লকডাউনের ঘোষণা : অস্থির হয়ে উঠলো নিত্যপণ্যের বাজার

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
রমজান আসছে বলে কিছু কিছু পণ্যের দাম বাড়ছিল, এবার লকডাউনের ঘোষণা আসার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আরও অস্থির হয়ে উঠেছে নিত্যপণ্যের বাজার।  সরকারের কোনো হুমকি-ধামকি কাজে আসেনি।  স্বভাবগতভাবেই এক শ্রেণির ক্রেতার যেমন ভিড় লেগেছে বাজারসহ পাড়ামহল্লার দোকানে, সেই সুযোগটি লুফে নিচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীরাও।  এখন চলছে চাল, ডাল, তেল, পেঁয়াজসহ নিত্যপণ্য কেনাকাটার ধুম।  লকডাউন শুরু হলে সব কিছু বন্ধ হয়ে যাবে- এ আশঙ্কায় নিত্যপণ্য মজুতের যেন প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে।
প্রতিবছর রমজান এলেই একশ্রেণির ব্যবসায়ী নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বাড়িয়ে দেয়, যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।  এ বিষয়ে সরকার সতর্ক রয়েছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। শনিবার (৩ এপ্রিল) সকালে তিনি তার সরকারি বাসভবনে ব্রিফিংয়ের এই কথা বলার সঙ্গে লকডাউন দেওয়ার তথ্যও জানান।  এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বাজার নতুন করে অস্থির হয়ে উঠেছে।
ওবায়দুল কাদের হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, ‘বাজার অস্থির করার যে কোনও অপপ্রয়াস সরকার মেনে নেবে না।  অহেতুক মূল্যবৃদ্ধি ও মজুতদারি নিয়ন্ত্রণে সরকার সতর্ক।  ইতোমধ্যে সরকার নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে।  কোনো ধরনের সিন্ডিকেটের কাছে সরকার বাজার ব্যবস্থাকে জিম্মি হতে দেবে না’।  সরকার তথা মন্ত্রীর এসব হুঁশিয়ারিকে তোয়াক্কা না করেই বেড়ে গেছে তেল, পেঁয়াজ, সবজি, ডিম, আলুসহ সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম।  সরকার নির্ধারিত দামে কখনোই কোনো পণ্য বিক্রি হয়নি বলে জানিয়েছেন ক্রেতারা।
জানা গেছে, আজ শনিবার সকালে ৩৫ টাকা কেজি দরের দেশি পেঁয়াজ বিকালে বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়।  স্থান ভেদে তা ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলেও জানা গেছে।  চালের দাম আগে থেকেই সরকারের সব মেকানিজমকে ব্যর্থ করে দিয়ে চলে গেছে নিয়ন্ত্রণের বাইরে।  ৫৫ টাকার নিচে খাওয়ার উপযোগী মোটা চাল নেই।  ৭০ টাকার নিচে নেই চিকন চাল।  লকডাউনের এক ঘোষণায় প্রতি ডজন ডিমে দাম বেড়েছে ১৫ টাকা।  আন্তর্জাতিক বাজারদরের দোহাই দিয়ে ভোজ্যতেল বিশেষ করে সয়াবিন তেল আগে থেকেই বেশি দামে বিক্রি করছে কোম্পানিগুলো।  এমন পরিস্থিতিতে সরবরাহ সংকটের কথা বলে বাড়তি সুযোগ নিচ্ছে ব্যবসায়ীরা।  ১৪০ টাকা লিটার দরের সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৫২ টাকা লিটার দরে।  আশঙ্কা করা হচ্ছে লকডাউন ঘনিয়ে এলে দাম আরও বাড়তে পারে।
লকডাউনের সংবাদ পেয়ে আটকে পড়ার ভয়ে গ্রামের বাড়ি ছুটছেন নগরবাসী, বিশেষ করে দিনমজুর শ্রেণির মানুষজন।  এই সুযোগে দূরপাল্লায় বাসভাড়া দ্বিগুণ আদায় করার খবরও পাওয়া গেছে।  দুর্যোগের মধ্যে জনগণের দুর্ভোগ বাড়াচ্ছেন পরিবহন ব্যবসায়ীরা।
অপরদিকে রোজা ও ঈদকে সামনে রেখে লকডাউনের এক সপ্তাহ দিনে অন্তত চার ঘণ্টার জন্য ব্যবহারিক বিলাসী পণ্যের পাইকারি দোকান খোলা রাখার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি।  শনিবার (৩ এপ্রিল) সারাদেশে লকডাউন ঘোষণার পর তারা এই দাবি জানিয়েছেন।  সংগঠনের সভাপতি ও ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই’র সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি হেলাল উদ্দিন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।  তিনি বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমি জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন ও প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মুখ্য সচিব ড. আহমেদ কায়কাউসের সঙ্গে কথা বলে দাবিটি জানিয়েছি।  তারা বিষয়টি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করছেন বলে আমাকে জানিয়েছেন’।
কারণ ব্যাখ্যা করে হেলাল উদ্দিন জানিয়েছেন, ‘যেহেতু গত রমজান এবং ঈদে দেশের সব মার্কেট বন্ধ ছিল একই লকডাউনের কারণে, এবারও যদি বন্ধ থাকে তাহলে বিলাসী পণ্য বিশেষ করে ঈদের জামাকাপড়, কসমেটিকসের মতো পণ্যের ব্যবসায়ীরা মাঠে মারা যাবেন।  আপাতত এসব পণ্যের পাইকারি মার্কেট খোলা রাখার অনুমতি চাই আমরা।  কারণ এই মুহূর্তে এসব পণ্যের খুচরা বিক্রি শুরু হয়নি।  চলছে পাইকারি পর্যায়ের বিক্রি।  তাই আমরা এই সুযোগটি দৈনিক মাত্র চার ঘণ্টার জন্য চেয়েছি’।
এদিকে দেশের অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে লকডাউনেও অভিযান চালানোর ঘোষণা দিয়েছে র‌্যাব।  করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ায় আগামি সোমবার (৫ এপ্রিল) থেকে সারাদেশে লকডাউন ঘোষণা করতে যাচ্ছে সরকার।  এসময়ে যাতে অসাধু চক্র সুবিধা নিতে না পারে সেজন্য লকডাউনেও গোয়েন্দা নজরদারি ও র‌্যাবের অভিযান অব্যাহত থাকবে।  র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, ‘লকডাউনের সুযোগ নিয়ে যাতে কোনও অসাধু চক্র জিনিসপত্রের দাম বাড়াতে না পারে সেই লক্ষ্য নিয়ে র‌্যাব মাঠে থাকবে।  র‌্যাবের গোয়েন্দা নজরদারিও থাকবে’।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কাওরানবাজারের নিত্যপণ্যের পাইকারি ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম লালমিয়া জানিয়েছেন, ‘এখন চলছে রোজার বেচাকেনা।  রোজা উপলক্ষে রাজধানীর খুচরা ব্যবসায়ীরা পণ্যের মজুদ গড়ছেন।  এমন সময় লকডাউনের ঘোষণায় শনিবার দুপুরের পর থেকে পণ্যের বেচাকেনা বেড়েছে কয়েকগুণ।  খুচরা ব্যবসায়ীদের অভিমত, যেহেতু লকডাউনে নিত্যপণ্যের দোকান খোলা থাকবে, কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ থাকবে, সেসময় পরিবহন খরচও বাড়বে।  তাই আগেভাগেই অতিরিক্ত পণ্য কিনে রাখছেন তারা’।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানিয়েছেন, ‘বাজারে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে।  চলবে গোয়েন্দা নজরদারি।  আতঙ্কিত হয়ে ক্রেতাদের প্রয়োজনের অতিরিক্ত পণ্য না কেনার পরামর্শ দিচ্ছি।  আতঙ্কিত হবেন না।  কোনো পণ্যেরই ঘাটতি নাই।  দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণের নিত্যপণ্য মজুদ রয়েছে’।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ