বাড়লো রসুনের দামও

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
তেল ও পেঁয়াজের পর রাজধানীর বাজারগুলোতে অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে দেশি রসুনের দাম।  একদিনের ব্যবধানে দেশি রসুনের দাম বেড়ে দ্বিগুণের বেশি হয়ে গেছে।  আবার বাজারে সয়াবিন তেলের সরবরাহ বাড়লেও আগের মতই বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে।  পাশাপাশি পেঁয়াজ, ডিম কিনতেও বাড়তি দাম দিতে হচ্ছে ক্রেতাদের।
তেল, রসুন, পেঁয়াজ, ডিমের দাম বাড়লেও কিছু সবজির দাম কমেছে।  অবশ্য কিছু সবজি দাম বাড়ার তালিকায়ও আছে।  আর রোজায় ৭০০ টাকা কেজিতে পৌঁছে যাওয়া গরুর মাংস এখনো ওই দামেই বিক্রি হচ্ছে।  তবে ব্রয়লার মুরগির দাম কিছুটা কমেছে।
শুক্রবার (১৩ মে) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা দেশি রসুনের কেজি বিক্রি করছেন ৯০ থেকে ১০০ টাকা, যা একদিন আগেই ছিল ৪০ থেকে ৫০ টাকা।  কয়েকদিন আগে ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া আমদানি করা রসুনের দাম বেড়ে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা হয়েছে।
রসুনের দামের বিষয়ে মালিবাগ হাজীপাড়ার ব্যবসায়ী মো. শরাফত আলী বলেন, পাইকারিতে রসুরের দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে।  গতকাল আমরা দেশি রসুন ৪৫ টাকা কেজি বিক্রি করেছি।  আজ আমাদেরই কিনতে হয়েছে ৮২ টাকা কেজি।
ষাটোর্ধ্ব এই ব্যবসায়ী বলেন, তেলের দাম বাড়ার পর এখন এক এক করে সব কিছুর দাম বাড়ছে।  মানুষ এখন খাবে কী?  দাম বাড়া দেখে আমরাই অবাক।  আমাদেরও সংসার আছে।  এই ব্যবসা করে সংসার চালায়।  এখন সংসার চালাতে অনেক কষ্ট হচ্ছে।
রসুনের দাম বাড়ার বিষয়ে কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী আলাউদ্দিন বলেন, এখন বাজারে দেশি রসুনের সরবরাহ অনেক কম।  এ কারণে দেশি রসুনের দাম বেড়ে গেছে।  এই পরিস্থিতি থাকলে সামনে রসুনের দাম আরও বাড়তে পারে।
এদিকে গত মাসে ইন্দোনেশিয়া পাম অয়েল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পর অস্বাভাবিক ভাবে বাড়তে থাকে ভোজ্যতেলের দাম।  ঈদের আগেই খুচরায় সয়াবিন তেলের কেজি ২০০ টাকা ছাড়িয়ে যায়।  সেই সঙ্গে বাজারে সয়াবিন তেলের সরবরাহ প্রায় নেই হয়ে যায়।
পরবর্তীতে ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার ভোজ্যতেলের দাম বাড়ায়া এতে বাজারে সয়াবিন তেল আসতে শুরু করে।  দাম বাড়ানোর পর দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে অভিযান।  এতে মজুত থাকা বিপুল পরিমাণ সয়াবিন তেল উদ্ধার করে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।  এতে বাজারে এখন ভোজ্যতেলের সরবরাহ কিছুটা বেড়েছে।  তবে দাম কমেনি।
খুচরা পর্যায়ে খোলা সয়াবিন তেলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৫০ টাকা।  পাম অয়েলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৯৫ থেকে ২০০ টাকা।  আর বোতলের পাঁচ লিটার সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৯৮০ থেকে ৯৮৫ টাকা।
সয়াবিন তেলের দামের বিষয়ে কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী আশরাফ আলী বলেন, সয়াবিন ও পাম অয়েলের যে দাম বেড়েছে তা আর কমবে বলে মনে হয় না।  তবে কয়েকদিন আগে বাজারে তেল পাওয়া যাচ্ছিল না, সেই পরিস্থিতি এখন নেই।  এখন তেলের সরবরাহ অনেকটাই স্বাভাবিক।
ভোজ্যতেলের মতো বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ।  ঈদের আগে ২৫ থেকে ৩০ টাকা বিক্রি হওয়া পেঁয়াজের দাম ঈদের পর কয়েক দফা বেড়ে এখন ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে ঈদের আগে ৭০০ টাকা কেজিতে ওঠা গরুর মাংসের দামে কোনো পরিবর্তন আসেনি।  বেশিরভাগ ব্যবসায়ী গরুর মাংসের কেজি ৭০০ টাকা বিক্রি করছেন।  তবে মহল্লার সাপ্তাহিক ব্যবসায়ীরা গরুর মাংসের কেজি বিক্রি করছেন ৭২০ টাকা কেজি।
গরুর মাংস বাড়তি দামে বিক্রি হলেও ব্রয়লার মুরগির দাম কিছুটা কমেছে।  ঈদের আগে ১৮০ থেকে ১৮৫ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া মুরগির দাম কমে এখন ১৭০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।  তবে সোনালি মুরগির কেজি আগের মতই ৩০০ থেকে ৩৪০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
ব্রয়লার মুরগির দাম কমার বিষয়ে খিলগাঁওয়ের ব্যবসায়ী মো. আলামিন বলেন, ঈদের পর ব্রয়লার মুরগির চাহিদা কমেছে।  এখন বিক্রি খুব কম হচ্ছে।  এ কারণে দাম কমতির দিকে।  আমাদের ধারণা সামনের সপ্তাহে ব্রয়লার মুরগির দাম আরও একটু কমতে পারে।
এদিকে সবজির বাজার ঘুরে দেখা গেছে, আগের মতো ব্যবসায়ীরা বেগুনের কেজি বিক্রি করছেন ৫০ থেকে ৭০ টাকা।  শসার কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকা।  লাউয়ের পিস বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা।  বরবটিও আগের মত ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
তবে পাকা টমেটোর দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে।  ঈদের আগে ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া টমেটো এখন ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।  দাম বাড়ার এ তালিকায় রয়েছে কাঁচা কলা ও পেঁপে।  ৩০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া পেঁপে এখন ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।  আর ৩০ টাকার কাঁচা কলার হালি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা।
অন্যদিকে পটল, ঢেঁড়স, ঝিঙে, চিচিঙ্গার দাম কিছুটা কমেছে।  পটলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা, যা আগে ছিল ৫০ থেকে ৬০ টাকা।  ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া ঢেঁড়সের দাম কমে ৩০ থেকে ৪০ টাকা হয়েছে।  ঝিঙে ও চিচিঙ্গার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা, যা আগে ছিল ৪০ থেকে ৫০ টাকা।
সবজির দামের বিষয়ে কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী খায়রুল হোসেন বলেন, ঢেড়স, পটল, ঝিঙে, চিচিঙ্গার সরবরাহ বাড়ায় এগুলোর দাম কমেছে।  আর পাকা টমেটোর সরবরাহ কমায় দাম বেড়েছে।  এখন দিন যত যাবে পাকা টমেটোর দাম বাড়বে।  কয়েকদিনের মধ্যে পাকা টমেটোর কেজি একশ টাকা হয়ে যেতে পারে।
এদিকে মাছ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মাছের দামে তেমন পরিবর্তন আসেনি।  রুই মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা।  এক কেজি ওজনের ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ১৩০০ থেকে ১৬০০ টাকায়।  তেলাপিয়া, পাঙ্গাস মাছ বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকায়।  শিং মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪৬০ টাকা কেজি।  শোল মাছ বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা এবং কৈ মাছ পাওয়া যাচ্ছে ২০০ থেকে ২৩০ টাকা কেজিতে।  পাবদা মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ