তেলসম্পদে ভরপুর, সৌদি আরব আসলে কতটা ধনী?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
তেলসম্পদে ভরপুর সৌদি আরব আসলে কতটা ধনী?  এর সুনির্দিষ্ট উত্তর জানা বেশ কঠিন।  দেশটি কখনোই তাদের মোট সম্পত্তি ও ধারদেনার পরিমাণ প্রকাশ করেনি।  এ নিয়ে কিছুটা দ্বিধাদ্বন্দ্ব রয়েছে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে।  সেকারণেই পুরোনো অবস্থান থেকে সরে ঋণের পরিমাণ যুক্ত করে একটি একীভূত ব্যালেন্স শিট তৈরির কাজে হাত দিয়েছে সৌদি সরকার।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক বিশ্লেষণী প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সৌদির সরকারি বিনিয়োগ তহবিলকে (পিআইএফ) কেন্দ্র করে অর্থনীতি সংস্কার পরিকল্পনা সাজিয়েছেন দেশটির ডি ফ্যাক্টো শাসক যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান।
যুবরাজের চেয়ারম্যানশিপের অধীনে পিআইএফ একটি সাধারণ সার্বভৌম সম্পদ তহবিল থেকে বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীতে পরিণত হয়েছে। সংস্থাটি উবারের মতো হাইটেক কোম্পানির পাশাপাশি বিভিন্ন ক্ষেত্রে কোটি কোটি ডলার বিনিয়োগ করছে, অন্যদিকে জাপানের সফট ব্যাংক পরিচালিত তহবিলে শত কোটি ডলার ঢালার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে।
তবে পিআইএফের আর্থিক বিবরণী (স্টেটমেন্ট) কখনোই প্রকাশ করা হয়নি, এমনকি সৌদির বাজেটেও এর কোনো উল্লেখ নেই।
অবশ্য শুধু সৌদি আরবই নয়, উপসাগরীয় কোনো দেশই তাদের মোট ঋণ ও সম্পদের পরিমাণ প্রকাশ করে না।  তারপরও পিআইএফের ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ প্রোফাইলের কারণে তাদের স্বচ্ছতার বিষয়টি কিছু বিনিয়োগকারীর কাছে বড় ইস্যু হয়ে উঠেছে।
বিলিয়নিয়ার আরামকো
গত বছরের দ্বিতীয়ার্ধে সৌদি সরকার তথাকথিত সার্বভৌম সম্পত্তি ও দেনা ব্যবস্থাপনা (এসএএলএম) ফ্রেমওয়ার্ক নিয়ে কাজ শুরু করে এবং এর মুখপাত্র বলেছেন, বিষয়টি সময়সাপেক্ষ।  কবে নাগাদ এর ফলাফল প্রকাশ হবে তা নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
যতটুকু জানা যায়, পিআইএফের সম্পত্তি বিপুল।  ২০১৫ সালে এর পরিমাণ ছিল ১৫ হাজার কোটি ডলার।  ২০২০ সালে তা ফুলেফেঁপে ৪০ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়েছে।  এর মধ্যে শেয়ারের জন্য সৌদির রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানি আরামকোর সাত হাজার কোটি ডলার যোগ হয়েছে।  দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে গেছে চার হাজার কোটি ডলার।  এছাড়া, আরামকোর আইপিও থেকে আরো তিন হাজার কোটি ডলার পেয়েছে পিআইএফ।
সৌদির এ সার্বভৌম তহবিল ২০১৮ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে ২ হাজার ১০০ কোটি ডলার ঋণ তুলেছে।  চূড়ান্ত হওয়ার পথে রয়েছে আরো একটি ঋণ, যার আকার হতে পারে এক হাজার কোটি ডলারের বেশি।
সংকট উত্তোরণ
সৌদি আরবের বিপুল তেলসম্পদ থাকা সত্ত্বেও দেশটির তরুণ প্রজন্মের জন্য চাকরির ক্ষেত্র তৈরি যুবরাজ সালমানের জন্য অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।  ২০১৬ সাল থেকেই সৌদি সরকার অথনৈতিক নীতিতে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছে।  ২০৩০ সালের মধ্যে বেকারত্বের হার সাত শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য তাদের।
তবে আর্থিক ঘাটতি কমাতে গিয়ে সৌদির বিনিয়োগ কমে গেছে এবং করোনাভাইরাস সংকটে গত বছর বেকারত্বের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে রেকর্ড ১৫ দশমিক ৪ শতাংশে।
গত বছরের আর্থিক ঘাটতি জিডিপির ১২ শতাংশ থেকে কমিয়ে এ বছরের মধ্যেই ৪ দশমিক ৯ শতাংশে আনতে রিয়াদ বড় ধরনের ব্যয় কমিয়ে দিয়েছে।  এর বদলে নিঅমের মতো মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে পিআইএফের ওপর নির্ভর করছে।
যুবরাজ সালমানের ভাষ্যমতে, ২০২৫ সাল পর্যন্ত সৌদির অর্থনীতিতে বার্ষিক ১৫ হাজার কোটি রিয়াল (চার হাজার কোটি ডলার) বিনিয়োগ এবং নিজেদের সম্পত্তি চার লাখ কোটি রিয়ালে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে পিআইএফের।

ডিসি/এসআইকে/এমএস