সেই বিশ্বব্যাংক উচ্ছ্বসিত পদ্মাসেতু নিয়ে

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
পদ্মা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়ার পর দুর্নীতির ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে অর্থায়ন গুটিয়ে নেয়া বিশ্বব্যাংক নিজেই এখন এই সেতুর বিপুল সম্ভাবনা নিয়ে উচ্ছ্বসিত।  নিজস্ব অর্থে বহুল প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতু নির্মাণ শেষে উদ্বোধনের ঠিক আগে সংস্থাটি বলছে, পদ্মা সেতু বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়াতে বিশাল অবদান রাখবে।
বাংলাদেশ ও ভুটানের দায়িত্বে নিয়োজিত বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর মার্সি টেম্বন বলেছেন, ‘বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের উন্নয়ন সঙ্গী হিসেবে বিশ্বব্যাংক স্বীকার করে যে, পদ্মা সেতু বাংলাদেশের জনগণ ও অর্থনীতির জন্য বহুমাত্রিক সুবিধা বয়ে আনবে।  এই সেতু দেশে সমন্বিত প্রবৃদ্ধি অর্জনে গতি সঞ্চার এবং দারিদ্র্য কমাতে ভূমিকা রাখবে’।
পদ্মা সেতু নিয়ে মার্সি টেম্বনের মতামত জানতে চাওয়া হয়-
১. বাংলাদেশের মানুষের স্বপ্নের সেতু পদ্মা সেতু চালু হচ্ছে ২৫ জুন।  বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এই সেতু কতটা প্রভাব ফেলবে?  জিডিপিতে কত শতাংশ যোগ হতে পারে?
২. বিশ্বব্যাংক-এডিবিসহ অন্য উন্নয়ন সহযোগীদের অর্থায়নেই এই সেতু নির্মাণের কথা ছিল।  কিন্তু দুর্নীতির অভিযোগে বিশ্বব্যাংক এই সেতুতে অর্থায়ন থেকে পিছিয়ে যায়।  বাংলাদেশ সরকার বরাবরই দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করেছে। অনেক টানাপড়েন হয়েছে বিষয়টি নিয়ে।  শেষ পর্যন্ত কানাডার আদালতে দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি।  বাংলাদেশ সরকার বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ‘না’ করে দেয়।  সরকার নিজস্ব অর্থে সেতুটি নির্মাণ করেছে।  বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর হিসেবে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?
৩. বাংলাদেশ সরকার পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন ‘না’ করে দেয়ার পর সরকারের সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের সম্পর্কের কোনো অবনতি হয়েছে কি না?
প্রায় এক মাস পর ২১ জুন ফিরতি মেইল করেন মার্সি টেম্বন।  তবে তিনি তিনটি প্রশ্নের আলাদা উত্তর না দিয়ে সংক্ষিপ্ত ওই প্রতিক্রিয়া জানান।
পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন বলেও নিশ্চিত করেন মার্সি টেম্বন।
বাংলাদেশের অহংকারের প্রতীক পদ্মা সেতু ২৫ জুন উদ্বোধন করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  পরদিনই যান চলাচল শুরু হবে সেতুতে।
সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে জানান পদ্মা সেতু থেকে সরে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে এখন আক্ষেপ করছে বিশ্বব্যাংক।  তিনি বলেন, ‘শেষ পর্যন্ত বিশ্বব্যাংক বলেছে, পদ্মা সেতু থেকে সরে যাওয়া ভুল হয়েছে’।
বিশ্বব্যাংকসহ চারটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের ঋণের ওপর ভর করে ২০১১ সালের জানুয়ারিতে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প চূড়ান্ত করে আওয়ামী লীগ সরকার।  সেতুর নির্মাণ কার্যক্রম এগিয়ে যাওয়ার মধ্যে ওই বছরের সেপ্টেম্বরে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়ে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তোলে বিশ্বব্যাংক।  টানাপড়েনের মধ্যে সংস্থাটি অর্থায়ন স্থগিত করলে তদন্ত শুরু করে দুদক।
ওই তদন্ত পর্যবেক্ষণে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সাবেক প্রধান আইনজীবী ওকাম্পোর নেতৃত্বে ২০১২ সালে দুই দফায় বাংলাদেশে আসে তিন সদস্যের বিশ্বব্যাংকের পর্যবেক্ষক প্যানেল।
পর্যবেক্ষক দলের পরামর্শে ২০১২ সালের ডিসেম্বরে দুদকের করা মামলায় জেল খাটতে হয় সচিব মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়াকে।  পরে অবশ্য দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া যায়নি উল্লেখ করে অভিযোগপত্র দেয় দুদক।  ২০১৭ সালে কানাডার একটি আদালতও বিশ্বব্যাংকের আনা দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগের প্রমাণ পায়নি বলে জানায়।
২০১২ সালের ৪ জুলাই জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দেন, `পদ্মা সেতু করার জন্য দেশে আমাদের ১৬ কোটি মানুষ আছে, ৮০ লাখ প্রবাসী আছে। বাংলার মানুষ সারা জীবন কি অন্যের সাহায্যে চলবে?  নিজের পায়ে দাঁড়াবে না?  আত্মনির্ভরশীল হবে না?  পদ্মা সেতু আমরা করবই।’ সূত্র- নিউজবাংলা

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ