আগেরটি বাতিল করে নতুন করে হচ্ছে কক্সবাজারের মাস্টারপ্ল্যান

কক্সবাজার প্রতিনিধি, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
২০১৩ সালে কক্সবাজারের উন্নয়নে একটি মাস্টার প্ল্যান করা হয়েছিল।  যা সরকার অনুমোদনও দিয়েছে। কক্সবাজার শহর ও সমুদ্র সৈকতের কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত এলাকা ঘিরে এই মাস্টার প্ল্যান তৈরি করেছিল নগন উন্নয়ন অধিদপ্তর।  সেই কাজ করতে গিয়ে বিপুল টাকা খরচ করা হলেও এবার ঐ প্ল্যানটি বাতিল করে দেয়া হয়েছে।  কক্সবাজারের পরিকল্পিত উন্নয়নে নতুন করে আবারও মাস্টার প্ল্যান তৈরির কাজ শুরু করেছে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ।  এই মাস্টার প্ল্যান তৈরিতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৯৪ কোটি টাকা।  যা চূড়ান্ত করতে সময় লাগবে ২ বছর পর্যন্ত।  এর মধ্যে ৬ মাস রাখা হয়েছে অভিযোগ শোনার জন্য।  পরের ৬ মাস এসব অভিযোগের পর্যালোচনা শেষ করে চূড়ান্ত কাজের পরিধি নির্ধারণ করা হবে।  প্ল্যানটি সরকার থেকে অনুমোদন নিয়ে গেজেট আকারে প্রকাশ হতে ৩ বছরের মত সময় লাগবে বলে জানিয়েছে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ।
যদিও এর আগে ২০১৩ সালে কক্সবাজারের উন্নয়নে আরও একটি মাস্টার প্ল্যান করা হয়েছিল।  যা সরকার অনুমোদনও দিয়েছে। কক্সবাজার শহর ও সমুদ্র সৈকতের কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত এলাকা ঘিরে এই মাস্টার প্ল্যান তৈরি করে ছিল নগন উন্নয়ন অধিদপ্তর।  ওই প্ল্যান তৈরি করতে কত ব্যয় হয়েছে তা নিশ্চিত করতে পারেননি দায়িত্বশীল কেউ।
আগে প্রণয়ন করা মাস্টার প্ল্যান বাতিলের কারণ বলতে গিয়ে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অবসরপ্রাপ্ত) ফোরকান আহমদ জানিয়েছেন- ‘২০১৩ সালে অনুমোদিত মাস্টারপ্ল্যানটি বাস্তব সম্মত নয়’।  তিনি জানান, যে বা যারা প্ল্যান তৈরি করেছেন তারা কেউ মাঠ পর্যায়ে কাজ করেননি।  সম্ভবত ঢাকায় বসে প্ল্যান করা হয়েছে।  ফলে প্ল্যানে একটি ১০ ফিটের রাস্তা ১০০ ফিট করার পরিকল্পনা দেওয়া হয়েছে।  যা করা সম্ভব নয়।  ফলে নতুন করে মাস্টার প্ল্যান তৈরি করতে হচ্ছে।
নগর উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, সেলটেক নামের একটি বেসরকারি সংস্থা ২০১১ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত চেষ্টা করে তৈরি করে কক্সবাজার পর্যটন এলাকার মাস্টার প্ল্যানটি।  কিন্তু এটিতে বাস্তবতার নিরিখে অনেক গরমিল দেখা গেছে।
প্ল্যান পর্যালোচনা করে দেখা যায়, কক্সবাজার পৌরসভার টেকপাড়ার উকিলপাড়া এলাকাটি একটি আবাসিক এলাকা হলেও এটিকে মাস্টারপ্ল্যানে দেখানো হয়েছে বাণিজ্যিক এলাকা হিসেবে।  আবার শহরের পাহাড়তলীর কচ্ছপিয়া পুকুরের পূর্ব এলাকাকে প্রাতিষ্ঠানিক এলাকা বলে মাস্টারপ্ল্যানে উল্লেখ করা হলেও বাস্তবে তা হচ্ছে একটি আবাসিক এলাকা।
কক্সবাজার সদর উপজেলা সংলগ্ন উত্তর পাশের এলাকাটি একটি আবাসিক এলাকা হিসেবে গড়ে উঠেছে।  সেটিকেও মাস্টারপ্ল্যানে প্রাতিষ্ঠানিক এলাকা বলে উল্লেখ করা হয়েছে।  এছাড়া টেকনাফ-কক্সবাজর সড়কের সংযোগস্থল লিংক রোড এলাকাটি একটি বাণিজ্যিক এলাকা হলেও সেটিকে মাস্টার প্ল্যানে উল্লেখ করা হয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক এলাকা হিসেবে।  এসব কারণে নতুন করে মাস্টার প্ল্যান করা জরুরি বলে মনে করে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ।
কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অবসরপ্রাপ্ত) ফোরকান আহমদ বলেন, ‘১৯৪ কোটি টাকা ব্যয় করে দেশে এই প্রথম কোনো মাস্টার প্ল্যান করার কাজ শুরু করা হয়েছে।  উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের আওতাভুক্ত কক্সবাজারের কুতুবদিয়া থেকে সেন্টমার্টিন দ্বীপ পর্যন্ত মোট ৬৯০ দশমিক ৬৭ বর্গ কিলোমিটার এলাকা ঘিরে হবে এই পরিকল্পনা।  যা হবে কক্সবাজারে বসেই’।
আগের প্ল্যানটা ঢাকায় বসে করার কারণে বাস্তব সম্মত না হওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বাস্তবসম্মত এবং সকলকে সাথে নিয়ে মহাপরিকল্পনাটি করা হচ্ছে।  যেখানে সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয় যুক্ত থাকবে।  কোথায় আবাসিক এলাকা, কোথায় হাসপাতাল, মাকের্ট, কৃষি জমি, উন্মুক্ত স্থান, রাস্তা কত বড় হবে তা পরিষ্কারভাবে করা হবে’।
কারা এই পরিকল্পনা তৈরি করছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ফোরকান আহমদ জানান, বাংলাদেশ সেনা বাহিনীর কনস্ট্রাকশন সুপারভিশন কনসালটেন্ট (সিএসসি) এটির মূল দায়িত্বে রয়েছেন।  যারা ৭ টা গ্রুপকে টেন্ডারের মাধ্যমে ডেকেছিল।  ৭ টি গ্রুপ থেকে বাছাই করে এখন শুধুমাত্র বাংলাদেশি একটা কোম্পানিকে বাছাই করা হয়েছে।  এই কোম্পানির নাম ‘সেলটন’।  এই কোম্পানির সঙ্গে আমেরিকান কোম্পানি ‘সাসাকি’ যৌথভাবে কাজ করছে।  তারা কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ভবনে বসেই প্রজেক্টটার কাজ সম্পন্ন করবে।
তিনি জানান, এখন থেকে চুড়ান্তভাবে নির্বাচন করা কোম্পানি দুইটি এখানে কাজ করবে।  ড্রোন সার্ভে চলমান রয়েছে। সেন্টমার্টিনের ড্রোন সার্ভেটা সম্পন্ন হয়েছে।  এছাড়া কক্সবাজারের কিছু অংশেরও ড্রোন সার্ভে হয়েছে।  পুরো ৯টি উপজেলায় এ ড্রোন সার্ভে করা হবে।  প্ল্যান করতে কক্সবাজারের সকল সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের সব প্রতিনিধিদের নিয়ে মতামত বা সমন্বয় সভা করা হবে।  সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যদেরও এ কাজে সম্পৃক্ত করার।  তিনি জানান, মহাপরিকল্পনাটি চুড়ান্ত করার মেয়াদকাল ২ বছর পর্যন্ত।  এর মধ্যে ৬ মাস রাখা হয়েছে অভিযোগ শোনার জন্য।  পরের ৬ মাসে এসব অভিযোগের পর্যালোচনা শেষ করে চুড়ান্ত কাজের পরিধি নির্ধারণ করা হবে।  সব কিছু ঠিকমত সম্পন্ন করে সরকার থেকে অনুমোদন নিয়ে গেজেট আকারে প্রকাশ হতে ৩ বছরের মত সময় লাগবে।  তিন বছরের এই সময়কালের ইতোমধ্যে ৫ থেকে ৬ মাস অতিক্রান্ত হয়েছে।
কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অবসরপ্রাপ্ত) ফোরকান আহমদ বলেন, ‘মহাপরিকল্পনার চুড়ান্ত করার এ অন্তবর্তীকালীন সময়ে কাজ থেমে থাকবে না।  মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নকারি সংস্থা দুইটি যে ধরণের শর্ত ও বিধিমালা নির্ধারণ করে দেবে; সেটার ভিত্তি কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ প্ল্যান অনুমোদন দিতে থাকবে।  শুধু চুড়ান্ত অনুমোদনটা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের পরে নিবে।  এখন শুধু অস্থায়ীভাবে প্ল্যানটা অনুমোদন পাবে।  আগামি ৩ থেকে ৪ মাস পর মহাপরিকল্পনা চূড়ান্তকারি সংস্থা দুইটি যে ধরণের ড্রাফট বা কাঠামো ঠিক করে দেবে সেটার ভিত্তিতেই অস্থায়ীভাবে প্ল্যান অনুমোদন দেওয়া হবে।

ডিসি/এসআইকে/এফআরইউ