আমানতে সুদ বেশি থাকবে বেসরকারি ব্যাংকে : অর্থমন্ত্রী

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল

অর্থ ও বাণিজ্য ডেস্ক : ব্যাংকের সুদ হার বেঁধে দেওয়ার পর আমানতকারীদের সবাই যাতে সরকারি ব্যাংকের দিকে ঝুঁকে না পড়েন, তা ঠেকাতে বেসরকারি ব্যাংকে ডিপোজিটে মুনাফা বেশি থাকবে বলে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানিয়েছেন। আগামি এপ্রিল থেকেই ব্যাংকের নতুন সুদ হার বাস্তবায়নের আশা প্রকাশ করে তিনি বলেছেন, সব ঋণের সর্বোচ্চ সুদ হার ৯ শতাংশ এবং আমানতের সুদ হার ৬ শতাংশ বাস্তবায়নে কঠোর থাকবে সরকার।

গতকাল বুধবার সচিবালয়ে সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন অর্থমন্ত্রী। আমানতে সুদ হার নিয়ে তিনি বলেন, ‘যদি সরকারি ও বেসরকারি উভয় ব্যাংকে ডিপোজিটের ক্ষেত্রে সুদ হার ৬ শতাংশ করে দেওয়া হয় তাহলে সবাই সরকারি ব্যাংকে টাকা রাখবে। তাই সরকারি ব্যাংকে ডিপোজিটের সুদ হার হবে সাড়ে ৫ শতাংশ এবং বেসরকারি ব্যাংকে ডিপোজিটের ক্ষেত্রে সুদ হার হবে ৬ শতাংশ। যদি দুই জায়গায় ৬ শতাংশ করি তাহলে বিভিন্ন কারণে সবাই চলে যাবে সরকারি ব্যাংকে। এজন্য আমরা এক্ষেত্রে আধা পার্সেন্ট গ্যাপ রাখছি’।

আগে ব্যাংকাররা কথা দিলেও ঋণের সুদ হার এক অঙ্কে আনেনি এবার করবে কি না প্রশ্ন করা হলে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘ব্যাংকাররা কো-অপারেশন করবে, সরকারের সাথে ব্যাংকগুলোর কোনো বৈরিতা নেই। ব্যাংকগুলোর তো লস হচ্ছে না। ব্যাংকাররা যদি ৬ শতাংশ সুদে ডিপোজিট পায় তাহলে ৯ শতাংশে ঋণ দিতে পারবে না কেন? আগে করেনি, সেজন্য সরকার এবার অনেক বেশি স্ট্রিক্ট। আগে তাদের (ব্যাংকগুলোর) উপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল, কেউ কেউ বাস্তবায়ন করেছে, কেউ কেউ করেনি। কিছু পেতে হলে কিছু দিতে হবে। সুতরাং এবার আমরা বলছি, অপেক্ষা করব তবুও বাস্তবায়ন করব’।

১ জানুয়ারি থেকে ব্যাংকের শিল্প ঋণে সুদ হার ৯ শতাংশ করার কথা থাকলেও সেটা এপ্রিলে পিছিয়ে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে মুস্তফা কামাল বলেন, ‘ব্যাংক ঋণের সর্বোচ্চ সুদ হার ৯ শতাংশ এবং আমানতের সুদ ৬ শতাংশ বাস্তবায়নের বিষয়টি প্রথম থেকেই ছিল। কিন্তু প্রথম দিকে এটি আমরা ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করব বলে ধারণা ছিল। কিন্তু আমরা পরে দেখলাম যে, শুধু আমরা ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে ঋণে সুদ হার ৯ শতাংশ বাস্তবায়ন করি তাহলে অনেক ইন্ডাস্ট্রি বাদ পড়ে যাবে, অনেক খাত বাদ পড়ে যাবে। এদেরকে বলা হবে তোমাদেরটা ম্যানুফ্যাকচারিং না, কবে বসিয়েছ, লাইসেন্স কই বিভিন্ন কথা-বার্তা বলবে’।

এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার কথা জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এটা বন্ধ করার জন্য প্রধানমন্ত্রী বললেন, যদি সফলতা পেতে চাও তাহলে সব ঋণ গ্রহীতাকে এ সুবিধা দাও। কোন সেক্টরে ঋণ নিলো এটা তার ব্যাপার। ঋণ গ্রহীতা যা-ই করবেন তাতেই দেশের লাভ হবে। ট্রেড করলেও দেশের লাভ হবে, একটি ইন্ডাস্ট্রি, সেলুন করলেও লাভ হবে। এজন্য প্রধানমন্ত্রী বলে দিয়েছেন যে, সকল খাতেই এটা বাস্তবায়ন করতে হবে। সেজন্য কয়েক দিন সময় লাগবে’। খবর বিডিনিউজের

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এরপর যখন আমরা ব্যাংকারদের সাথে বসলাম তখন তারা বললেন যে, যেহেতু এক রকম আইডিয়া নিয়েছিলাম, এখন আরেকটা আইডিয়া দিচ্ছেন পাশাপাশি আমাদের কিছু শর্ট টার্ম ডিপোজিট আছে যেগুলো দুই-তিন মাসের মধ্যে ম্যাচিউরড হবে তাই আমরা এটি বাস্তবায়নে তিন মাস সময় চাচ্ছি। তবে এটি তারা বাস্তবায়নে একমত, এটা বাস্তবায়ন করা উচিত বলেও জানিয়েছেন তারা। এজন্যই আমরা তাদের তিন মাস সময় দিয়েছি। আগামি এপ্রিল মাস থেকেই আমরা আশা করি, এটি বাস্তবায়িত হবে। এজন্য সার্কুলার ইস্যু করা হবে, না হলে মিসআন্ডারস্ট্যান্ডিং হবে। এটা অলরেডি সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে, সার্কুলার ইস্যু না করলেও তারা এটি বাস্তবায়ন করবে। তারাও তো সরকারের অংশ। সুতরাং এটা করবে’।

সব ক্ষেত্রেই কি ডিপোজিটে সুদ হার ৬ শতাংশ হবে- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘ডিপোজিটের জন্য কোনো ব্যাংকই কাউকে ৬ শতাংশ সুদের বেশি অফার করতে পারবে না। আমাদের যে কোনো কারণেই হোক ডিপোজিটে বেশি সুদ দেওয়া হয়। এটা আর সইতে পারছি না। সে কারণে কঠিন সিদ্ধান্ত নিচ্ছি’।

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এটা আমিও ফিল করি যে, রাতারাতি অথবা তিন বা ছয় মাসের ভেতরে এ রকম একটা সিদ্ধান্ত নিচ্ছি। কিন্তু উপায় ছিল না। না হলে শিল্পায়ন হবে না। এ দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমানো যাবে না’।

সরকারি ডিপোজিট অর্ধেক থাকার বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকারি ডিপোজিট সরকারি-বেসরকারি উভয় ব্যাংককে দেব। পাবলিক ব্যাংকগুলো সবই প্রায় বড়। কিন্তু প্রাইভেট সেক্টরে অনেক বড় ব্যাংকও আছে আবার ছোট ব্যাংকও আছে। তাই এ ব্যাংকগুলোকে যার ‘পেইড অব ক্যাপিটাল’ বেশি তাকে একটু বেশি দেওয়া হবে, আর যার কম সে কম পাবে। বেসরকারি ব্যাংক খাতকে মোট ডিপোজিটের যে ৫০ শতাংশ দেওয়া হবে, সেটা থেকে ভাগ করে দেওয়া হবে’।