৪ বছর আগে মেয়াদোত্তীর্ণ জাহাজ এখন বিলাসবহুল প্রমোদতরী !

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
গত চার বছর আগে চলাচল অনুপোযোগী হয়ে যাওয়া জাপানে তৈরিকৃত এক সময়ের সালভিয়া মারুকে ঘষামাজা করে বিলাসবহুল প্রমোদতরী ‘বে ওয়ান ক্রুজ’ হিসেবে চট্টগ্রাম থেকে সেন্টমার্টিন রুটে চালু করেছে কর্তৃপক্ষ।  এটির বয়স বর্তমানে ২৯ বছর।  ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব ক্লাসিফিকেশন সোসাইটিস’র নীতিমালা অনুযায়ী- যেকোনো জাহাজের গড় আয়ু নির্ধারণ করা হয়েছে সর্বোচ্চ ২৫ বছর।  সেই হিসেবে জাহাজটির লাইফ টাইম শেষ হয়েছে সেই ৪ বছর আগে।
আয়ুষ্কালের তথ্য গোপন করে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে বিলাসবহুল ভাব লাগিয়ে সাগর পথে যাতায়াত করছে বে-ওয়ান ক্রুজ।  আর এ কারণেই কর্ণফুলী শিপিং ইয়ার্ডের মালিকানাধীন চাকচিক্য এই প্রমোদতরী নিয়ে সমুদ্র পথে ভ্রমণ বিলাসীদের মাঝে সৃষ্টি হয়েছে সংশয়-শঙ্কা!
মেয়াদোত্তীর্ণের তথ্য গোপন করে সাগরে চলাচলের অনুমোদন নেয়া এই জাহাজের ক্যাপ্টেন মাসুক হাসান অবশ্য দাবি করেছেন- এটির বয়স ২৮ বছর।  অন্যদিকে একই জাহাজের বয়স ২৬ বছর বলে দাবি করেছেন জাহাজের মালিক কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এম এ রশিদ।
জানা গেছে, বে ওয়ান ক্রুজটির মূল নির্মাতা প্রতিষ্ঠান জাপানের মিতশুবিশি হেভি ইন্ড্রাস্টিজ লিমিটেড।  ১৯৯২ সালে সালভিয়া মারু নামে জাহাজটি আত্মপ্রকাশ করে।  সে অনুযায়ী ইতোমধ্যে ২৯ বছর অতিক্রম করেছে জাহাজটি।  অথচ একটি জাহাজ তৈরিকাল থেকে ২৫ বছর পর আর ফিটনেস থাকেনা।  এছাড়া কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্স লিমিটেড এই জাহাজটি নিবন্ধনের জন্য বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনে যে আবেদনপত্র জমা দিয়েছে সে আবেদন পত্রেও এড়িয়ে গেছেন আয়ুষ্কালের বিষয়টি।  শিপিং কর্পোরেশনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে লিখিত কোনো মতামত না দিয়ে কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্স লিমিটেডকে বে ওয়ান ক্রুজ চলাচলের অনুমোদন দেয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের পরিচালক (কারিগরি) প্রকৌশলী বলেন, একটি নতুন জাহাজের লাইফ টাইম হচ্ছে ২৫ বছর।  এর পর জাহাজটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়।  মেয়াদোত্তীর্ণ এসব জাহাজ যেকোনো সময় দুর্ঘটনায় পতিত হতে পারে বলেও জানান তিনি।
মেয়াদোত্তীর্ণ একটি জাহাজ নিয়ে সমুদ্রে যাতায়াত ঝুঁকিপূর্ণ কী না জানতে চাইলে বে ওয়ান ক্রুজ প্রমোদতরীর ক্যাপ্টেন মাসুক হাসান সংবাদমাধ্যমকে বলেন, বে ওয়ান ক্রুজ কিছুটা পুরোনো হলেও সমুদ্রে চলার উপযোগী।  ইতোমধ্যে জাহাজে মেকানিক্যাল অনেক কাজ করে সমুদ্রে চলাচলের উপযোগী করে তোলা হয়েছে।  জাহাজটি কত বছরের পুরনো- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই জাহাজের বয়স ২৮ বছর।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এম এ রশিদ সংবাদমাধ্যমকে জানান, কোনো জাহাজ সমুদ্রে চলার উপযোগী কি না এই বিষয়টি প্রতি ৫ বছর পর পর পরীক্ষা করে সনদ দেন ‘ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব ক্লাসিফিকেশন সোসাইটিস’- এমন প্রশ্নের জবাবে জাহাজটির মালিক প্রকৌশলী এম এ রশিদ বলেন, আপনি জাহাজে এসে দেখে যান, তারপর প্রশ্ন করেন।  জাহাজটি কত বছরের পুরনো- এমন প্রশ্নের জবাবে প্রকৌশলী এম এ রশিদ বলেন, এই জাহাজের বয়স ২৬ বছর।  অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জাহাজটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার কোনো কারণ নেই।
কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’র (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি এসএম নাজের হোসাইন বলেন, যদি চার বছর আগে বে ওয়ান ক্রুজের মেয়াদ শেষ হয়ে থাকে সে ক্ষেত্রে সাগর পথে চলাচলে এ জাহাজ অনিরাপদ ও ঝুঁকিপূর্ণ।  সাগরে চলার পথে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে দায় কে নিবে?  তখনই প্রশ্ন আসবে এটি ফিটনেস আছে কি না?  কারা অনুমোদন দিয়েছে?  তবে এ বিষয়গুলো খুব গুরুত্বের সাথে খতিয়ে দেখা উচিৎ কোনো দুর্ঘটনা ঘটার আগেই। সূত্র- সিটিজি নিউজ

ডিসি/এসআইকে/এমএনইউ