বঙ্গবন্ধু টানেল সংযোগ সড়কের ৬০০ পরিবার টাকা পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তায়

দক্ষিণ চট্টগ্রাম প্রতিনিধি, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
বঙ্গবন্ধু টানেল সংযোগ সড়কে উচ্ছেদকৃত ৬০০ পরিবার তাদের ক্ষতিপূরণের টাকা পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েছেন। আগামি আগামি ৩০ অক্টোবর থেকে বঙ্গবন্ধু টানেল সংযোগ সড়কের ভূমি অধিগ্রহণের অতিরিক্ত মঞ্জুরীর টাকা দেয়া বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্তে এমন অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে। ইতোমধ্যে এই সিদ্ধান্ত মাসের শুরুতে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে সেতু বিভাগ। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে ৪০ শতাংশ (৬০০ পরিবার) ভূমি মালিক ক্ষতির শিকার হবেন। নানা জটিলতার কারণে এখনো তারা জেলা প্রশাসনের এলএ শাখা থেকে তাদের ভূমির মূল টাকা উত্তোলন করতে পারেননি।
এই সিদ্ধান্ত স্থগিত করার জন্য আনোয়ারা উপজেলার বৈরাগ, চাতরী ও বন্দর মৌজার প্রায় ৬০০ পরিবারের পক্ষে স্থানীয় বৈরাগ ও চাতরী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের স্বাক্ষরিত একটি স্মারকলিপি গত ২৩ অক্টোবর চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক বরাবর প্রদান করা হয়েছে। স্মারকলিপির একটি অনুলিপি বাংলাদেশ সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিব, সেতু বিভাগের নির্বাহী পরিচালক, কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ প্রকল্পের উপ-প্রকল্প পরিচালক, আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী অফিসারকেও পাঠানো হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু টানেল প্রকল্পের অধিগ্রহণকৃত ভূমির মালিকেরা সেতু বিভাগের এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে ৪০ শতাংশ ভূমি মালিককে অপূরণীয় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি অনুরোধ জানান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বঙ্গবন্ধু টানেল প্রকল্পের এক কর্মকর্তা জানান, ক্ষতিগ্রস্তদের টাকা প্রদানে সরকার আন্তরিক। ৩০ অক্টোবরের বিষয়ে আমরা গত ছয় মাস আগে থেকে বিভিন্নভাবে বলে আসছি। সরকার হয়তো মেয়াদ বৃদ্ধি করতেও পারে। তবে এলএ শাখা থেকে যদি অধিগ্রহণের মূল টাকা ছাড় করতে না পারে তাহলে সময় বৃদ্ধি করার পরও অনেকে সুযোগটা নিতে পারবে না।
সূত্রে জানা যায়, বঙ্গবন্ধু টানেলের সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য এল এ মামলা ৩০/১৬-১৭ ও ৩৫ /১৭-১৮ মূলে বৈরাগ বেলচূড়া, চাতরী ও বন্দর মৌজার প্রায় ৫০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। ২০১৬-১৭ সালে ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণের টাকা ছিল দেড় গুণ। পরবর্তীতে সরকার সেটা তিনগুণ করেছে। তখন অধিগ্রহণকৃত ভূমির প্রকৃত বাজার দরের সাথে সমন্বয় করতে সেতু বিভাগ ক্ষতিগ্রস্ত ভূমি মালিকদের অতিরিক্ত মঞ্জুরির টাকা প্রদান করা শুরু করে। বিশ^ ব্যাংকের অর্থায়নে এই অতিরিক্ত মঞ্জুরির টাকা প্রদান করা হয় বলে জানা যায়। এতে করে ভূমি মালিকরা কিছুটা হলেও তাদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারছেন। কিন্তু চলতি মাসের শুরুতে সেতু বিভাগের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়- আগামি ৩০ অক্টোবর থেকে সেতু বিভাগ এই অতিরিক্ত মঞ্জুরির টাকা প্রদান বন্ধ করে দিবে। সেতু বিভাগ অতিরিক্ত মঞ্জুরির টাকা দেয়া বন্ধ করে দিলে পথে বসতে হবে অন্তত ৬০০ পরিবারকে। ক্ষতিগ্ররা ভূমির মালিকরা সেতু বিভাগের এই মঞ্জুরির টাকা প্রদানের মেয়াদ বৃদ্ধি করার আবেদন জানান।
ক্ষতিগ্রস্ত ভূমি মালিক বৈরাগ ইউপি সদস্য মুছা তালুকদার বলেন, মামলা, মালিকানা ও নাবালক জটিলতায় এখনো ৪০ শতাংশ ভূমি মালিক এলএ শাখা থেকে তাদের ভূমির মূল টাকা উত্তোলন করতে পারেননি। এই মুহুর্তে সেতু বিভাগের অতিরিক্ত মঞ্জুরির টাকা প্রদান বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্তে পথে বসতে হবে ৬০০ পরিবারকে। আমরা চাই সেতু বিভাগ টাকা প্রদানের মেয়াদ আরো কয়েক বছর বৃদ্ধি করুক। সিদ্ধান্তটি পরিবর্তন করে সময় বৃদ্ধি করার জন্য আমরা ভূমিমন্ত্রী, সড়ক ও সেতু বিভাগের সচিব, বঙ্গবন্ধু টানেল উপ-প্রকল্প পরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
বৈরাগ ইউপি চেয়ারম্যান নোয়াব আলী জানান, বঙ্গবন্ধু টানেলের সংযোগ সড়কের জন্য বৈরাগ ইউনিয়ন থেকে ২০ একরেরও বেশি ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এখনো অর্ধেকের কাছাকাছি ভূমি মালিক তাদের টাকা পায়নি। এ অবস্থায় সেতু বিভাগের টাকাটা চলে গেলে বিপুল পরিমাণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমরা চাই সেতু বিভাগ আরো কয়েক বছর সময়টা বৃদ্ধি করুক।

ডিসি/এসআইকে/এসইউ