আইসিজেতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ৫০০ পৃষ্ঠার নথি জমা গাম্বিয়ার

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগে অবস্থিত আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতে (আইসিজে) মিয়ানমারের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার পূর্ণাঙ্গ আবেদন জমা দিয়েছে গাম্বিয়া।  শুক্রবার (২৩ অক্টোবর) আদালতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ৫০০ পৃষ্ঠারও বেশি নথি জমা দিয়েছে দেশটি।  এছাড়াও ওই নথিগুলোর পক্ষে পাঁচ হাজার পৃষ্ঠার প্রমাণাদিও উপস্থাপন করেছে গাম্বিয়া।
মানবাধিকার সংস্থা ফোর্টিফাই রাইটসের ওয়েবসাইট থেকে শনিবার (২৪ অক্টোবর) এ তথ্য জানা গেছে।  সংস্থাটি জানিয়েছে, আইসিজের আদেশ অনুযায়ী মিয়ানমার সরকারের অবিলম্বে চলমান গণহত্যা রোধ করা উচিত।  এছাড়া রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে গণহত্যার সব প্রমাণও সংরক্ষণ করা উচিত দেশটির।
এর আগে, ২০১৭ সালে রাখাইনের রোহিঙ্গা অধ্যুষিত গ্রামগুলোতে অভিযানের নামে আগুন লাগিয়ে দেয় মিয়ানমারের সেনারা।  এরপর নির্বিচারে সেখানে গণহত্যা চালায় তারা।  ওই সময় রাখাইন থেকে প্রায় ৭ লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেন।  মিয়ানমার সরকার সন্ত্রাস দমনের নামে ওই অভিযান চালালেও একে জাতিগত নিধন বলে অভিহিত করেছে জাতিসংঘ।  ২০১৯ সালের ১১ নভেম্বর মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আইসিজেতে মামলা করে গাম্বিয়া।  বর্তমানে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরদ্ধে ‘গণহত্যার’ অভিযোগে শুনানি চলছে জাতিসংঘের উচ্চ আদালতে।
ফোর্টিফাই রাইটসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ম্যাথিউ স্মিথ বলেন, রোহিঙ্গাদের ন্যায়বিচারের দিকে নতুন আরেকটি পদক্ষেপ এটি।  আন্তর্জাতিক জবাবদিহিতা অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিশেষ করে যখন মিয়ানমারে রোহিঙ্গা ও অন্যদের প্রতি ব্যাপক নৃশংস আচরণ অব্যাহত রয়েছে।
গাম্বিয়ার এই নথিপত্র জমা দেয়ার পর আইসিজেতে একটি পাল্টা-আবেদন জমা দেয়ার জন্য তিন মাস সময় পাবে মিয়ানমার।  বিচার চলাকালীন সময়ের মধ্যে এসব আবেদন ও পাল্টা আবেদন প্রকাশ করা হবে না।  এটি বেশ কয়েক বছর স্থায়ী হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক বিচার আদালত মামলার প্রাথমিক শুনানির পর মিয়ানমারকে রাখাইন রাজ্যে গণহত্যা রোধে অস্থায়ী ব্যবস্থা নেয়ার অর্ন্তবর্তী আদেশ দিয়ে একটি রুল জারি করেন।  গাম্বিয়ার প্রাথমিক আবেদনের পর আইসিজে মামলার সমর্থনে বেশ কিছু প্রমাণ পান।  এর ভিত্তিতে আদালত মিয়ানমারকে ওই অস্থায়ী আদেশ দেন এবং মামলাটি এগিয়ে নিতে সম্মত হন।  এরই পরিপ্রেক্ষিতে গাম্বিয়া এ পূর্ণাঙ্গ আবেদন জমা দিলো।
চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালতের প্রেসিডেন্ট বিচারপতি আবদুল কাফি আহমেদ ইউসুফ রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা নিশ্চিতে চারটি অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ ঘোষণা করেন।  সেগুলো হচ্ছে- রোহিঙ্গাদের হত্যা, মানসিক ও শারীরিক নিপীড়ন ও ইচ্ছাকৃত আঘাত করা যাবে না।  গণহত্যার কোনো আলামত নষ্ট করা যাবে না।  গণহত্যা অথবা গণহত্যার প্রচেষ্টা বা ষড়যন্ত্র না করার জন্যআইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ দিত হবে।  মিয়ানমারকে পরিস্থিতি উন্নয়নে কী ব্যবস্থা নিয়েছে সে বিষয়ে দেশটিকে অবশ্যই চার মাসের মধ্যে লিখিত জমা দিতে হবে।
এর আগে, গত জুলাই মাসে ফোর্টিফাই রাইটস ২টি ভিডিও প্রকাশ করে যেখানে মায়ো উইন তুন ও জাও নাইং তুন ৩০ জন রোহিঙ্গাকে গণহত্যা ও অন্যান্য অপরাধের কথা স্বীকার করে।  এছাড়া এই গণহত্যায় যারা তাদের রোহিঙ্গাদের নির্মূল করার নির্দেশ দিয়েছিলো সেই চেইন অব-কমান্ডের কথাও জানায় তারা।– সূত্র- ইউএনবি

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ