চট্টগ্রাম থেকে ট্রেনের টিকিট মিলছে না

বিশেষ প্রতিনিধি, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
ব্যাপক উদ্যোগ থাকলেও ট্রেনের টিকিট পাচ্ছেন না সাধারণ মানুষ।  সারাদিন/রাত লাইনে অবস্থান করেও দিন শেষে টিকিট না পেয়ে ক্ষোভে ফুঁসছেন যাত্রীরা।  তবে, তাদের অভিযোগ, কয়েকগুন বেশি টাকা দিলে হোটেল নিউটন ও এর আশেপাশে গিয়ে দালালদের কাছে ঠিকই মিলছে ট্রেনের কাঙ্খিত টিকিট।
চট্টগ্রামের পতেঙ্গার একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন হানিফ শাহ।  যাবেন ময়মনসিংহে।  স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে ঈদ করতে গ্রামের বাড়ি যাবেন।  তাই ১ মে’র যাত্রার টিকিট কাটতে স্টেশনে আসেন মঙ্গলবার রাত ৯ টায়। প্রায় সাড়ে ১১ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়ানোর পর বুধবার (২৭ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৮ টায় কাউন্টারে টিকিট পান। হানিফ শাহ জানান, ‘রাত ৯ টায় বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিটের জন্য কাউন্টারের সামনে লাইনে দাঁড়াই।  সেহরিও খেয়েছি লাইনে।  সারারাত মশার যন্ত্রণা সহ্য করেছি।  নির্ঘুম রাত পার করে সকালে টিকিট হাতে পেয়ে এখন ভালো লাগছে’।
বুধবার (২৭ এপ্রিল) অগ্রিম টিকিট বিক্রির শেষ দিন।  আজ দেওয়া হয়েছে ১ মে’র টিকিট।  ঈদে ট্রেনে বাড়ি যেতে টিকিটের জন্য হানিফের মতো রাত থেকে সবাই লাইনে এসে দাঁড়ান।
সেলিনা তোহা চট্টগ্রামের বায়েজিদের অক্সিজেনস্থ ক্লিফটনের কারখানায় কাজ করেন।  তিনি ১ মে’র শায়েস্তাগঞ্জের চারটি টিকিট পেয়েছেন।  সেলিনা বলেন, ‘আমি আগের দিন মঙ্গলবারও টিকিটের জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছিলাম।  কিন্তু খালি হাতে ফিরে গেছি।  এ কারণে বুধবার ভোর ৩ টায় টিকিটের জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছি।  প্রায় সাড়ে ছয় ঘণ্টা পর সকাল সাড়ে ৯ টায় পাহাড়িকা এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট হাতে পেয়েছি’।
বুধবার সকালে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, টিকিটের জন্য যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড়। স্টেশন এলাকায় লোকে লোকারণ্য। সাড়ে ১০ টায় অনেকগুলো ট্রেনের অগ্রিম টিকিট শেষ হয়ে গেছে।  এর মধ্যে সুবর্ণ ও সোনার বাংলা ব্যতীত ১০টি আন্তঃনগর ট্রেন এবং দুটি স্পেশাল ট্রেনের সব টিকিট শেষ হয়ে যায়।  তখনও কাউন্টারে কয়েক হাজার যাত্রী।
টিকিট না পাওয়া যাত্রীরা অভিযোগ করে বলেন, ট্রেনের টিকিট কালোবাজারিদের হাতে চলে যাচ্ছে।  এ কারণে কাউন্টারে পর্যাপ্ত টিকিট পাচ্ছেন না যাত্রীরা।  স্টেশনের বিপরীতে অবস্থিত মার্টিন হোটেল কিংবা বিপনী বিতানের দিকে দালালরা যাত্রীদের সংগ্রহ করে নিয়ে সেখানে চাহিত টিকিট বিক্রি করছেন কয়েকগুন বেশি টাকায়।  বাধ্য হয়েই সেই টিকিট নিতে হচ্ছে।  না হলে বাড়িতে যাওয়া হবে না।
বুধবার সকাল থেকে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন থেকে ছেড়ে যায় ঈদযাত্রার প্রথম দিনের ট্রেন।  এর মধ্যে সকাল ৭ টায় চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে ছেড়ে যায় ঢাকাগামী সুবর্ণ এক্সপ্রেস, ৭টা ২০ মিনেটে সিলেটগামী পাহাড়িকা এক্সপ্রেস, ঢাকাগামী চট্টলা এক্সপ্রেস ছেড়ে যায় সাড়ে ৮ টায়, ময়মনসিংহগামী বিজয় এক্সপ্রেস সকাল ৯ টায় ছাড়ার কথা থাকলেও স্টেশন থেকে ছেড়ে গেছে ১৫ মিনিট দেরিতে।  সকাল ১০ টায় লোকাল ট্রেন কর্ণফুলী স্টেশন থেকে ছেড়ে যায়।
সকালে স্টেশন এলাকায় পরিদর্শন করেছেন চট্টগ্রাম রেলওয়ে পুলিশের এসপি হাছান চৌধুরী, রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর কমান্ডেন্ট মো. শফিকুল ইসলাম, ডিসিও চট্টগ্রাম ইতি ধর, নিরাপত্তা বাহিনীর সহকারী কমান্ডেন্ট সত্যজিৎ দাশসহ রেলওয়ে কর্মকর্তারা।
রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সহকারী কমান্ডেন্ট সত্যজিৎ দাশ জানান, ‘আজ সকাল থেকে অগ্রিম টিকিটে যাত্রী পরিবহন শুরু হয়েছে।  প্রথম দিন ট্রেনে যাত্রীদের চাপ কম ছিল। গত ২৩ এপ্রিল দেওয়া হয় বুধবারের টিকিট।  আজ অগ্রিম টিকিটের শেষ দিনে দেওয়া হচ্ছে ১ মে’র যাত্রার টিকিট।  টিকিট কালোবাজারি ঠেকাতে আরএনবির টিম স্টেশন এলাকায় সতর্ক আছে’।
চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনের ম্যানেজার রতন কুমার চৌধুরী বলেন, ‘বুধবার অগ্রিম টিকিট নিতে আগের দিন রাত ৯টা থেকে লাইনে দাঁড়িয়েছে যাত্রীরা।  বিশেষ করে ময়মনসিংহগামী বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেনের চাহিদা বেশি।  এ ট্রেনর টিকিট আছে ৫৭৭টি।  দেখা গেছে লাইনে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার যাত্রী।  সবাইকে টিকিট দেওয়া সম্ভব নয়’।
স্টেশন মাস্টার জাফর আলম জানান, ‘এবার ছাদের ওপর এবং বাম্পারে দাঁড়িয়ে কোনো যাত্রীকে ভ্রমণ করতে দেওয়া হবে না।  বিনা টিকিটে কোনও যাত্রী যাতে ট্রেনে ভ্রমণ করতে না পারে, এ বিষয়ে আমরা কঠোর থাকবো’।
চট্টগ্রাম রেলওয়ে পুলিশ সুপার (এসপি) হাছান চৌধুরী জানান, ‘স্টেশনের অবস্থা অনেক ভালো।  যাত্রীরা সুশৃঙ্খলভাবে কাউন্টার থেকে অগ্রিম টিকিট নিয়েছেন।  টিকিট যাতে কালোবাজারিদের হাতে না যায় এ জন্য আমরা তৎপর আছি’।

ডিসি/এসআইকে/আরএআর