চা বোর্ডে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি গ্যালারি ও কর্ণার উদ্বোধন করলেন বাণিজ্যমন্ত্রী

নগর প্রতিবেদক, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
চট্টগ্রাম নগরের বায়েজিদস্থ নাসিরাবাদে বাংলাদেশ চা বোর্ডের প্রধান কার্যালয়ে ‘বঙ্গবন্ধু স্মৃতি গ্যালারি’ ও ‘বঙ্গবন্ধু কর্ণার’ উদ্বোধন করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।  বৃহস্পতিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে গ্যালারি ও কর্ণার উদ্বোধন করেন তিনি।
সরেজমিনে দেখা যায়, গ্যালারির কেন্দ্রে বঙ্গবন্ধুর ছবি স্থাপনের মাধ্যমে জাতির পিতাকে একটি সূর্য হিসেবে কল্পনা করা হয়েছে।  সূর্যের দ্যুতি যেমন চারপাশকে আলোকিত করে তেমনি ১৯৪০ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবন ও কর্ম যেভাবে বাঙালি জাতিকে আলোকিত এবং উদ্ভাসিত করেছে তা তুলে ধরা হয়েছে গ্যালারিতে।  গ্যালারিকে মূলত দুটি অংশে ভাগ করা হয়েছে।  গ্যালারির বাম অংশে ১৯৪০ থেকে ১৯৬০ সালে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবন ও চা বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে অবদান তুলে ধরা হয়েছে।
গ্যালারির ডান অংশে ১৯৬৬ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবন ও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে চা শিল্পে বঙ্গবন্ধুর অবদান উপস্থাপন করা হয়েছে।  গ্যালারি, গ্যালারির সিলিং এবং কর্ণারে মোট ৪টি রং ব্যবহার করা হয়েছে।  সিলিংয়ের সোনালি রং এবং গ্যালারির উজ্জ্বল হলুদ রং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলার প্রতিচ্ছবি।  গ্যালারির সবুজ রং সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা সবুজ বাংলার প্রতিচ্ছবি।  গ্যালারি ও কর্ণারে ব্যবহৃত সাদা রং শান্তির প্রতীক এবং গ্যালারিতে ব্যবহৃত বাদামি রঙের মাধ্যমে দেশমাতৃকার মাটির প্রতিফলন ঘটানো হয়েছে।  বঙ্গবন্ধু স্মৃতি গ্যালারির অংশ হিসেবে বঙ্গবন্ধুর ব্যবহৃত চেয়ার ও টেবিলের ক্ষুদ্র প্রতিকৃতি রাখা হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চা বোর্ডের চেয়ারম্যান থাকাকালীন মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার নন্দরানী চা বাগান পরিদর্শনকালে চেয়ারটিতে বসেছিলেন।  মূল চেয়ারটি বর্তমানে শ্রীমঙ্গল উপজেলার বাংলাদেশ চা বোর্ডের পরিচালনাধীন টি রিসোর্ট অ্যান্ড মিউজিয়ামে সংরক্ষিত রয়েছে।  এ ছাড়া চা বোর্ডের চেয়ারম্যান থাকাকালীন দাপ্তরিক কাজে বর্ণিত টেবিলটি বঙ্গবন্ধু ব্যবহার করতেন।  মূল টেবিলটি বর্তমানে মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলায় বাংলাদেশ চা বোর্ডের পরিচালনাধীন টি রিসোর্ট অ্যান্ড মিউজিয়ামে সংরক্ষিত রয়েছে।
‘বঙ্গবন্ধু স্মৃতি গ্যালারি’ ও ‘বঙ্গবন্ধু কর্ণার’ সম্পর্কিত তথ্য উপস্থাপনা করেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ও বাংলাদেশ চা বোর্ডের প্রথম নারী সদস্য ড. নাজনীন কাউসার চৌধুরী।
উদ্বোধনের সময় বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু চা বোর্ডে যোগদানের দিনটিকে চা দিবস ঘোষণা করা হয়েছে।  তিনি প্রথম বাঙালি যিনি চেয়ারম্যানের চেয়ারে বসেছিলেন।  তিনি অসংখ্য ভালো কথা বলে গেছেন।  বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিচারণ করে টিপু মুনশি বলেন, ছাত্র রাজনীতি করার সুবাদে দেখা হয়েছে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে।  ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধুকে মালা পরাতে গেলাম।  তিনি আমাকে বলেছিলেন, তুই মালাটা প্যাঁচ দিয়ে দে।  বুঝতেই দিল না সুতা ছিঁড়ে গেছে।  খুব সহজে কাছে টেনে নিতেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. জাফর উদ্দিন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দিক-নির্দেশনায়, মন্ত্রী স্যারের নেতৃত্বে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আমরা কাজ করছি।  গ্যালারির প্রশংসা করে সচিব বলেন, এ গ্যালারি ব্যতিক্রম হয়েছে।  এক্সিলেন্ট প্রেজেনটেশনের জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ।  আমি বঙ্গবন্ধুকে দেখার সুযোগ পাইনি।  তাই মন্ত্রী মহোদয়ের মুখে স্মৃতিচারণ শুনতে চাই।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. জহিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চা বোর্ডের প্রথম বাঙালি চেয়ারম্যান হিসেবে ১৯৫৭ সালের ৪ জুন থেকে ১৯৫৮ সালের ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।  চা শিল্পে বঙ্গবন্ধুর অবদান অবিস্মরণীয় করে রাখতে মুজিব জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের অন্যতম প্রধান কার্যক্রম হিসেবে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি গ্যালারি ও বঙ্গবন্ধু কর্ণার করা হয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. হাফিজুর রহমান, চা বোর্ডের সদস্য মোহাম্মদ নুরুল আলম চৌধুরী, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আব্দুর রহিম খান প্রমুখ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
উদ্বোধন অনুষ্ঠান শেষে মন্ত্রী ও অতিথিরা চা শিল্পের অংশীজনের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।  এর আগে দুপুর ১২ টায় নগরের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে ‘ই-বাণিজ্য করবো, নিজের ব্যবসা গড়বো’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগদেন বাণিজ্যমন্ত্রী।  এ সময় চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মো. মাহবুবুল আলমসহ ব্যবসায়ী নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

ডিসি/এসআইকে/আরএআর