কে এই জো বাইডেন?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
পুরো নাম জোসেফ রবিনেট বাইডেন জুনিয়র।  তবে সংক্ষিপ্ত জো বাইডেন নামে পরিচিত তিনি।  ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সদস্য় বাইডেন দেশটিতে দীর্ঘদিন ধরে অ্যাটর্নি হিসাবে কর্মরত ছিলেন।  এরপর নেমে পড়েন রাজনীতির ময়দানে।  নিজ রাজ্য ডেলাওয়ারে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে সিনেটর ছিলেন তিনি।  সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমলে ৪৭তম ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্ব পালন করে জো।
দেখে নেয়া যাক তার ব্যক্তিগত জীবনের কিছু তথ্য…
জন্ম
১৯৪২ সালের ২০ নভেম্বর জো বাইডেনের জন্ম।  বাবা জোসেফ রবিনেট বাইডেন সিনিয়র, মা ক্যাথরিন ইউজেনিয়া ফিনেগান।  মা আইরিশ বংশোদ্ভূত।  উত্তরপূর্ব পেনসিলভেনিয়ার স্ক্র্যানটনে বেড়ে ওঠেন তিনি।  বাবা বাইডেন সিনিয়র ছিলেন ফারনেস ক্লিনার।  তবে জীবনের বড় একটি সময় তার কেটে গেছে গাড়ির সেলসম্যান হিসাবেও।  ছোটবেলা থেকে প্রবল দারিদ্রের মাঝে বড় হয়েছেন মার্কিন এই রাজনীতিক।
নিজের মানসিকতা দৃঢ় করতে বাবা-মায়ের অবদান এবং দারিদ্রতাকে অসংখ্যবার ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি।  যে দারিদ্রতা আর কঠিন জীবনযাত্রা তাকে একজন পোক্ত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে সহায়তা করেছে; তা অনেক সাক্ষাৎকারে অকপটে স্বীকার করেছেন বাইডেন।
পড়াশোনা ও শিক্ষা-জীবন
স্ক্র্যান্টনে সেন্ট পালস এলিমেন্টরি স্কুলে পড়াশোনা করেন বাইডেন।  ১৩ বছর বয়সে পরিবার-সহ ডেলাওয়ারে আসেন তিনি।  ছোটবেলা থেকে বাচনশক্তিতে সমস্যা ছিল বাইডেনের।  এ জন্য স্কুলে সহপাঠীরা প্রায়ই তাকে নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করতো।
সেন্ট হেলেনা স্কুল, বার্চমেরে অ্যাকাডেমির শিক্ষার্থী হিসেবে শিক্ষকদের নজর কাড়েন রোগাটে, ছিপছিপে কিশোর বাইডেন।  ছোট্টবেলায় কথা বলতে গিয়ে আটকে যাওয়া শিশু বাইডেন আজ মার্কিন রাজনীতির অন্যতম আইকন।
কলেজ থেকে দাম্পত্য জীবন
ডেলাওয়ার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাস ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পড়াশোনার পাঠ চুকেন বাইডেন।  ছোটবেলা থেকে ফুটবল খেলার প্রতি ছিল অন্য রকম এক টান।  জন এফ কেনেডির রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের অন্যতম ভক্ত ছিলেন তিনি।
১৯৬১ সালের দিকে ধীরে ধীরে রাজনীতির দিকে ঝুঁকে পড়েন।  রাজনীতির মাঠে নামার পর নেইলিয়া হান্টারের সঙ্গে পরিচয় হয়।  সেই পরিচয় শেষ পর্যন্ত পরিণয়ে রূপ নেয় ১৯৬৬ সালে।  তাদের ঘরে রয়েছে জোসেফ, হান্টার, নাওমি নামের তিন সন্তান।
রাজনৈতিক জীবন
জো বাইডেন ১৯৬৮ সালে একটি ল ফার্মে কর্মরত ছিলেন।  ১৯৭০ সালে নিউ ক্যাসেল কাউন্টি কাউন্সিলে নির্বাচিত হন।  এরপর নিজস্ব ল ফার্ম প্রতিষ্ঠা করেন।  ১৯৭২ সালের নভেম্বরে রিপাবলিকান দলীয় সিনেটর স্যালেব বগসের বিপক্ষে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী মনোনীত হন তিনি।  এরপর মার্কিন ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিখে ফেলেন নিজের নাম।  মার্কিন ইতিহাসে পঞ্চম সর্বকনিষ্ঠ সিনেটর হিসাবে নির্বাচিত হন ২৯ বছরের বাইডেন।
১৯৭৭ সালে ফের বিয়ে করেন বাইডেন।  দ্বিতীয় স্ত্রী জিলের ঘর আলো করে কন্যা সন্তান অ্যাশলে জন্মান ১৯৮১ সালে।
রাজনীতিতে মোড়
১৯৬৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি হিসেবে নিযুক্ত হন জো বাইডেন।  ১৯৭০ সালে কান্ট্রি কাউন্সিলে নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি।  ১৯৭৩ সালে প্রথমবার সিনেটে যান তিনি।  এরপর ১৯৭৮, ১৯৮৪, ১৯৯০, ১৯৯৬, ২০০২ এবং ২০০৮ সালে সিনেটর হিসেবে টানা নির্বাচিত হন জো বাইডেন।  সিনেটর হিসেবে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশের ইরাক নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন তিনি।
ভাইস-প্রেসিডেন্ট
১৯৭২ সালে বড় দিনের উৎসবের জন্য ক্রিসমাস ট্রি কিনতে গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান প্রথম স্ত্রী নিলিয়া।  বিয়ের পর স্ত্রীকে নিজের স্বপ্নের কথা শুনিয়েছিলেন বাইডেন।  বলেছিলেন, তিনি স্বপ্ন দেখেন ৩০ বছর বয়স হওয়ার আগে একবার সিনেটর নির্বাচিত হতে চান তিনি।  এরপর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার স্বপ্ন রয়েছে বলে স্ত্রীকে জানান।
স্ত্রীকে বলা স্বপ্নের বাস্তবায়নে রাজনীতির ময়দানে এবার জোরেশোরে আসার জানান দিলেন বাইডেন।  ১৯৮৭ সালে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রেসিডেনশিয়াল প্রাইমারিতে অংশ নেয়ার ঘোষণা দেন তিনি।  তবে অসুস্থতার কারণে পরের বছর এই লড়াইয়ে পিছু হটতে বাধ্য হন তিনি।  ২০০৭ সালের কথা।  আবারও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেনশিয়াল প্রাইমারিতে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নেন।  ওই সময় বারাক ওবামা এবং হিলারি ক্লিনটনের বিপক্ষে নিজের অবস্থান তৈরি করে নিতে ব্যর্থ হন।
হিলারি ক্লিনটনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দাঁড়াতে পারেননি তিনি।  পরে ২০০৮ সালে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার কাছ থেকে টেলিফোন পান তিনি।  বাইডেনকে রানিংমেট হিসেবে বেছে নেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন ওবামা।  ২০০৯ সালের ২০ জানুয়ারি বাইডেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেন।  ২০১৭ সাল পর্যন্ত একই পদে ছিলেন তিনি।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ