দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
হঠাৎ করে পরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধি করায় বিপাকে পড়েছেন যাত্রীরা। দ্বিগুণ ভাড়া আদায় নিয়ে চালক-হেলপার ও যাত্রীদের মধ্যে চলছে বাগবিতণ্ডা। ঘটছে হাতাহাতির ঘটনাও। শুধুমাত্র ডিজেলচালিত যানবাহনের ভাড়া বৃদ্ধি করলেও সিএনজিচালিত পরিবহনগুলোও বর্ধিত ভাড়া আদায় করছে। এছাড়াও সরকার যে হারে ভাড়া বাড়িয়েছে, পরিবহনগুলোর তার কয়েকগুন, অনেকক্ষেত্রে ৭০ শতাংশ বেশি পর্যন্ত ভাড়া আদায় করছে বলে যাত্রীরা অভিযোগ করেছেন। সরেজমিনে ঘুরে অভিযোগের সত্যতাও পাওয়া গেছে।
সোমবার (৮ নভেম্বর) ভোর থেকে নগরের বিভিন্ন রুটে যাত্রীদের কাছ থেকে বেশি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ আসে। মুরাদপুর এলাকার হাটহাজারী স্পেশাল বাসে অতিরিক্ত ভাড়া দাবি করায় মাসুদ রানা নামের এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর সঙ্গে হেলপারের হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে।
নগরে যাত্রীদের গন্তব্য কাছাকাছি হলেও গাড়িতে উঠলেই ১০ টাকা ভাড়া নিচ্ছেন চালকেরা। যেখানে আগে ভাড়া ছিল ৫ টাকা। কাপ্তাই রাস্তার মাথা থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত আগে ভাড়া ছিল ২৫ টাকা, এখন নেওয়া হচ্ছে ৩৫ টাকা।
মোহাম্মদ শফি। নগরের দুই নাম্বার গেইট থেকে নতুন ব্রিজ যাবেন। আগের ভাড়া ১০ টাকা হলেও তার কাছ থেকে ২০ টাকা দাবি করে হেলপার। কিন্তু তিনি অতিরিক্ত ভাড়া দিতে অস্বীকৃতি জানান। এতেই বেধে যায় ঝগড়া। এসময় বাসের অন্য যাত্রীরাও হেলপারের ওপর ক্ষিপ্ত হয়।
শফি বলেন, আমি প্রতিদিন সকালে ১০ টাকা দিয়ে নতুন ব্রিজ যাই৷ কিন্তু আজ (সোমবার) ২০ টাকা দিতে হয়েছে। প্রতিবাদ করলে বাসের হেলপার আমার দিকে তেড়ে আসে।
যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে বিভিন্ন রুটে চলছে দূরপাল্লার বাস। পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহারের পর রবিবার রাতেই দূরপাল্লার বাস ছেড়েছে নগরের অলংকার ও এ কে খান মোড় থেকে। ধর্মঘটের পর রাস্তায় পরিবহন চলাচল শুরু হওয়ায় দূরে যাতায়াতের সুযোগ পেয়ে কিছুটা স্বস্তি পেলেও বাড়তি ভাড়ায় অসন্তুষ্ট যাত্রীরা।
নগরের বিভিন্ন পরিবহনের কাউন্টারে দায়িত্বরতদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পুরোনো ভাড়ার সঙ্গে ৫০-১০০ টাকা বাড়িয়েছেন তারা।
হানিফ পরিবহনের জিএম শানিন বলেন, পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহার করার পর রবিবার রাত থেকেই আমাদের পরিবহন চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেছে। আগে ভাড়া নিতাম যেখানে ২৫০ টাকা, এখন নেওয়া হচ্ছে ৩৫০ টাকা।
ভিআইপি পরিবহন চট্টগ্রামের জিএম জাহেদ আলম বলেন, চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা নন এসি বাসের টিকিট মূল্য ছিল ৪৮০ টাকা। এখন ৫৫০ টাকা করা হয়েছে। এছাড়াও এসি ১২৫০ টাকার টিকিট বৃদ্ধি পেয়ে ১৪০০ টাকা হয়েছে। ৬৫০ টাকার এসি টিকিট ৮০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে।
মারসা পরিবহনের জিএম মো. সিদ্দিক বলেন, কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম টিকিটের মূল্য ছিল ২৫০ টাকা৷ এখন ৩৫০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া চকরিয়ার ভাড়া ছিল ১৮০, এখন ২৩০ টাকা।
ডিজেলের দাম প্রতি লিটার ৬৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০ টাকা নির্ধারণ করে সরকার। বৃহস্পতিবার থেকে ডিজেলের বর্ধিত এই দাম কার্যকর হয়। এর প্রতিবাদে ডিজেলের দাম কমানো কিংবা ডিজেলের নতুন দামের সঙ্গে যাত্রী পরিবহনের ভাড়া সমন্বয়ের দাবিতে শুক্রবার (৫ নভেম্বর) সকাল থেকে অঘোষিত ধর্মঘট শুরু করেন পরিবহন মালিক সমিতি।
বাস মালিকদের দাবির মুখে রবিবার (৭ নভেম্বর) সকালে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিসহ বাস মালিক ও সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বৈঠকে বসে বিআরটিএ। প্রায় সাত ঘণ্টার বৈঠক শেষে বিকেলে গণপরিবহনের ভাড়া বাড়ানোর ঘোষণা দেন বিআরটিএ চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার।
তবে সিএনজির দাম যেহেতু বাড়েনি, তাই সিএনজিচালিত পরিবহনের ভাড়া বাড়বে না-এমন ঘোষণা এলেও আগের ভাড়াতেই যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে না। সিএনজিচালিত পরিবহনে বেশি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে কি না, তা বিআরটিএ তদারকি করার কথা থাকলেও সংশ্লিষ্টদের রাস্তায় দেখা যায়নি।
ডিসি/এসআইকে/আরসি