সাবধান! ৫৩টি দেশ এক ভয়াবহ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
এর শেষ কোথায় কেউ জানে না। প্রতিদিনই সামনে আসছে করোনার একের পর এক নতুন নতুন স্ট্রেইন। যে হারে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে তা রীতিমতো ভয়াবহ। সংক্রমণের এই গতি অব্যাহত থাকলে আগামী কয়েক মাসে ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে এই মহামারী। সতর্কবার্তা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার। ইউরোপ এবং মধ্য এশিয়ার অন্তত ৫৩টি দেশ এক ভয়াবহ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। WHO’র ইউরোপের ডিরেক্টর হ্যান্স ক্রুজ ডেনমার্কে WHO-এর হেডকোয়ার্টারে এক সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, “ইউরোপ এবং মধ্য এশিয়ার ৫৩টি দেশে সংক্রমণের বর্তমান হার গুরুতর উদ্বেগের কারণ। একটি নির্ভরযোগ্য এবং বাস্তবসম্মত হিসাব করলে আশঙ্কা করা যেতে পারে, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে আরও হাফ মিলিয়ন বা পাঁচ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হতে পারে”।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যে দাবি করছে, তা যে নেহাত অমূলক নয়, তা রাশিয়া-সহ একাধিক দেশের পরিসংখ্যানে ইতিমধ্যেই প্রমাণ হয়ে গিয়েছে।
রাশিয়ায় এই মুহূর্তে করোনার দৈনিক মৃত্যু সর্বকালের সব রেকর্ড ভাঙছে। স্রেফ গতকাল সেদেশে করোনায় মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ১১৯ জনের। আক্রান্ত ৪০ হাজারেরও বেশি। শুধু রাশিয়া নয়, পার্শ্ববর্তী বেশ কয়েকটি দেশে করোনার দৈনিক পরিসংখ্যান এখন রেকর্ড পর্যায়ে। যা রীতিমতো চিন্তার। WHO এর ইউরোপ শাখাটি বলেছে যে, এই অঞ্চলে সাপ্তাহিক প্রায় ১.৮ মিলিয়ন নতুন কোভিড-১৯ কেস দেখা গেছে, যা আগের সপ্তাহের তুলনায় প্রায় ৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং একই সময়ে মৃত্যুর হার বেড়েছে ১২ শতাংশ।
WHO’র ইউরোপের ডিরেক্টর ক্রুজ বলেছেন, ‘ ৫৩ টি দেশে কোভিড-১৯ এর কারণে হাসপাতালে ভর্তির হার গত সপ্তাহে দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে। যদি এই গতি অব্যাহত থাকে, তবে এই অঞ্চলটি ফেব্রুয়ারির মধ্যে আরও ৫ লক্ষ মহামারীজনিত মৃত্যুর সাক্ষী হবে। আজ ইউরোপ এবং মধ্য এশিয়ার প্রতিটি দেশই কোভিড-১৯ পুনরুত্থানের প্রকৃত হুমকির সম্মুখীন অথবা এটির বিরুদ্ধে লড়াই করছে।” WHO-এর ইউরোপ শাখাটি জানাচ্ছে, অনেক দেশেই সংক্রমণের হার ফের রেকর্ড স্তরে পৌঁছে গিয়েছে। তবে, স্বস্তি একটাই এখন বিভিন্ন দেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বা সংস্থাগুলি এই করোনা ভাইরাস সম্পর্কে এখন অনেকটাই জেনে গিয়েছে। তবে, ইউরোপের দেশগুলিকে করোনা রুখতে আরও পরিশ্রম করতে হবে।
WHO-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, ইউরোপ এবং মধ্য এশিয়া অঞ্চল জুড়ে গড়ে ৪৭ শতাংশ মানুষকে সম্পূর্ণরূপে টিকা দেওয়া হয়েছে। মাত্র আটটি দেশে তাদের জনসংখ্যার ৭০ শতাংশের টিকাকরণ সম্পূর্ণ করেছে। জেনেভায় ডব্লিউএইচও-র সদর দফতরে ডিরেক্টর হ্যান্স ক্রুজ বলেছেন, কোভিড-১৯ কেস ইউরোপে টানা পঞ্চম সপ্তাহ ধরে বেড়ে চলেছে, এটি একমাত্র অঞ্চল যেখানে সংক্রমণ এখনও বাড়ছে। সুইডেনের প্রধান মহামারী বিশেষজ্ঞ, অ্যান্ডারস টেগনেল বৃহস্পতিবার বলেছেন যে “আমরা স্পষ্টতই কোভিডের অন্য একটি তরঙ্গে আছি, যার বিস্তার সম্পূর্ণরূপে ইউরোপেই কেন্দ্রীভূত”।
এই পরিস্থিতিতে আমস্টারডাম-ভিত্তিক ইউরোপীয় মেডিসিন এজেন্সি (ইএমএ) মানুষকে কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে দ্রুত টিকা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। EMA-এর ক্লিনিকাল স্টাডিজ এবং ম্যানুফ্যাকচারিং টাস্ক ফোর্সের প্রধান ফার্গাস সুইনি দেশবাসীকে সতর্ক করে বলেছেন, ‘ইউরোপে মহামারী সংক্রান্ত পরিস্থিতি এখন খুবই উদ্বেগজনক কারণ আমরা সংক্রমণের হার বৃদ্ধির সাথে সাথে শীতের দিকে যাচ্ছি, হাসপাতালে ভর্তির হার বাড়ছে এবং আমরা দেখতে পাচ্ছি মৃত্যুর হারও বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে ভ্যাকসিনই একমাত্র ভরসার পথ’। সূত্র: hindustantimes.com

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ