কেজিতে ২০০ হলো ব্রয়লার মুরগির দাম

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
ক’দিন আগেও ছিল ১১০-১২০ টাকা। এখন একলাফে ২০০ ছুঁই ছুঁই। ব্রয়লার মুরগির দাম হঠাৎ কেজিতে ৮০-৯০ টাকা বাড়লো। মুরগির খাবার তৈরির অন্যতম কাঁচামাল সয়ামিল রফতানিও বন্ধ করেছে সরকার। এ মৌসুমে এমনিতেও মুরগির দাম পড়ে যাওয়ার কথা। তারপরও কেন বেড়েছে দাম? ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেলো, দাম বাড়ার কারণ একটাই- করোনার ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া। এতদিন বিয়ে, অনুষ্ঠান বন্ধ থাকায় মুরগির চাহিদা কম ছিল। এখন একযোগে বেড়েছে চাহিদা। এ কারণেই দাম বাড়ানো হয়েছে।
একই চিত্র গোটা বাজারজুড়ে। পর্যাপ্ত উৎপাদন এবং টনে টনে পচে গেলেও দেড় মাস আগের ৪০ টাকা কেজির পেঁয়াজ এখন ৭০ টাকা। ৬০ টাকার চিনি কিনতে হচ্ছে ৮০ টাকায়। সবজি থেকে শুরু করে চাল, ডাল, তেলের বাজারও ঊর্ধ্বমুখী। নতুন করে বেড়েছে আটা ময়দাসহ অন্তত ডজনখানেক নিত্যপণ্যের দাম।
সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবির তথ্য বলছে, এই সপ্তাহে বেড়েছে আটা, ময়দা, মসুর ডাল, রসুন, হলুদ, আদা, দারুচিনি ও লবঙ্গের দাম। স্বস্তি নেই সবজির বাজারেও। বেশিরভাগই ৭০ টাকার ওপরে। প্রতিকেজি কাঁচা মরিচ কিনতে হচ্ছে ১৫০-২০০ টাকায়। মোটা চালের দাম এখনও ৫০ টাকা কেজি। নাজিরশাইল ৬৫-৭০, মিনিকেট ৬০-৬৫ ও আটাশ চাল ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
গত সপ্তাহের তুলনায় রাজধানীর বাজারগুলোতে কেজিতে ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে ১০ টাকা পর্যন্ত। শুক্রবার (১৫ অক্টোবর) বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্রয়লার বিক্রি হচ্ছে ১৯০ টাকায়। গত সপ্তাহে ছিল ১৭৫ থেকে ১৮০ টাকা। দুই সপ্তাহ আগে ছিল ১৬৫ টাকা। সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকে ছিল ১২০-১৩০ টাকা। কোথাও কোথায় ব্রয়লার মুরগীর দাম কেজিতে ২০০ টাকাতে বিক্রি করতে দেখা গেছে।
রাজধানীর মানিকনগর এলাকার বাসিন্দা গোলাম কিবরিয়া কামাল বলেন, ‘১০০ টাকা কেজির ব্রয়লার ২০০ হয়ে গেলো। এ নিয়ে কারও মাথাব্যথা নেই। স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য সবজি দিয়েও ভাত খাওয়া কষ্টকর। সব সবজির কেজিই ৭০ টাকার বেশি’।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ব্রয়লারের মতো পাকিস্তানি কক বা সোনালি মুরগির দামও দফায় দফায় বেড়েছে। সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকে ২১০ থেকে ২৩০ টাকা থাকলেও এখন ৩৩০-৩৫০ টাকা হয়েছে। এক সপ্তাহ আগেও প্রায় একই দাম ছিল। দুই সপ্তাহ আগে ছিল ৩০০ টাকা।
মুরগির দাম নিয়ে মুগদা বাজারের ব্যবসায়ী রতন আলী বলেন, অন্য সময় শীতের আগে ব্রয়লার মুরগির দাম কম থাকে। এবার ব্যতিক্রম। বাজারে মুরগির সরবরাহও কম।
মালিবাগ বাজারের ব্যবসায়ী আজমল হোসেন বলেন, রেস্তোরাঁগুলোতে ব্রয়লার যাচ্ছে বেশি। বিভিন্ন অনুষ্ঠানও বেড়েছে। এসবের জন্য বেশি মুরগি লাগছে। অন্যদিকে, ডিম গত সপ্তাহে ৩৮-৪০ টাকা হালি বিক্রি হলেও এখন তা নেমেছে ৩৬ টাকায়।
রসুনের কেজি ১৩০-১৪০ টাকা। আগের সপ্তাহে ছিল ১২৫ টাকা। গোল আলুর দাম ২০ টাকাই আছে বেশিরভাগ জায়গায়। মুদি দোকানগুলোতে সয়াবিন তেল ১৪০-১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মোটা ডাল ৯৫-১০০ ও চিকন ডালের দাম ১০০-১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
শীত আসার আগেই বাজারে আসতে শুরু করেছে শীতকালীন সবজি। তাতে সহজে হাত দিতে পারছে না সীমিত আয়ের ক্রেতারা। রাজধানীর কয়েকটি সবজির বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে গাজর ও টমেটো। মানভেদে এক কেজি চাইনিজ গাজরের দাম ১৪০-১৬০ টাকা। টমেটোর কেজি ১০০ থেকে ১২০ টাকা।
শিম গত সপ্তাহের মতো বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। ঝিঙের কেজি ৫০ টাকা। ছোট ফুলকপি ও বাঁধাকপি এক পিস ৫০ টাকা করে। মুলা ৬০ টাকা, করলা ৭০-৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, পটল ৬০ টাকা, ঢেঁড়শ ৬০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাঁচকলার হালি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। তবে বিভিন্ন ধরনের শাকের আঁটি ১০-১৫ টাকাতেই আছে।
সবজি বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে সবজির অভাব নেই। কিন্তু আড়তে দাম চড়া। বেশি দামে কেনার কারণে খুচরা ব্যবসায়ীরা বেশি দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।
আমদানির খবর পাওয়ায় গত সপ্তাহে ৮০ টাকার পেঁয়াজ এখন ৭০ টাকা হয়েছে। গতকালও (১৪ অক্টোবর) ছিল ৭৫ টাকা। তবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে পেঁয়াজ আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক প্রত্যাহার করায় একদিনে দাম কমেছে কেজিতে ১০ টাকা।
স্বস্তি নেই মাছের বাজারেও। প্রতি কেজি রুই বিক্রি হচ্ছে ২৫০-২৮০ টাকায়। পাঙাশ ১০০-১৪০ টাকা, বড় পাবদা ৪৫০-৫০০ টাকা, ছোট তেলাপিয়া ১০০-১২০ টাকা, গলদা চিংড়ি ৭০০-৭৫০ টাকা ও শিং মাছ ৪০০-৫০০ টাকা কেজি দরে। ছোট কাচকি ৪০০ টাকা ও মলা মাছ পাওয়া যাচ্ছে ৩০০ টাকা কেজিতে।
মানিকনগরের ক্রেতা আমানুল হক জানালেন, ‘ব্রয়লার পরিষ্কারের পর কেজিতে পাওয়া যায় বড়জোর ৬০০ গ্রাম মাংস। ২০০ টাকা কেজি হিসাবে এক কেজি মাংসের দাম আসে ৩৩০ টাকা। তাই এই টাকায় সবজি বা ছোট মাছ খাওয়ার কথা ভাবছি’।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ