‘শত অনুরোধেও’ নেপালি পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে দেখা দিলেন না মোদি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
তিন দিনের ভারত সফর শেষে অনেকটা মনোক্ষুণ্ন হয়েই দেশে ফিরতে হলো নেপালের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে।  শত চেষ্টা শত অনুরোধ করেও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাক্ষাৎ পেলেন না তিনি।  খবর কাঠমান্ডু পোস্টের।
সূত্রের বরাতে নেপালি সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রদীপ গ্যাবালির ভারত সফরকালে মোদির সঙ্গে সাক্ষাতের অনেক চেষ্টা-তদবির করেছে নেপালি পক্ষ।
এমনকি শনিবার স্থানীয় সময় দুপুর ২টায় ফিরতি ফ্লাইটের আগপর্যন্ত আশা জিইয়ে রেখেছিল তারা।  কিন্তু শেষদিন শুধু ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে নেপালিদের।
নয়া দিল্লির নেপালি দূতাবাসও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গ্যাবালির সাক্ষাৎ করানোর চেষ্টা করেছিল।  নেপালের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভারতে পা রাখার মাসখানেক আগে থেকেই তদবির চালাচ্ছিল তারা।  কিন্তু, শেষপর্যন্ত আশানুরূপ কোনও ফল আসেনি।  অথবা বলা যায়, নেপালের ওই অনুরোধে কর্ণপাত করেনি ভারত।
এবিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন ভারতে নেপালের রাষ্ট্রদূত নিলাম্বর আচার্য্য।
নেপাল-ভারত যৌথ কমিশনের ৬ষ্ঠ বৈঠকে অংশ নিতে গত বৃহস্পতিবার দিল্লি পৌঁছান প্রদীপ গ্যাবালি।  শুক্রবার ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে ওই বৈঠকে যোগ দেন তিনি।  তাদের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক, করোনা ভ্যাকসিনে সহযোগিতা, বাণিজ্য, যোগাযোগসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
এসময় নেপালি পক্ষ তাদের দেশে চলমান রাজনৈতিক সংকট নিয়ে কথা বলতে চাইলেও তাতে বিন্দুমাত্র আগ্রহ দেখায়নি ভারত।
নেপালে ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছে কয়েক মাস ধরে।  এর মধ্যে হঠাৎ করেই গত ২০ ডিসেম্বর প্রতিনিধি পরিষদ ভেঙে দেন নেপালি প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি।  একইসঙ্গে ৩০ এপ্রিল এবং ১০ মে নির্বাচন ঘোষণা করেন তিনি।  ওলির এই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে দেশটির সুপ্রিম কোর্টে এক ডজনেরও বেশি রিট পিটিশন দায়ের করা হয়।
প্রদীপ গ্যাবালি ভারতে যাওয়ার সময় আশা করেছিলেন, তিনি ভারতীয় শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন, যেখানে নয়া দিল্লি ওলি সরকারের সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানাবে।
কূটনৈতিক সূত্রের বরাতে কাঠমান্ডু পোস্ট জানিয়েছে, শনিবার মোদির ব্যস্ত সূচির কারণে গ্যাবালির আশা পূরণ হয়নি।  এদিন ভারতে করোনা ভাইরাস রোধে বিশ্বের বৃহত্তম টিকাদান কর্মসূচি উদ্বোধন করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী।
তাছাড়া, নেপালের রাজনৈতিক অস্থিরতাও গ্যাবালির সঙ্গে মোদির সাক্ষাৎ না হওয়ার অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।  ওলির পদক্ষেপে নেপালের রাজনীতিবিদরা এখন দুইভাগে বিভক্ত।  এ অবস্থায় নেপালি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ দেশটিতে ভুল বার্তা পাঠাতে পারে বলে বিশ্বাস নয়া দিল্লির।
প্রদীপ গ্যাবালির সঙ্গে নরেন্দ্র মোদির সাক্ষাৎ না করিয়ে দিল্লি এই বার্তাই দিতে চাচ্ছে যে, তারা নেপালের অভ্যন্তরীণ বিষয় থেকে দূরে থাকতে চায়।
নেপাল-ভারতের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে চিড় ধরার শুরু মূলত ২০১৯ সালের নভেম্বরে।  সেসময় দিল্লি বিতর্কিত কালাপানি অঞ্চলকে ভারতের মানচিত্রভুক্ত করায় ক্ষেপেছিল কাঠমান্ডু।  গত মে মাসে লিপুলেখ দিয়ে একটি লিংক রোড উদ্বোধন করে সেই বিতর্ক আরও উসকে দেন ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী।
এর জবাবে কালাপানি, লিপুলেখ ও লিম্পিয়াধুরা অন্তর্ভুক্ত করে সংসদে নতুন মানচিত্র পাস করে নেপাল।  এর তীব্র প্রতিবাদ জানায় নয়া দিল্লি।
গত সপ্তাহে নেপালের প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, ভারত সফরে গিয়ে বিতর্কিত ভূমির বিষয়টি তুলবেন নেপালি পররাষ্ট্রমন্ত্রী।  তবে গ্যাবালি দিল্লিতে পা রাখার পরপরই ভারতীয় মহল জানিয়ে দেয়, এসব নিয়ে আপাতত কোনও কথা হচ্ছে না।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ