চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ১৭০ টাকা : প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপে চা বাগান শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ১৭০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। শনিবার (২৭ আগস্ট) গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে চা বাগান মালিকপক্ষের সংগঠন বাংলাদেশ টি অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) বৈঠকের পর এ সিদ্ধান্ত আসে।
বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস গণভবন গেটে সাংবাদিকদের এ কথা জানান। ব্রিফিংয়ে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব বলেন, সবকিছু আলোচনা করে যা হয়েছে সেটা হচ্ছে শ্রমিকদের পক্ষে প্রধানমন্ত্রী নির্ধারণ করে দিয়েছেন ১৭০ টাকা নতুন দৈনিক মজুরি।
নতুন দৈনিক মজুরি অনুযায়ী চা শ্রমিকদের অন্যান্য সুবিধা আনুপাতিক হারে বাড়বে জানিয়ে আহমদ কায়কাউস বলেন, এখানে ব্যাখ্যা করা দরকার, চা শ্রমিকদের বিভিন্ন সুবিধা দেওয়া হয়, যেটা মালিকপক্ষ বহন করে। সেক্ষেত্রে যেটা আনুপাতিক হারে বেড়ে যাবে, যেমন নগদ মজুরি ১৭০ টাকা করা হয়েছে, তার সঙ্গে হবে প্লাকিং বোনাস আর কারাখানা অধিকার কাজের আয় সেটা আনুপাতিক হারে বাড়বে। বার্ষিক ছুটি ভাতা সেটাও কিন্তু আনুপাতিক হারে বাড়বে। বেতনসহ উৎসব ছুটি আনুপাতিক হারে বাড়বে। অসুস্থজনিত ছুটি সেটাও বাড়বে আনুপাতিক হারে। এগুলো সবগুলোতে টাকা দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, ভবিষ্যত তহবিলে নিয়োগকর্তার চাঁদা, কাজে উপস্থিতি অনুযায়ী বার্ষিক উৎসব ভাতা সেটাও আনুপাতিক হারে বাড়বে। মোট প্রদত্ত চাঁদার ৫ শতাংশ প্রশাসনিক খরচ সেটাও আনুপাতিক হারে বাড়বে। এছাড়াও আরও রয়েছে ভর্তুকি মূল্যে রেশন যেটা দেয়, যেটা ২৮ টাকা দিয়ে কিনে, দুই টাকায় দেয় শ্রমিকদের।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব বলেন, চিকিৎসা সুবিধা, অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিকদের পেনশন। চা শ্রমিক পোষ্যদের শিক্ষা বাবদ ব্যয়, রক্ষাবেক্ষণ, গরু চড়ানো চকিদার ব্যয় এবং বিনামূল্যে বসতবাড়ি ও রক্ষাবেক্ষণ বাবদ শ্রমিক কল্যাণ কর্মসূচি এবং বাসাবাড়িতে উৎপাদন প্রবৃত্তি বাবদ আয়। এসব কিছু মিলিয়ে যেটা পড়ে, সেটার হিসাব এখনও তাৎক্ষণিক করতে পারেনি। তবে দেখা যাচ্ছে, সেটা হয়তো সাড়ে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা দৈনিক পড়বে। এটি হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চা শ্রমিকদের কাজে যোগদানের আহ্বান জানিয়ে আহমদ কায়কাউস বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন সবাইকে কাজে যোগদান করার জন্য। যেহেতু উনি সবার কাছ থেকে শুনেছেন, তিনি বললে তারা কাজে যোগ দেবেন। তারা আশা করেছেন প্রধানমন্ত্রী তাদের পক্ষ হয়ে মালিক পক্ষের সঙ্গে কথা বলে মজুরি বাড়াবেন, সেটি উনি করেছেন। রবিবার (২৮ আগস্ট) থেকে যেন সবাই কাজে যোগ দেয়। প্রধানমন্ত্রী আরেকটি কথা বলেছেন, শিগগিরই তিনি চা শ্রমিকদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করবেন।
এর আগে, আজ শনিবার (২৭ আগস্ট) বিকেল সোয়া চারটার দিকে গণভবনে দৈনিক ৩০০ টাকা মজুরি বাড়ানোর দাবিতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে চা বাগান মালিকদের এ বৈঠক শুরু হয়। এতে দেশের বৃহৎ ১৩টি চা বাগান মালিক উপস্থিত ছিলেন।
১২০ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকা করার দাবিতে ৯ আগস্ট থেকে আন্দোলনে নামেন দেশের ১৬৬ চা বাগানের দেড় লাখের বেশি শ্রমিক। সেদিন থেকে চার দিন পর্যন্ত দুই ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করেন তারা। এরপর ১৩ আগস্ট থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য পুরোদমে কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ শুরু করেন চা বাগানের শ্রমিকরা।
১৯ আগস্ট রাতে মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৪৫ টাকা করার বিষয়ে একটি চুক্তি হলেও সেটি প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন চা বাগানের শ্রমিকরা। এর মধ্যে কয়েক দফা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক হলেও তা সমাধান হয়নি। মজুরি বাড়ানোর দাবিতে আন্দোলনে থাকা শ্রমিকদের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর ভিডিও বার্তার দাবি জানান শ্রমিকরা।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ