স্বপ্ন ছুঁয়েছে বাংলাদেশ

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
একটা সেতু।  একটা স্বপ্ন; আর সেই স্বপ্নের নাম পদ্মাসেতু।  তবে এখন আর সেটি স্বপ্ন নয়।  দীর্ঘ অপেক্ষার পালা শেষে পদ্মাসেতুর স্বপ্ন ছুঁয়েছে বাংলাদেশ।  আজ শনিবার ১২ টায় মাওয়া প্রান্তে ফলক উন্মোচনের মাধ্যমে পদ্মাসেতুর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এর আগে, বেলা ১১টা ৪৯ মিনিটে মাওয়া প্রান্তে টোল প্রদান করেন শেখ হাসিনা।  সকাল ১০ টায় পদ্মাসেতুর মাওয়া পয়েন্টে পৌঁছান তিনি।  এরও আগে সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে ঢাকার তেজগাঁও বিমানবন্দর থেকে একটি হেলিকপ্টারে যাত্রা শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী।
পদ্মাসেতুর স্বপ্ন দেখা শুরু হয়েছিল প্রায় দুই যুগ আগে।  ২০১৪ সালের ৭ ডিসেম্বর পদ্মাসেতুর নির্মাণকাজ শুরুর পর আট বছরের মাথায় স্বপ্ন সত্যি হলো।  তারও আগে, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানকে ঘিরে পদ্মার দুই পাড়ে সেজেছিল নানা রঙে।  মুন্সীগঞ্জের মাওয়া, শরীয়তপুরের জাজিরা ও মাদারীপুরের শিবচর উপজেলা এলাকা ব্যানার-ফেস্টুনে সাজানো হয়।  সড়কের দুই পাশে এবং গুরুত্বপূর্ণ ভবনগুলো নিয়ন আলোয় আলোকিতও হয়।  এসব এলাকার মানুষের মধ্যেও এক রকম উৎসবের আমেজ বইছে।  দেশের টাকায় নির্মিত সবচেয়ে বড় অবকাঠামো তাদের এলাকায় নির্মাণ হওয়ায় গর্বিত স্থানীয়রা।
পদ্মাসেতুর উদ্বোধনকে ঘিরে দুই পাড়ে নেয়া হয় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা।  বলা যায়, পুরো এলাকা নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা।  এনএসআই, এসবি, ডিবি, র‌্যাব-পুলিশসহ সব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সদা তৎপর রয়েছেন।
পদ্মাসেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানকে ঘিরে পদ্মাসেতুর দুই প্রান্তের এলাকাকে ঢেলে সাজানো হয়।  মাওয়া প্রান্তে ঢাকা থেকে যাওয়ার পথে বুড়িগঙ্গা দ্বিতীয় সেতু থেকেই রাস্তার দুই ধার সাজানো হয়।  বড় বড় ব্যানার ও সাইনবোর্ড শোভা পায়।  আর ঢাকা-মাওয়া হাইওয়ে এক্সপ্রেসওয়ের একেবারে শুরু থেকে মাওয়া ঘাট পর্যন্ত রাস্তার দুই ধারে ওয়াল এবং আশপাশের বড় বড় বেশ কিছু ভবনে আলোকসজ্জা করা হয়েছিল।
মাওয়া প্রান্তে পদ্মাসেতুর একেবারে গোড়ায় স্থাপন করা হয়েছিল একটি বড় মঞ্চ ও প্যান্ডেল।  পুরো প্যান্ডেলটি ত্রিপল দিয়ে ঢেকে রাখা হয়।  র‌্যাবের মহাপরিচালক সভাস্থলটিও পরিদর্শন করেছিলেন।
জাজিরা প্রান্তে মূল জনসভাস্থলটিকে ঢেলে সাজানো হয়েছিল।  এখানে মূল যে মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে সেটি করা হয়েছে পদ্মাসেতুর স্প্যানের আদলে।  এখানে দশ লাখেরও বেশি মানুষের সমাগম ঘটে।  সভাস্থলে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে মানুষকে বসতে দেওয়া হয়েছে।  এজন্য বাঁশ দিয়ে আলাদা করে ঘিরে দেওয়া হয়েছিল।
উল্লেখ্য, পদ্মাসেতুর (মূল সেতু) দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। দুই প্রান্তের উড়ালপথ (ভায়াডাক্ট) ৩ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার।  সব মিলিয়ে সেতুর দৈর্ঘ্য ৯ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার।  পদ্মাসেতু প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা।  পদ্মাসেতু প্রকল্পের টাকায় সেতুতে রেল চলাচলের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।  এখনও রেললাইন বসানো শুরু হয়নি।
দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলাকে সারাদেশের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত করবে স্বপ্নের পদ্মাসেতু।  এ সেতুর মাধ্যমে মোংলা বন্দর ও বেনাপোল স্থলবন্দরের সঙ্গে রাজধানী এবং বন্দরনগরী চট্টগ্রামের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হবে।  চলাচল সহজ করার পাশাপাশি অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে পদ্মাসেতু।
সমীক্ষা অনুযায়ী, পদ্মাসেতু প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ১ দশমিক ২৩ শতাংশ হারে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) বৃদ্ধি পাবে।  দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জিডিপি বাড়বে ২ দশমিক ৩ শতাংশ।
২০০১ সালের ৪ জুলাই পদ্মাসেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  এরপর সেতুর কাজ কয়েক বছর এগোয়নি।  ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসার পর থেমে থাকা পদ্মাসেতু প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়।  ২০১২ সালে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিশ্বব্যাংক ঋণচুক্তি বাতিল করে।  ২০১৩ সালের ৪ মে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৪ সালের ৭ ডিসেম্বর মূল সেতুর নির্মাণ ও নদী শাসন কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।  এরপর ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর খুঁটিতে বসানো হয় প্রথম স্প্যান।  ২০০৭ সালে একনেকে পাস হওয়া পদ্মাসেতু প্রকল্পের ব্যয় ছিল ১০ হাজার ১৬২ কোটি টাকা।  ২০১১ সালে ব্যয় বাড়িয়ে করা হয় ২০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা।  ২০১৬ সালে দ্বিতীয় দফা সংশোধনের পর ব্যয় দাঁড়ায় ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা।  বর্তমানে ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ