পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী গ্রাম, যেখানে সবাই কোটিপতি

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
চীনের সবচেয়ে ধনী গ্রাম হুয়াক্সি।  বিশ্ব জুড়ে ‘সুপার ভিলেজ’নামে পরিচিত গ্রামটি চীনের জিয়াংসু প্রদেশে অবস্থিত।  এই গ্রামে প্রায় দুই হাজার জন লোক বসবাস করে।  প্রতিটি বাসিন্দার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে রয়েছে কমপক্ষে এক কোটি আট লাখ টাকা।
তাদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা সহ সবকিছু বিনামূল্যে দেয়া হয়।  এছাড়াও এখানকার লোকদের কাছে রয়েছে বিলাসবহুল বাড়ি আর অত্যাধুনিক প্রযুক্তির গাড়ি।  গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে পরিবারের সদস্য সংখ্যা অনুযায়ী কম করে হলেও দুটি গাড়ি রয়েছে।  শুধু তাই নয়, এখানকার লোকেরা যে কোনো জায়গায় যেতে হেলিকপ্টার ব্যবহার করেন।
গ্রামটিতে রয়েছে সাতটি বহুজাতিক শিল্প প্রতিষ্ঠান।  যার শেয়ার হোল্ডার বা অংশীদার গ্রামবাসীরাই।  বিশাল বিশাল শিল্পপ্রতিষ্ঠান থেকে তারা বছরে ৮০০ কোটি মার্কিন ডলার আয় করে।  হুয়াক্সি সবাই ধনী হলেও সেখানকার সবকিছুই অনেক রহস্যময়।  গ্রামের প্রতিটি ঘরের আকার এবং নকশা একই রকমের।  বাড়িগুলো দেখতে পশ্চিমা জমিদার বাড়ির মতো।
সবাই নামিদামি ব্র্যান্ডের জিনিসপত্র ব্যবহার করেন।  সব বাসিন্দা একসঙ্গে সমবেত হওয়া ও খাওয়ার জন্য বিশাল জায়গা থাকলেও গ্রামের জুয়া খেলা ও মাদক সেবন পুরোপুরি নিষিদ্ধ।  সেখানে নেই কোনো ক্লাব, মদের দোকান, নাইট ক্লাব এমনকি পার্টি করার জন্য কোনো রেস্তরাও নেই।
২০১১ সালে গ্রামটির ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ৩২৮ মিটার হোটেল তৈরি করা হয়।  যা আইফেল টাওয়ারের থেকেও বড়।  এই ভবনের চূড়ায় সম্পূর্ণ স্বর্ণের তৈরি একটি ষাঁড়ের ভাস্কর্যও রয়েছে।  একটন ওজনের এই ভাস্কর্যের মূল্য ৪৩ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি।
পর্যটকদের কাছে অন্যতম প্রধান আকর্ষণ এই হোটেলটিকে বলা হয় হুয়াক্সির ঝুলন্ত গ্রাম।  আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে এই গ্রামের শ্রমিকদের কোনো ছুটির দিন নেই।  তাদেরকে সপ্তাহের সাতদিনই কাজ করতে হয়।  গ্রামে বসবাসকারী কোনো সদস্যের গণমাধ্যমের সামনে কথা বলার অনুমতি নেই।
এমনকি পর্যটকদের সঙ্গে কথা বলতে পারবে না তারা।  তবে গ্রামবাসীদের অর্জিত সম্পদটি আসলে তাদের নিজেদের নয়, পুরোটাই কর্পোরেশনের।  গ্রামের সম্পদ গ্রামেই থাকবে এই নীতিতে বিশ্বাসী হুয়াক্সিবাসি।  তাই কেউ গ্রাম ছেড়ে যেতে চাইলে সঙ্গে করে কিছুই নিয়ে যাওয়ার অনুমতি নেই।
১৯৬১ সালে গড়ে ওঠে গ্রামটি।  স্থানীয়দের মতে প্রথম দিকে আর পাঁচটা গ্রামের মতোই ছিল হুয়াক্সি।  তখন গ্রামের বাসিন্দারা খুব দরিদ্র ছিল।  প্রথম থেকে মাত্র ৬০০ মানুষ বসবাস করত সেখানে।  তবে গ্রামটি আধুনিক রূপ পায় কমিউনিস্ট পার্টি সাবেক সেক্রেটারি উ রেনবাও অক্লান্ত প্রচেষ্টায়।  তিনি সেই গ্রামের উন্নয়নের জন্য রোড ম্যাপ প্রস্তুত করেছিলেন।
রেনবাও ১৯৯০ সালের শেষের দিকে গ্রামটিতে বারোটি কর্পোরেশন এবং একটি শেয়ারবাজারের কার্যক্রম শুরু করেন।  পাশাপাশি তিনি পোশাক এবং বিভিন্ন ধাতু তৈরি কারখানা তৈরি করেন।  তারপর তাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।  রাতারাতি গ্রামের ভাগ্য বদলে যায় এবং এটি বিশ্বের সবচেয়ে ধনী গ্রামে পরিণত হয়।
চীনের সবচেয়ে জনপ্রিয় কৃষক উপাধি পাওয়া এই ব্যক্তিটি ২০১৩ সালে মারা যান।  তখন থেকেই তার পরিবারের সদস্যরা এই গ্রামেই নিয়ন্ত্রণ করে আসছে।  হুয়াক্সিকে সোশালিস্ট তকমা দিয়েছেন গ্রামবাসীরা।  দাবি করা হয় একসময় যারা চাষাবাদ করতেন তারা এখন কোটিপতি।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ