লকডাউনে খোলা থাকবে নিত্যপণ্যের দোকান, অযথা বাড়তি পণ্য কেনা থেকে বিরত থাকুন

বিশেষ প্রতিবেদক, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
রাত পোহালেই শুরু লকডাউন।  লকডাউনের পরপরই শুরু পবিত্র মাহে রমজান।  তার আগে এক সপ্তাহের লকডাউনের ঘোষণায় সাধারণ মানুষের মাঝে নানান বিষয়ে প্রশ্ন, ক্ষোভ, হতাশা আর অভিযোগের পাহাড় জমেছে।  ভীড় বেড়েছে নিত্য পণ্যের বাজারে।  লকডাউন ঈদ পর্যন্ত বাড়তে পারে, পণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যেতে পারে, লকডাউনে দোকানপাট বন্ধ থাকবে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মানুষকে বাইরে বের হতে দেবে না- ইত্যাদি নানান শঙ্কায় নিত্যপণ্যের দোকান আর কাঁচাবাজারগুলোতে সাধারণ মানুষের ভীর বেড়েছে।  সংকটকাল আসতে পারে ভেবে প্রয়োজনের অতিরিক্ত পণ্য মজুদ করে রাখার প্রবণতা থেকেই এ ভীড়।  আতঙ্ক আছে সামনের দিনগুলোতে দাম কোথায় গিয়ে ঠেকে তা নিয়ে।  চলছে চাল, ডাল, তেল, পেঁয়াজসহ নিত্যপণ্য কেনাকাটায় হুড়োহুড়ি।  সরকারের পক্ষ থেকে আশ্বস্থ করে বলা হয়েছে, কোনো পণ্যের ঘাটতি নেই, রয়েছে পর্যাপ্ত মজুদও।  লকডাউন শুরু হলে এসব পণ্যের সরবরাহ বন্ধ হওয়ার কোনো আশঙ্কাও নেই।  এরপরও এমন ভীড়ে নিত্যপণ্য কিনতে কোনো বিবেচনাই করছেন না ক্রেতারা।  ক্রেতাদের এ মজুদ প্রবণতার ফলে কতিপয় ব্যবসায়ীরাও নানান সংকটের গুজব ছড়াচ্ছেন।  এমন পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষদের প্রয়োজনের অতিরিক্ত পণ্য না কিনতে অনুরোধ করেছেন প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও ব্যক্তিবর্গ।
সরকার লকডাউন বাস্তবায়নে যে নির্দেশনা দিয়েছে সেখানে বলা হয়েছে- ‘নিত্যপণ্যের দোকান আর কাঁচাবাজার লকডাউনের আওতামুক্ত থাকবে। নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে উন্মুক্ত স্থানে কাঁচাবাজার খোলা থাকবে। নিত্যপণ্যের দোকানগুলো সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত খোলা থাকবে’।  মানুষও প্রয়োজন অনুসারে প্রয়োজনীয় কাজ সারতে ঘর থেকে বেরুতে পারবেন।  সন্ধ্যা ৬টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত অযথা কেউ বাইরে থাকতে পারবেন না।  তবে, যুক্তিসংগত জরুরি প্রয়োজনে বাইরে আসা ব্যক্তিরা কাজ সারতে পারবেন।  কিন্তু অনেকেই লকডাউনে সব বন্ধ থাকবে- এমন গুজব ছড়িয়ে একটা অস্থিরতার সৃষ্টি করছেন।
এই প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এর সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, সরকার তো গ্রোসারি শপ বন্ধ থাকবে বলেনি।  প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে তো অসুবিধা নেই।  হঠাৎ করে বেশি পণ্য কেনা ক্রাইসিস সৃষ্টির চেষ্টা।  এটা উচিত নয়।  মানুষ ভুল করে, বিভ্রান্তিতে পরে এসব করছে।  এই ভুল শোধরানো দরকার।  বাজারে তো কোনো পণ্যের সংকট নেই।  সাপ্লাই চেইন ঠিক আছে।  এ অবস্থায় বেশি পণ্য কেনাকে নিরুৎসাহিত করা দরকার।  বাজারে যখন পণ্য কিনতে পারবে তখন একসাথে বেশি পণ্য কেনার কি দরকার।  মানুষ এ ভুল কেন করে?  গতবারও এমন ভুল করে অনেক পণ্য নষ্ট করেছে।  এটা থেকে বের হওয়া উচিত।
তিনি বলেন, একসাথে বেশি পণ্য কিনে সেটা নষ্ট করে।  ঘরে রাখায় অনেক পণ্য নষ্ট হয়ে যায়।  একসাথে বেশি পণ্য দেয়াটাই উচিত নয়।  সোমবার (৫ এপ্রিল) গ্রোসারি ব্যবসায়ীদের সাথে আমাদের মিটিং আছে, সেখানে বিষয়টি আলোচনা করবো।  বেশি পণ্য কিনে সেটা নষ্ট করতে দেয়া উচিত নয়।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, চট্টগ্রাম জেলার সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান বলেন, ক্রেতাদের কাছে আমরা শুধু অনুরোধ করতে পারি যেন কেউ অতিরিক্ত পণ্য না কিনেন।  বাজারে বর্তমানে প্রত্যেকটা পণ্যের দাম কমতে শুরু করেছে।  আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিনের দাম কমছে, চিনির দাম কমছে।  গতবারের চেয়ে এবার ছোলার দামও কম থাকবে।  এ মুহুর্তে কোনো পণ্য কিনে মজুদ করে রাখার কোনো প্রয়োজন নেই। লকডাউন হলেও কাঁচাবাজার খোলা থাকছে।  যখন প্রয়োজন পণ্য কেনা যাচ্ছে।  একবারে অনেক পণ্য বা প্রয়োজনের অতিরিক্ত পণ্য কেনার দরকার পড়ছে না।  ক্রেতারা অতিরিক্ত পণ্য কিনলে সেটাতে বাজারে প্রভাব পড়ে।
তিনি বলেন, আমাদের কাছে তথ্য আছে বাজারে এ মুহুর্তে প্রত্যেকটা পণ্যের আমদানি, মজুদ, সরবরাহ ঠিক আছে।  মজুদ করার কোনো প্রয়োজন নেই।  যদিও কোনো ক্রেতা বেশি পণ্য কিনলে সেটাতে আমাদের করার কিছু থাকে না।  আমরা শুধু অনুরোধ করতে পারি, যেন বেশি পণ্য কিনে স্টক না করেন।  যদি কোনো ব্যবসায়ী কিনে মজুদ করে তাহলে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারি।  যেহেতু পণ্যগুলো সব সময় পাবে তাই মজুদ করে রাখার কোনো প্রয়োজন নেই।  যখন দরকার পড়বে তখন বাজার থেকে নিতে নিতে পারবে।
তিনি বলেন, আমরা আজকেও (রবিবার) রিয়াজউদ্দিন বাজারে গিয়েছি। সেখানে ক্রেতাদের অনুরোধ করেছি যেন প্রয়োজনের অতিরিক্ত পণ্য না কিনেন।  টিসিবির ট্রাক সেল পরিদর্শন করেছি।  সেখানেও বলেছি, যাতে বেশি পণ্য নেয়ার চেষ্টা যেন না করে।  প্রতিদিন ট্রাকসেল থাকবে।  প্রতিদিন পণ্য পাবে।  একদিনে এতো বেশি পণ্য কেনার প্রয়োজন পড়বে না।
কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এসএম নাজের হোসাইন বলেন, আতঙ্কিত হয়ে বেশি পণ্য কেনার প্রয়োজন নেই।  গতবারও মানুষ শুরুতে অনেক পণ্য কিনেছিল।  পরে অনেক পণ্য নষ্ট হয়েছে।  একজন বেশি পণ্য কিনলে আরেকজনের সমস্যা হবে।  বেশি কেনাতে পণ্যের চাহিদা বাড়বে সে সুযোগে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়াবে।  এ সময়ে বেশি কেনাকাটা পরিহার করতে আমরা ভোক্তাদের অনুরোধ করছি।
তিনি বলেন, যেতেতু মজুদ নিয়ে কোনো আশঙ্কা নেই, পণ্য না পাওয়ারও কোনো আশঙ্কা নেই। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যগুলোর লকডাউনের আওতার বাইরে রাখা হয়েছে। যে কোনো মুহুর্তে এসব পণ্য কেনা যাবে। স্টক করার কোনো প্রয়োজন নেই।
নাজের হোসাইন বলেন, মজুদ ধর্মীয় দৃষ্টিতেও নিষিদ্ধ।  এখন সুখ, দুঃখ ভাগ করার সময়।  সংকটকালিন এ মুহুর্তে প্রত্যেকের কথা চিন্তা করতে হবে।  আমার আর্থিক ক্ষমতা আছে বলে বেশি কিনে নিলাম কিন্তু আমার আরেক ভাইয়ের অবস্থা কি হবে সেটা চিন্তা করতে হবে।  এখন সবাইকে একে অপরের সমর্থন-সহযোগিতা দিতে হবে।  স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।
গতবারের অভিজ্ঞতা জানিয়ে নাজের হোসাইন বলেন, গতবছর লকডাউনের আগে অনেক ছোলা, সয়াবিন তেল, পেঁয়াজ এসব বেশি করে কিনে মজুদ করে।  হঠাৎ করে পণ্যের দাম বেড়ে গিয়েছিল।  পরে এসে সবগুলো পণ্যের দাম কমে যায়।  এবার প্রত্যেকটা পণ্যের মজুদ ও সরবরাহ স্বাভাবিক আছে।  কিছু পণ্যের দাম কমারও সম্ভাবনা আছে।  মজুদ না করে যতটুকু দরকার ততটুকু পণ্য কেনা উচিত।

ডিসি/এসআইকে/আইএস