সেনাবাহিনীর দখলে মিয়ানমার

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
মিয়ানমারের ক্ষমতা দখল করেছে দেশটির সেনাবাহিনী।  সোমবার ভোরে অভিযান চালিয়ে রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চি এবং ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের আটক করা হয়।  রাজধানী নেপিডো ও প্রধান শহর ইয়াঙ্গুনের রাস্তায় রাস্তায় টহল দিতে শুরু করে সামরিক বাহিনীর সদস্যরা।  দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়। এরপর সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে অভ্যুত্থানের খবর নিশ্চিত করে সেনাবাহিনী।  এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবদমাধ্যম আল জাজিরা।
সামরিক বাহিনীর মালিকানাধীন টেলিভিশনে ঘোষণা করা হয়েছে, সশস্ত্র বাহিনীর কমান্ডার-ইন-চিফ সিনিয়র জেনারেল মিং অং হ্লাং-এর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হয়েছে।
এই সামরিক অভ্যুত্থানের নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়া।  হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র জেন সাকি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারের সাম্প্রতিক নির্বাচনের ফল পরিবর্তনের চেষ্টা বা দেশটির গণতান্ত্রিক উত্তরণে প্রতিবন্ধকতা তৈরির যে কোনও প্রয়াসের বিরোধী।  এসব পদক্ষেপ বাতিল করা না হলে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এক বিবৃতিতে অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, মিয়ানামারের ঘটনায় তার দেশ গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।
২০২০ সালের নভেম্বর মাসের নির্বাচনে এনএলডি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়।  সেনাবাহিনী সমর্থিত প্রভাবশালী বিরোধী দল ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (ইউএসডিপি) ভোটে প্রতারণার অভিযোগ তুলে ফল মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানায়। কদিন আগে সেনাপ্রধান জেনারেল মিং অং হ্লাং বলেন, প্রয়োজন হলে সংবিধান বাতিল করা হতে পারে।  তারপর থেকেই অভ্যুত্থানের গুঞ্জন শুরু হয়। এরপর অভ্যুত্থানের আশঙ্কা প্রকাশ করে এর নিন্দা জানায় জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা।  তবে এ আশঙ্কাকে ভুল বলে বিবৃতি দেয় সেনাবাহিনী।  এর দু’দিন পরই গ্রেফতার হলেন সু চি, মিন্টসহ দেশটির নির্বাচিত শীর্ষ নেতারা।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজধানী নেপিডো ও প্রধান শহর ইয়াঙ্গুনের রাস্তায় রাস্তায় সেনারা টহল দিচ্ছে। প্রধান প্রধান শহরে মোবাইল ও ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।
সোমবার ভোরে এনএলডির মুখপাত্র মিয়ো নিউন্ট রয়টার্সকে বলেন, রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা, প্রেসিডেন্ট ও অন্য শীর্ষ নেতাদের ভোরেই অভিযান চালিয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।  তিনি জনগণকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে হুমকি দেওয়া হয়েছিল, ‘নির্বাচনে প্রতারণার’ অভিযোগ নিয়ে যে রাজনৈতিক সংকটের সৃষ্টি হয়েছে তা সমাধানে পদক্ষেপ না নেওয়া হলে ‘ব্যবস্থা গ্রহণের’ পরিকল্পনা করা হচ্ছে। ওই ব্যবস্থা কী অভ্যুত্থান হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে এ সপ্তাহে সেনাবাহিনীর এক মুখপাত্র বলেছিলেন, সেই আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।  তবে শনিবারের অফিশিয়াল বিবৃতিতে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়, সম্প্রতি তাদের প্রধান জেনারেল সংবিধান বিলোপের যে কথা বলেছেন, সংবাদমাধ্যমসহ কিছু সংস্থা তার অপব্যাখ্যা করেছে।
জান্তা আমলে তৈরি মিয়ানমারের সংবিধানে সেনাবাহিনীকে বেশ কিছু ক্ষমতা দেওয়া আছে।  যেমন: পার্লামেন্টের ২৫ শতাংশ আসনের সদস্য সরাসরি সেনাবাহিনী থেকে আসবেন। এতদিন পর্যন্ত দেশটির বেসামরিক সরকার সেনাবাহিনীর সঙ্গে ক্ষমতা ভাগাভাগি করেই দেশ পরিচালনা করে আসছিল। নভেম্বরের নির্বাচন নিয়েই প্রথম দুই পক্ষ সরাসরি এতটা বিরোধে জড়িয়েছে। সোমবার পার্লামেন্টের অধিবেশন শুরুর আগেই বেসামরিক সরকার ও সেনাবাহিনীর মধ্যকার আলোচনা ভেস্তে যায়।

ডিসি/এসআইকে/এমএস