আমদানি নীতি আদেশের খসড়া মন্ত্রিসভায় অনুমোদন

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
‘আমদানি নীতি আদেশ ২০২১-২৪’ এর খসড়ার অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।  সোমবার (৭ ফেব্রুয়ারি) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই অনুমোদন দেওয়া হয়।  প্রধানমন্ত্রী তার বাসভবন গণভবন থেকে সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে মন্ত্রীদের এই বৈঠকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হন।  বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম প্রেস ব্রিফিংয়ে এই চুক্তির খসড়া অনুমোদনের কথা জানান।
পরের তিন বছরের জন্য প্রণীতব্য আদেশটিতে দেশের আমদানি বাণিজ্য কোন মানদণ্ডে চলবে সেটার রূপরেখা চূড়ান্ত করা হয়েছে।  নীতি-আদেশটি মন্ত্রিপরিষদের সভায় অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।  এটি অনুমোদন পাওয়ায় এখন গেজেট জারির মাধ্যমে তা কার্যকর হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আমদানি নীতি আদেশে বিদেশ থেকে পুরনো কাপড় আমদানির পথ কিছুটা কমিয়ে আনার প্রস্তাব করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।  আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের মর্যাদা রক্ষায় এটি করা হয়েছে।  রফতানি বাড়ানোর কৌশল হিসেবে আমদানি নীতি আদেশটি আগের যে কোনো আদেশের তুলনায় সহজ করা হয়েছে।
নতুন আমদানি নীতি আদেশে যেসব সুবিধা থাকছে
কোনো আমদানি ও রফতানিকারক জাল কাগজপত্র দাখিল করে নিবন্ধন সনদ গ্রহণ বা গ্রহণের উদ্যোগ কিংবা আমদানি-রফতানি করলে নীতি আদেশের আওতায় তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হবে বলে বিধান রাখা হয়েছে।  এক্সপোর্টস কন্ট্রোল অ্যাক্ট, ১৯৫০ অনুযায়ী এসব অপরাধের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।  আরও জানা গেছে, এ আদেশে থাকছে না পুরনো মোটরসাইকেল, ক্যাসিনো বা জুয়ার পণ্য আমদানির সুযোগ।  বেশিরভাগ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে স্থানীয় শিল্পের প্রসারে।  নতুন পদক্ষেপের পাশাপাশি আমদানির সুষ্ঠু নিয়ন্ত্রণে কিছু কড়াকড়িও আরোপ করা হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, অনুমোদনের লক্ষ্যে মন্ত্রিপরিষদের সভায় উপস্থাপনের জন্য ‘আমদানি নীতি আদেশ ২০২১-২০২৪’ শীর্ষে রাখা হয়েছে সভার আলোচ্যসূচিতে।  চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের বিষয়টি বিবেচনায় রেখেও সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সক্ষমতা বাড়ানোর নানা ছোট-বড় সুবিধা দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।  কোনো আমদানিকারক ব্লু-টুথ প্রযুক্তির মোটরসাইকেল আমদানি করতে চাইলে আগেই বিটিআরসির অনুমতি নিতে হবে। এক্ষেত্রে অনুমোদিত সনদও থাকতে হবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, নিয়মানুযায়ী প্রতি তিন বছর পর পর দেশে নতুন আমদানি নীতি আদেশ জারি করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।  তবে ২০১৮-২০২১ সালে তা করতে পারেনি।  এ কারণেই সর্বশেষ আদেশ (২০১৫-১৮) এখন পর্যন্ত চালু আছে।  নতুন আদেশ জারি হলে আগেরটা বিলুপ্ত হবে।
নতুন নীতিতে অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যের উন্নয়নে আমদানি সহজ করার সুযোগ থাকছে।  এখন ঋণপত্র খোলার পর ঋণপত্রের কপি ১৫ দিনের মধ্যে আমদানি নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিতে হয়।  নতুন নিয়মে ডিজিটাল মাধ্যমে জমা দিলেই চলবে।  আবার এখন আমদানির জন্য প্রাথমিক সনদের সর্বনিম্ন নিবন্ধন ফি ৫ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকা ধার্য করা আছে।  বার্ষিক নবায়ন ফি ৩ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকা।
সূত্র জানায়, নতুন নীতিতে বছর বছর নবায়নের ঝামেলাও থাকছে না।  একবারে পাঁচ বছরের জন্য সর্বনিম্ন ১০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা নিবন্ধন ফি প্রস্তাব করা হয়েছে।  প্রাথমিক নিবন্ধন ফি কমিয়ে ৩ হাজার টাকা এবং বার্ষিক নবায়ন ফি ২ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা ধরা হয়েছে।
পর্যটন শিল্পকে গুরুত্ব দিয়ে সরকার অনুমোদিত ও লাইসেন্সপ্রাপ্ত রেস্তোরাঁ, বার, সামাজিক ক্লাব, প্রাইভেট ক্লাব, চিত্তবিনোদন ক্লাবগুলোকেও তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী অ্যালকোহল ও অ্যালকোহলিক বেভারেজ আমদানির অস্পষ্ট নির্দেশনাকে স্পষ্ট করার প্রস্তাব রয়েছে নতুন নীতি আদেশে।
আমদানিকারকদের বার্ষিক আমদানির পরিমাণ সহজ করতে পাঁচটি শ্রেণিতে নিবন্ধনের প্রস্তাব করা হয়েছে।  বার্ষিক আমদানি সীমা ৫ লাখ থেকে বাড়িয়ে সর্বনিম্ন ১০ লাখ এবং এরপর ৫০ লাখ, ১ কোটি, ৫ কোটি ও এর বেশি- এমন পাঁচটি ভাগে নিবন্ধনের সুযোগ রাখা হয়েছে।  এলসির পাশাপাশি ক্রেতা-বিক্রেতা চুক্তির মাধ্যমে পণ্য আমদানি করতে পারবেন।  এতে যে কেউ সহজেই বিদেশ থেকে পণ্য আমদানির সুযোগ নিতে পারবেন।  বিশেষ করে গার্মেন্ট খাতের ব্যবসায়ীদের নমুনা আমদানি সহজ করা হয়েছে নতুন নীতি আদেশে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন জানিয়েছেন, নতুন আমদানি নীতি আদেশ সমগ্র বিশ্বে বাংলাদেশের ব্যবসা ও বাণিজ্য সম্প্রসারণে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে।  ইতোমধ্যেই বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে আমদানি নীতি আদেশে সক্ষমতা বাড়াতে নতুন কৌশল নেওয়া হয়েছে।  আশা করছি নতুন নীতি আদেশের ফলে লক্ষ্য অনুযায়ী ২০২৪ সালে ৮০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রফতানিতে বাংলাদেশ সফল হবে।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানিয়েছেন, বিভিন্ন কারণে গত তিন বছরের আমদানি নীতি আদেশটি কার্যকর করা হয়নি।  তবে চূড়ান্ত হওয়া আগামি তিন বছরের জন্য প্রণীতব্য ‘আমদানি নীতি আদেশ ২০২১-২৪’ বাংলাদেশের ব্যবসার অগ্রযাত্রায় কার্যকর ভূমিকা রাখবে।  এতে স্থানীয় শিল্পেরও প্রসার ঘটবে।  আশা করছি আগামি কেবিনেটে আদেশটি অনুমোদন পাবে।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ