যেসব নিত্যপণ্য মানুষের নাগালের বাইরে

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
করোনা মহামারির মধ্যে গত এক বছর ধরে মানুষের আয় না বাড়লেও নিত্যপণ্যের দাম ঠিকই বেড়েছে।  বিশেষ করে ভোজ্যতেল, পেঁয়াজ, রসুন ও হলুদের দাম ক্রেতাদের নাগালের বাইরে চলে গেছে।  গত এক বছরে এই পণ্যগুলোর দাম বেড়েছে ৫০ শতাংশেরও বেশি।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষক ড. জায়েদ বখত বলেন, জিনিসপত্রের দাম বাড়লে সবচেয়ে অসুবিধায় পড়ে সীমিত আয়ের মানুষজন।  এজন্য বাজার মনিটরিংয়ের পাশাপাশি মুনাফাখোরদের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর অবস্থান থাকা জরুরি।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত বছরের এই সময়ে আমদানি করা রসুনের দাম ছিল ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি। সেই রসুনের দাম এখন প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে হয়েছে ১২০ টাকা থেকে ১৩০ টাকা কেজি।  সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবি বলছে, গত এক বছরে আমদানি করা রসুনের দাম বেড়েছে ৬৬ শতাংশের বেশি।  একইভাবে গতবছরের এই সময়ে দেশি হলুদের দাম ছিল ১৪০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা।  এখন সেই হলুদ বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা থেকে ২৮০ টাকা কেজি দরে।  অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে এই পণ্যটির দাম বেড়েছে ৫১ শতাংশেরও বেশি।
এছাড়া ২০২০ সালের এই সময়ে ৬৫ থেকে ৭০ টাকায় এক লিটার খোলা পামঅয়েল পাওয়া যেত। এখন সেই পামঅয়েল বিক্রি হচ্ছে ১০৫ থেকে ১০৮ টাকা দরে। অর্থাৎ এক বছরে পণ্যটির দাম বেড়েছে ৫৭ শতাংশের বেশি। একইভাবে গত বছরে যে পামঅয়েল সুপারের দাম ছিল ৭০ থেকে ৭৫ টাকা। সেই পামঅয়েল এখন বিক্রি হচ্ছে ১২২ টাকা থেকে ১১৬ টাকা লিটার দরে। এই পণ্যটির দাম বেড়েছে ৫৭ শতাংশের বেশি।
এক বছরের ব্যবধানে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৫৪ শতাংশ। গত বছরের এই সময়ে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম ছিল ২৫ টাকা থেকে ৩০ টাকা। এখন সেই পেঁয়াজের দাম ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজি।
এ প্রসঙ্গে রাজধানীর গোপীবাগ এলাকার বাসিন্দা রাকিবুল ইসলাম বলেন, মানুষের যেভাবে আয় বাড়ার কথা, সেভাবে বাড়েনি। কিন্তু জিনিসপত্রের দাম ঠিকি বেড়েছে। বিশেষ করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় সীমিত আয়ের মানুষদের কিছুটা সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে।
এদিকে গত সপ্তাহের তুলনায় এই সপ্তাহে নতুন করে বেড়েছে চালের দাম। সয়াবিন তেলের দাম। আদা, লবঙ্গ, চিনি ও তেজপাতার দাম। তবে গত সপ্তাহের তুলনায় এই সপ্তাহে কিছুটা দাম কমেছে ব্রয়লার মুরগী ও ডিমের।
এছাড়া সবজির দাম রয়েছে আগের মতই। শুক্রবার (৩০ জুলাই) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সবজি ও মাছের বাজার প্রায় স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। প্রতিটি বাজারেই ব্যবসায়ীর সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি পণ্যের সরবরাহ বেড়েছে। যদিও গত সপ্তাহে বেশিরভাগ দোকান বন্ধ ছিল।
ব্যবসায়ীদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আগের মতো এখনও সব থেকে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে গাজর ও টমেটো। মানভেদে গাজর বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১১০ টাকা কেজি। আর পাকা টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকার মধ্যে। এছাড়া ঝিঙে বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি, করলা ৫০ থেকে ৬০ টাকা, চিচিঙ্গা ৩০ থেকে ৪০ টাকা, পটল ২০ থেকে ৩০ টাকা, কাঁচা পেঁপে ২৫ থেকে ৩০ টাকা এবং কাঁচকলার হালি বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকার মধ্যে।
আগের মতো ঢেঁড়স বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকার মধ্যে। বরবটি ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। এক পোয়া (২৫০ গ্রাম) কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ টাকা। আলু বিক্রি হচ্ছে ২৫ টাকা কেজি। রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৩৮০ টাকা কেজি, মৃগেল ২২০ থেকে ২৫০ টাকা, তেলাপিয়া ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা আর পাবদা বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৬০০ টাকা কেজিতে।
গরুর মাংস আগের মতোই ৫৮০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ৯৫০ টাকা কেজিতে। ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি, লেয়ার মুরগি ২৩০ থেকে ২৪০ টাকা। আর সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৪০ টাকা কেজিতে।

ডিসি/এসআইকে/এমএকে