কমিটির সভায় বন্দরের ২০ কিলোমিটারের মধ্যে বেসরকারি কনটেইনার ডিপো বা অফডক সরানো, অফডকের বিভিন্ন সেবার বিল কমানো, বন্দরের নিলাম ও মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য ধ্বংস কার্যক্রম জোরদার করা, যানজট, বন্দরের বিশেষায়িত হাসপাতাল, টোল রোড, বন্দরের স্টেক হোল্ডার ও বাণিজ্য সংগঠনের প্রস্তাবনা ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
ডিসি/এসআইকে/এমএসএ