বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমতে শুরু করলেও আওয়াজ নেই বাংলাদেশে

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
আন্তর্জাতিক বাজারে ব্যারেলপ্রতি ৭৩ ডলারে নেমে এসেছে জ্বালানি তেলের দাম।  গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে জ্বালানি তেলের দরপতন বিশ্ব অর্থনীতির সবচেয়ে ইতিবাচক খবর।  ইউএস এনার্জি ইনফরমেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (ইআইএ) জ্বালানি তেলের দরের যে পূর্বাভাস দিচ্ছে তাতে দেখা যায়, আগামি বছর তেলের দাম থাকবে গড়ে ব্যারেলপ্রতি ৬৬ ডলার।  এই দর ধরে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) লাভ লোকসান হিসাব করলে দেখা যায়, ভালো অবস্থানেই থাকবে প্রতিষ্ঠানটি।  এতে জ্বালানি তেলের বর্ধিত দর প্রত্যাহারেরও সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
গত ৪ নভেম্বর মধ্যরাত থেকে কার্যকর হয় ডিজেল ও কেরোসিনের নতুন দাম।  লিটারপ্রতি ১৫ টাকা বাড়িয়ে ৬৫ থেকে ৮০ টাকা করা হয়। সে সময় মন্ত্রণালয়ের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আন্তর্জাতিক বাজারে জালানি তেলের মূল্য ক্রমবর্ধমান। বিশ্ববাজারে ঊর্ধ্বগতির কারণে প্রতিবেশী দেশসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশ জ্বালানি তেলের মূল্য নিয়মিত সমন্বয় করছে। গত ১ নভেম্বর ভারতে ডিজেলের বাজার মূল্য ছিল প্রতি লিটার ১২৪.৪১ টাকা বা ১০১.৫৬ রূপি, অথচ বাংলাদেশে ডিজেলের মূল্য প্রতি লিটার ৬৫ টাকা অর্থাৎ লিটারপ্রতি ৫৯.৪১ টাকা কম। বর্তমান ক্রয়মূল্য বিবেচনা করে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন ডিজেলে লিটারপ্রতি ১৩.০১ এবং ফার্নেস অয়েলে লিটার প্রতি ৬.২১ টাকা কমে বিক্রি করায় প্রতিদিন প্রায় ২০ কোটি টাকা লোকসান দিচ্ছে। অক্টোবরে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন বিভিন্ন গ্রেডের পেট্রোলিয়াম পণ্য বর্তমান মূল্যে সরবরাহ করায় মোট ৭২৬.৭১ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে সরকার শুধু ডিজেল ও কেরোসিনের মূল্য প্রতি লিটার ভোক্তা পর্যায়ে ৬৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০ টাকা পুনর্নির্ধারণ করেছে।
জ্বালানি তেলের দর বৃদ্ধির পরপরই ৬ নভেম্বর গ্লাসগোতে অনুষ্ঠিত জলবায়ু সম্মেলন চলাকালে সেখান থেকে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছিলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমার সঙ্গে সঙ্গে দেশের বাজারে মূল্য সমন্বয় করা হবে। তিনি অনলাইনে সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য হ্রাস পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশে তার প্রতিফলন ঘটবে। ২০১৬ সালেও জ্বালানি তেলের মূল্য হ্রাস করা হয়েছিল। জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক মূল্য বৃদ্ধি ও পাচার রোধে মূল্য সমন্বয় করা হয়েছে’।
এখন সেই দর নিম্নগামী। এখন সরকার কী সিদ্ধান্ত নেয় সেটিই দেখার বিষয় বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
আন্তর্জাতিক বাজার বিশ্লেষণ বলছে, কোভিড পূর্ববর্তী বছরে ২০১৯ সালে বিশ্বে জ্বালানি তেলের দাম ছিল গড়ে ৫৬ দশমিক ৯৯ ডলার। তবে ওই বছর কোনো একটি সময়ে সর্বোচ্চ ৬৬ ডলারে জ্বালানি তেল বিক্রি হয়েছে। আবার ২০১৮ সালে গড় দাম ছিল ৬৫ দশমিক ২৩ ডলার। ওই বছর সর্বোচ্চ দাম ছিল ৭৭ দশমিক ৪১ ডলার। একইভাবে ২০১৭ সালে গড় দাম ছিল ৫০ দশমিক ৮০ ডলার। ওই বছর সর্বোচ্চ ৬০ দশমিক ৪৬ ডলারেও তেল বিক্রি হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ফলে বছরের কোনো একটি নির্দিষ্ট মাসে জ্বালানি তেলের দাম বাড়তে বা কমতেই পারে। এর ওপর ভিত্তি করে পুরো বছরের গড় দামের হিসাব করে না কোনো দেশ। গড়ে কত করে দাম থাকলে লোকসানের কারণ হতে পারে সেটি বিশ্লেষণ করেই দেশগুলো জ্বালানি তেলের দর নির্ধারণ করে। এছাড়া লিটারপ্রতি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা ভ্যাট-ট্যাক্স হিসেবে আদায় করা হয়। জ্বালানি তেলে লোকসান করলে আমদানিকারককে ভর্তুকি দিতে হয়। ফলে সরকারকে ওই দিকটিও বিবেচনায় রাখতে হয়। অত্যধিক জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির ফলে স্বস্তির জন্য ভারত ও পাকিস্তান কর ছাড় দিয়েছে।
দেশে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির পর বাস ভাড়াসহ পণ্য পরিবহন খরচ বেড়েছে। এতে জিনিসপত্রের দাম বাড়ায় জনজীবনে চাপ বেড়েছে। হাফ পাস বাস ভাড়ার দাবিতে আন্দোলনে রাস্তায় নেমেছেন ছাত্ররা। সরকারের যে হিসাব তাতে দেখা গেছে, ডিজেলে চলতি বছরের জুনে লিটারপ্রতি ২.৯৭ টাকা, জুলাইয়ে ৩.৭০ টাকা, আগস্টে ১.৫৮ টাকা, সেপ্টেম্বরে ৫.৬২ টাকা এবং অক্টোবরে ১৩.০১ টাকা বিপিসি’র লোকসান হয়। কিন্তু এরমধ্যে ডিজেলে সরকারকে ৯ টাকা ৭১ পয়সা কর দিতে হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জ্বালানি সচিব আনিছুর রহমান বলেন, ‘এখনই দাম কমলে তার প্রভাবে আমরা পাই না। দাম বাড়ানোর আগে আমরা ছয় মাস পর্যবেক্ষণ করেছি। এবার ছয় মাস না হলেও কিছু দিন তো পর্যবেক্ষণ করতেই হবে’। তিনি বলেন, ‘কোভিড পরবর্তী অবস্থা ভালো হলেও আবার নতুন ভ্যারিয়েন্টের প্রভাবে বিশ্ব পরিস্থিতি কোনদিকে যাবে তা এখনই বলা সম্ভব না। অনেক দেশ এরই মধ্যে লকডাউন দিয়ে দিয়েছে। ফলে আবার যদি আগের মতো সব স্থবির হয়ে পড়ে তাহলে তো অবস্থা অন্যরকম হয়ে যাবে। তাই জ্বালানি তেলের দাম কমানোর বিষয়ে এখনই কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে না। আমরা আরও কিছু দিন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবো’। সংবাদ সূত্র- বাংলা ট্রিবিউন

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ