তিস্তা চুক্তি হচ্ছে না রাজ্য সরকারের আপত্তির কারণে : ভারতের দূত

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বেশকিছু ইস্যু নিষ্পত্তি হলেও তিস্তা চুক্তির বিষয়টি নিয়ে এখনো কোনো সুরাহা হয়নি।  দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ের বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে বহুবার আলোচনা হলেও তাতে ফল আসেনি।  এ ক্ষেত্রে বারবারই উঠে এসেছে রাজ্য সরকার তথা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ‘আপত্তি’র কথা।  সেই বিষয়টিই উঠে এলো বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামীর কথাতেও।
তিনি বলছেন, ভারত সরকার পানি ইস্যুতে বাংলাদেশের সঙ্গে সর্বোচ্চ পর্যায়ের সহযোগিতামূলক সম্পর্ক বজায় রাখতে আগ্রহী।  সেই আগ্রহের কারণেই দুই দেশের মধ্যে ছয় নদী নিয়ে যৌথ ওয়ার্কিং কমিটির কাজ শুরু হয়েছে।  তবে তিস্তা চুক্তি না হওয়া দুঃখজনক।  ভারতের রাজ্য সরকারের আপত্তির কারণেই তিস্তা চুক্তি আটকে আছে।  তবে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার বিষয়টি সুরাহার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে।
সোমবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবে কূটনৈতিক প্রতিবেদকদের সংগঠন ডিকাব আয়োজিত ‘ডিকাব টক’ অনুষ্ঠানে ভারতীয় হাইকমিশনার এসব কথা বলেন।
ভারতের হাইকমিশনার দোরাইস্বামী বলেন, ‘তিস্তা বিষয়ে সুরাহার জন্য ভারত সরকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে।  যে কারণে বিষয়টির মীমাংসা হচ্ছে না, আমি সেটি ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করছি।  তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তির জন্য ভারত সরকারকে আমাদের অভ্যন্তরীণ একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে অনুমোদন নিতে হবে।  সেই অনুমোদনের জন্য ভারত সরকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে’।
এ পর্যায়ে রাজ্য সরকারের ভূমিকার কথা তুলে ধরে ভারতীয় দূত বলেন, ‘তিস্তার চুক্তির জন্য ভারতের রাজ্য সরকারের অনুমতি প্রয়োজন।  যার জন্য আমরা কাজ করছি।  এটা খুবই দুঃখজনক যে রাজ্য সরকারের আপত্তির কারণে তিস্তা চুক্তি এখনো হচ্ছে না।  তাই নরেন্দ্র মোদির আসন্ন সফরে তিস্তা বিষয়ক চুক্তি হবে কি না, সেটিও আমি এখনই বলতে পারছি না’।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সম্ভাব্য ঢাকা সফরে তিস্তা চুক্তি নিয়ে অনিশ্চয়তার কথা এর আগে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনও।  গত ৩১ জানুয়ারি এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের ভোট আছে আগামী এপ্রিলে।  এছাড়া আরও কয়েকটি রাজ্যের ভোট আছে।  আমরা জানি যে ভোটের সময় যেকোনো বিষয়ে কাজ করা খুব জটিল।  এদিকে, মার্চে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা সফর করার কথা, আর তাদের ভোট এপ্রিলে।  সেদিক দিয়ে তিস্তা চুক্তির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ থেকে যায়’।
এর আগে, ২০১৮ সালের ২৫ ও ২৬ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের পশ্চিমববঙ্গে দুই দিনের সফর করেন।  ওই সফর শেষে ২০১৮ সালের ২৮ মে তৎকালীন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ এক প্রেস বিফিংয়ে বলেন, তিস্তার পানি বণ্টন বা এই বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গকে পাশ কাটিয়ে ভারত সরকার কিছুই করবে না।  কেননা, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির এই বিষয়ে আগ্রহ রয়েছে।  একই ইস্যুতে গত বছরের মার্চে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘তিস্তা ইস্যুতে ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বেও কাজ হচ্ছে না’।
তিস্তা চুক্তি নিয়ে এমন অনিশ্চয়তার বিষয়গুলো এর আগেও বারবার বলে আসছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা।  ভারতীয় দূত দোরাইস্বামীর কথায় তাদের সেই অনিশ্চয়তার কথাই ফিরে আসছে।
বিষয়টি জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘যারা বলেন যে খুব তাড়াতাড়ি তিস্তার সমাধান হয়ে যাবে, তাদের আগে নদী বিষয়ে বুঝতে হবে।  ইংরেজি রিভার ও বাংলা শব্দ নদী এক বিষয় নয়।  প্রবাহমান জলরাশিতে আত্মা, প্রাণ ও শক্তি থাকলেই নদী হবে।  তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি যে দ্বিমত পোষণ করেন, তা এক অর্থে ঠিক আছে’।
তিনি আরও বলেন, ‘তিস্তার উৎপত্তি সিকিম থেকে। সিকিম থেকে পানিপ্রবাহ পশ্চিমবঙ্গে যায়, সেখান থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করে।  এই জলপ্রবাহ পশ্চিমবঙ্গে আসার আগেই সিকিমে প্রায় ২০টি বাঁধ অতিক্রম করতে হয়।  এতে করে পশ্চিমবঙ্গের আসার পর তেমন পানি থাকে না।  এই বিষয়ের সমাধান করতে হলে মূল জায়গাটি বুঝতে হবে, সেভাবে কাজ করতে হবে।  এখানে মানসিকতায় পরিবর্তন আনতে হবে’।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ