খাতুনগঞ্জে সরবরাহ কমে গেছে

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
ভারত পেঁয়াজ রফতানির ওপর ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেওয়ার পর দেশে পেঁয়াজের বাজার বেশ অস্থির। কেজিতে দাম বেড়েছে ১৫ থেকে ২০ টাকা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরবরাহ সংকটের কারণে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। তবে এর পেছনে অসাধু ব্যবসায়ী, আড়তদার ও আমদানিকারকদের কারসাজি দেখছে প্রশাসন।
দেশে ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জেও চাহিদার তুলনায় পেঁয়াজ আসছে কম। গত সফতাহে খাতুনগঞ্জের পাইকারি মোকামে ভারত থেকে আমদানি করা যে পেঁয়াজ মানভেদে ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে, এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকার ওপরে। এ হিসাবে কয়েক দিনের ব্যবধানে কেজিতে দাম বেড়েছে প্রায় ২০ টাকা। তবে খুচরায় ভোক্তাদের এক কেজি পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে ৭০ টাকার ওপরে। সরবরাহ স্বাভাবিক না হলে দাম আরও বাড়ার ইঙ্গিত দিচ্ছেন খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা। খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজ আসে প্রধানত হিলি স্থলবন্দর, চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ ও ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে। গত সফতাহেও এখানে প্রতিদিন অন্তত ৪০ ট্রাক পেঁয়াজ আসে, আর এখন আসছে ১৫ থেকে ২০ ট্রাক। অর্থাৎ সরবরাহ অর্ধেকে নেমে এসেছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশে পেঁয়াজের বার্ষিক চাহিদা প্রায় ৩৫ লাখ টন, যার বড় অংশ ভারত থেকে আমদানি হয়। গত ১৯ আগস্ট ভারত পেঁয়াজ রফতানির ওপর ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ঘোষণা দেওয়ার পর বাংলাদেশে পণ্যটির দাম ঊর্ধ্বমুখী।
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, ‘কয়েক দিনের মধ্যে পেঁয়াজের দাম এত বেশি বেড়ে যাওয়া কারসাজি ছাড়া কিছু নয়। এটি সরবরাহ সংকট নাকি সিন্ডিকেটের কারসাজি, তা খতিয়ে দেখতে শিগগির তদারকি শুরু হবে’।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ‘অসাধু ব্যবসায়ীরা সব সময় সুযোগের অপেক্ষায় থাকেন। ভারতের শুল্ক আরোপের প্রভাব এত তাড়াতাড়ি বাজারে পড়ার কথা নয়। আমদানি করা হাজার হাজার টন পেঁয়াজ এখনও মোকামে। তাহলে কেন এভাবে হঠাৎ দাম বাড়বে?’ কারসাজির সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করতে প্রশাসনের প্রতি দাবি জানান তিনি। দাম নিয়ন্ত্রণে কঠোরভাবে বাজার তদারকি করার বিকল্প নেই বলেও মন্তব্য করেন।
খাতুনগঞ্জের পেঁয়াজ বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ বাণিজ্যালয়ের স্বত্বাধিকারী চন্দন কুমার পোদ্দার বলেন, ‘দুই দিনের ব্যবধানে খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজের সরবরাহ অর্ধেকে নেমেছে। ভারত ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপের কথা বলার পর থেকে বাজারে পেঁয়াজ আসছে কম। সরবরাহ সংকটে তাই দামও বাড়ছে’। সরবরাহ স্বাভাবিক না হলে দাম আরও বাড়বে বলে মনে করেন তিনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক আমদানিকারক বলেন, পেঁয়াজের দাম এরই মধ্যে কেজিতে প্রায় ২০ টাকা বেড়েছে। দাম আরও বাড়বে সেই আশায় সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছেন বড় আমদানিকারকরা। দাম আরেক দফা বাড়লে তারা সরবরাহ বাড়িয়ে দেবেন, এতে মুনাফা হবে বেশি।
দেশের কৃষকদের স্বার্থে সরকার গত ১৫ মার্চ ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতিপত্র প্রদান বন্ধ করে দেয়। এরপর জুনে হঠাৎ করে বাজারে পেঁয়াজের সংকট সৃষ্টি হয়। ৩৫ টাকা থেকে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ১০০ টাকায় পৌঁছে। এর পেছনে ব্যবসায়ীদের কারসাজির প্রমাণ পায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন।
গত ১৪ জুন আবার পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদন দেয় সরকার। আমদানি শুরুর কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৭০ টাকা পর্যন্ত কমে।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন বলছে, সরবরাহ কমিয়ে সংকট দেখানো অসাধু ব্যবসায়ীদের পুরোনো কৌশল।

ডিসি/এসআইকে/আরএআর