১৫ বাংলাদেশি আটক ভিয়েতনামে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, দৈনিক চট্টগ্রাম  >>>
১৫ জন প্রবাসী বাংলাদেশিকে আটক করেছে ভিয়েতনামের পুলিশ। বুধবার (১২ আগস্ট) সকালে হো চি মিন এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়।  আটকের পর তাদেরকে একটি ক্যাম্পে নিয়ে যায় পুলিশ।  ওই ক্যাম্প থেকেই কয়েকজন বাংলাদেশি তাদের আটকের খবর জানিয়েছেন।
জানা গেছে, আটক ওই ১৫ বাংলাদেশি ভিয়েতনামের ভুং তাও থেকে হ্যানয়ে বাংলাদেশ দূতাবাসে যাওয়ার জন্য মঙ্গলবার (১১ আগস্ট) দুপুরে রওনা করেন।  ভুং তাও এলাকা থেকে হ্যানয়ে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের দূরত্ব প্রায় ১ হাজার ৬৭৭ কিলোমিটার।  সেখানে যেতে ৪০ ঘণ্টারও বেশি সময় লাগে।  পথে রাতে হলে তারা হো চি মিন এলাকায় অবস্থান করেন।  বুধবার সকালে ফের হ্যানয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে তারা বাসে ওঠার সময় পুলিশ তাদের আটক করে নিয়ে যায়।
আটক বাংলাদেশিদের মধ্যে কয়েকজন গত কয়েকদিন ধরে দেশে ফিরে আসার জন্য ভিয়েতনামে বাংলাদেশ দূতাবাসে যোগাযোগের চেষ্টা করেন।  তাদের কয়েকজন এর আগে জানিয়েছিলেন- তারা ভিয়েতনামে পৌঁছার পরই দালালরা তাদের পাসপোর্ট নিয়ে নেয়।  যে কাজের কথা বলে তাদের নেওয়া হয় এবং যে পরিমাণ বেতন দেওয়ার কথা ছিল, তার কোনোটাই সঠিক ছিল না।  এমন পরিস্থিতিতে তারা দেশে ফিরে আসতে চান। আটক ১৫ বাংলাদেশির মধ্যে ১৪ জনের নাম জানা গেছে।  তারা হলেন- সায়েফ, শফিক, চাঁদ আলী, মোমিন, কাদির, ইসমাইল, আলী, নজরুল, মামুন, শহীদ, আনোয়ার, রাজু, অমিক ও সজিব।
নাম প্রকাশ না করে আটক এক বাংলাদেশি ফোনে বলেন, ‘বাসে ওঠার সময় পুলিশ আমাদের আটক করেছে।  সকাল থেকে পুলিশের হেফাজতে থাকলেও কোনো কিছু খেতে দেয়নি।  আমাদের কাছে পাসপোর্ট চেয়েছে।  কিন্তু আমরা দিতে পারিনি।  কারণ, দালালরা আগেই আমাদের পাসপোর্ট রেখে দিয়েছে।  পুলিশ আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করছে।  আমরা তাদের বোঝানোর চেষ্টা করছি- আমাদের পাসপোর্ট আছে, তবে দালালের কারণে প্রতারিত হয়েছি’।
আটক ১৫ বাংলাদেশির মধ্যে কয়েকজন পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি এজেন্সির মাধ্যমে চাকরি নিয়ে ভিয়েতনামে গেছেন।  আটক হওয়ার আগেই তারা জানিয়েছিলেন, সেদেশে যাওয়ার আগে তাদের বলা হয়েছিল যে, ‘ভিয়েতনামে তাদেরকে মাসে ৫০০ ইউএস ডলার বেতন দেওয়া হবে, থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা কোম্পানি করবে।  কিন্তু ভিয়েতনামে আসার পরই তারা বুঝতে পারেন যে, তারা প্রতারণার শিকার হয়েছেন।  বিমানবন্দরে নামার পরই তাদের পাসপোর্ট নিয়ে নেয় সেদেশে থাকা প্রতারক চক্রের সদস্যরা।  এজেন্টের মাধ্যমে বিভিন্ন জায়গায় অল্প সময়ের জন্য কাজ করালেও কর্মীদেরকে কোনো বেতন দেওয়া হয় না।  দালালরা বেতন নিয়ে যায়।  বেতন চাইতে গিয়ে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন কেউ কেউ’।
তবে এই ১৫ জন আটকের তথ্য জানে না বাংলাদেশ দূতাবাস।  যোগাযোগ করা হলে ভিয়েতনামে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের পার্সোনাল অফিসার মো. সালাম বলেন, ‘কোনো বাংলাদেশি আটক হয়েছেন আমরা এমন কোনো খবর পাইনি’।
উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক সময়ে মানবপাচারকারীদের প্রতারণার শিকার হয়ে ভিয়েতনামে বিরূপ পরিস্থিতিতে পড়ছেন বাংলাদেশি প্রবাসীরা।  ভালো বেতনে কাজ দেওয়ার কথা বলে তাদের টুরিস্ট ভিসায় ভিয়েতনামে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।  তবে সেদেশে পৌঁছানোর পর তাদের কাছ থেকে পাসপোর্ট রেখে দিচ্ছে দালাল চক্র।  এর আাগেও একাধিক বাংলাদেশি ভিয়েতনামে আটক হয়েছেন।  গত ৩ জুলাই রাতে ভিয়েতনামে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসে হাজির হন ২৭ কর্মী এবং দূতাবাসের কাছে তাদের চলমান সমস্যা ও পরিস্থিতি নিয়ে একটি লিখিত অভিযোগ করেন।  ৩ জুলাই ভিয়েতনাম থেকে ১১ বাংলাদেশি শুন্য হাতে দেশে ফেরত আসেন। সূত্র- বাংলা ট্রিবিউন

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ