পাচারের অর্থ বিনা প্রশ্নে দেশে আনার সুযোগ অনৈতিক ও বেআইনি : টিআইবি

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
পাচার করা অর্থ ‘বিনা প্রশ্নে’ দেশে ফেরত আনার সুযোগ দেবে সরকার।  আসন্ন ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে এ সুযোগ রেখে আয়কর অধ্যাদেশে নতুন বিধান সংযোজনের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।  অর্থমন্ত্রীর এই প্রস্তাবকে ‘অনৈতিক ও বেআইনি’ আখ্যা দিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।  সংস্থাটির মতে, ‘এই সুযোগ অসাংবিধানিক, সংশ্লিষ্ট আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক, বৈষম্যমূলক এবং অর্থপাচারের মতো ঘৃণিত অপরাধের রাষ্ট্রীয় সুরক্ষার নামান্তর’।
শুক্রবার (১০ জুন) এক বিবৃতিতে এমন মন্তব্য করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘অর্থমন্ত্রী যেভাবেই ব্যাখ্যা করেন না কেন, নামমাত্র কর দিয়ে প্রশ্নহীনভাবে পাচার করা অর্থ বিদেশ থেকে আনার সুযোগ স্পষ্টতই অর্থ পাচারকারীদের অনৈতিক সুরক্ষা ও পুরস্কার প্রদান।  অথচ অর্থপাচার রোধ আইন-২০১২ এবং সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী অর্থপাচার গুরুতর অপরাধ।  দেশের আইন অনুযায়ী যার শাস্তি পাচারকৃত অর্থ বাজেয়াপ্ত করা এবং তার দ্বিগুণ জরিমানা ও ১২ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে।  (পাচার করা অর্থ বিনা প্রশ্নে ফেরত আনার) এই সুযোগ অর্থ পাচার তথা সার্বিকভাবে দুর্নীতিকে উৎসাহিত করবে।  যা সংবিধান পরিপন্থি এবং প্রধানমন্ত্রীর ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতা’ ঘোষণার অবমাননা’।
অন্যদিকে যারা বৈধ উপার্জননির্ভর করদাতা, তাদের জন্যও এই প্রস্তাব প্রকটভাবে বৈষম্যমূলক বলে উল্লেখ করেন তিনি।  তার মতে, করদাতারা ৭ শতাংশের কমপক্ষে তিনগুণ হারে কর দিয়ে থাকেন।  এটি বৈষম্য ও সংবিধানের মূলনীতির পরিপন্থি। অবিলম্বে এ সুযোগ বাতিল করতে হবে এবং অর্থপাচারকারীদের জবাবদিহি নিশ্চিতের জন্য যে আন্তর্জাতিক ও জাতীয় আইনি প্রক্রিয়া নির্ধারিত রয়েছে তা অনুসরণ করে পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিতে হবে।
টিআইবি মনে করে, পাচারকৃত অর্থ বৈধ করার সুযোগ প্রদান বিগত বছরগুলোর মতোই কালো টাকা সাদা করার মতো বেআইনি ও অন্যায় সুযোগের ধারাবাহিকতা মাত্র।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘এতে বিদেশে অর্জিত অর্থ ও সম্পদ দেশের অর্থনীতির মূলধারায় সংযুক্তির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ ও আয়কর রাজস্ব বৃদ্ধির প্রত্যাশা করা হচ্ছে।  কিন্তু আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা বলে, বারবার সুযোগ দিয়েও দেশের অর্থনীতিতে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ প্রত্যাশিত ফল বয়ে আনেনি, সরকারও আকাঙ্ক্ষিত রাজস্ব পায়নি।  তাই নতুন এই বিশেষ বিধানের উদ্দেশ্য ব্যর্থ হবে তা না বললেও চলে’।
কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যারা অর্থপাচার করেছেন তারা এধরনের প্রণোদনায় উৎসাহিত হয়ে পাচারকৃত অর্থ ফেরত নিয়ে আসবে- এরকম দিবাস্বপ্নের কোনো ভিত্তি নেই।  বিশেষ করে, যেখানে পাচারকৃত দেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমাদের দেশের পারস্পরিক আইনি সহায়তা চুক্তি ছাড়া এই অর্থ বা সম্পদ ফিরিয়ে আনা অসম্ভব।  বরং এর মাধ্যমে দুর্নীতিবাজ ও অর্থপাচারকারীরাই শুধু স্বস্তি বোধ করবেন, পুলকিত হবেন’।
অর্থপাচারকে এভাবে লাইসেন্স দেওয়া হলে দেশে দুর্নীতি ও অর্থপাচার আরও বিস্তৃতি ও গভীরতা লাভ করবে বলেও মন্তব্য করেন ড. ইফতেখারুজ্জামান।  তিনি একে ‘আত্মঘাতী পথ’ করে এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ