হারে শুরু টাইগারদের টি-টোয়েন্টি সিরিজ

ক্রীড়া ডেস্ক, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
সিনিয়রদের কেউ নেই। নুরুল হাসান সোহানের নেতৃত্বে এক ঝাঁক তরুণ নিয়ে টি-টোয়েন্টিতে ‌‘নতুন যুগে’ পা রেখেছে বাংলাদেশ।  তারুণ্যনির্ভর দলটির শুরুটা হলো হার দিয়ে।  হারারেতে সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে জিম্বাবুয়ের কাছে ১৭ রানে হেরে গেছে বাংলাদেশ।  এতে তিন ম্যাচের সিরিজে স্বাগতিকরা এগিয়ে গেলো ১-০ ব্যবধানে।
বাংলাদেশি বোলারদের লাগামহীন বোলিংয়ে প্রথমে ব্যাট করা জিম্বাবুয়ে ৩ উইকেটেই তুলেছিল ২০৫ রান।  জবাবে ৬ উইকেটে ১৮৮ রানে থেমেছে টাইগারদের ইনিংস।
শেষ ৫ ওভারেই যেন জিম্বাবুয়ের কাছে হেরে গেছে বাংলাদেশ।  ওই ৫ ওভারে জিম্বাবুয়ে নিয়েছিল ৭৭ রান।  বাংলাদেশের দরকার ছিল ৬৬।  অধিনায়ক সোহানের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ২০৬ রানের বিশাল লক্ষ্য তাড়া করেও জয়ের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল টাইগারদের।  কিন্তু শেষ রক্ষা আর হয়নি।  সোহান অধিনায়কের মতোই দায়িত্ব নিয়ে খেললেও ওত বড় লক্ষ্য আর পাড়ি দিতে পারেনি সফরকারীরা।  ২৬ বলে ১ চার আর ৪ ছক্কায় সোহান অপরাজিত থাকেন ৪২ রানে।
বাংলাদেশের হয়ে ওপেন করতে নামেন লিটন দাস আর মুনিম শাহরিয়ার।  প্রথম ওভারে তারা নেন ৫ রান।  দ্বিতীয় ওভারেই সাজঘরের পথ ধরেন মুনিম।  ওয়েলিংটন মাসাকাদজার ঘূর্ণিতে শর্ট থার্ডম্যানে সহজ ক্যাচ দেন ৮ বলে ৪ করে।  এরপরই খোলস ছেড়ে বের হয়ে আসেন লিটন।  দারুণ ব্যাটিংয়ে দলকে এনে দেন পাওয়ার প্লেতে ১ উইকেটে ৬০ রানের উড়ন্ত সংগ্রহ।
আজ শনিবার টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এক হাজার রানের মাইলফলকও ছুঁয়েছেন লিটন দাস।  তার ঝড়ো ব্যাটিংয়েই পাওয়ার প্লে ভালোভাবে কাটিয়ে বড় লক্ষ্য তাড়া করার আশা দেখে টাইগাররা।  কিন্তু এরপরই অদ্ভূত এক আউট হয়ে সাজঘরে ফেরেন ডানহাতি এই ব্যাটার।
ইনিংসের সপ্তম ওভারে শন উইলিয়ামসের বলে শর্ট ফাইন লেগে ক্যাচ তুলে দেন লিটন।  এনগারাভা বলটা তালুবন্দী করলেও দ্রুত হাত থেকে ফেলে দেন।  ফলে ক্যাচ আউট থেকে বেঁচে যান লিটন।  কিন্তু লিটন ভেবেছিলেন তিনি আউট হয়ে গেছেন।  তাই ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে পড়েন।  ওই সুযোগে রানআউট করে দেন উইলিয়ামস।  ১৯ বলে ৬ বাউন্ডারিতে গড়া লিটনের ৩২ রানের ঝড়ো ইনিংসটি থামে বোকার মতো আউটে।
এনামুল হক বিজয় শুরুটা করেছিলেন ধীরেসুস্থে।  ২৫ বলে ২০ রান করে উইকেটে সেটও হন।  এরপর হাত খোলার চেষ্টা করেন।  ইনিংসের দশম ওভারে সিকান্দার রাজাকে মিডউইকেটের ওপর দিয়ে দারুণ এক ছক্কা হাঁকান।  পরের বলেও একই জায়গা দিয়ে ছক্কা মারতে গিয়েছিলেন বিজয়।  সেটাই বিপদ ডেকে আনে। ব ল টাইমিং করতে না পেরে এবার ডিপমিডউইকেটে ক্যাচ হয়ে যান সাম্বার।  ২৭ বলে ২ ছক্কায় ২৬ রানে সাজঘরে ফেরেন বিজয়।  দুই ওভার পর আফিফ হোসেনও আউট হন নিজের ভুলে।  লুক জঙউইয়ের পাতা ফাঁদে পা দিয়ে পুল শট খেলে ডিপমিডউইকেটে ক্যাচ দেন (৮ বলে ১০)।
অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান উইকেটে আসার পর জয়ের আশা জাগে বাংলাদেশের।  ১৫তম ওভারে ওয়েলিংটন মাসাকাদজাকে টানা দুই ছক্কা হাঁকান টাইগার দলপতি।
নাজমুল হোসেন শান্তর সঙ্গে ২০ বলে ৪০ রানের ঝড়ো জুটি গড়েন সোহান।  জুটিটি ভাঙে শান্ত পুল করতে গিয়ে বল সোজা আকাশে তুলে দিলে।  ২৫ বলে ৩ চার আর ১ ছক্কায় ৩৭ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে জঙউইয়ের শিকার হন শান্ত।  এছাড়া মোসাদ্দেক হোসেন করেন ১০ বলে ১৩।
এর আগে টাইগার বোলারদের লাগামহীন বোলিংয়ে টি-টোয়েন্টিতে নিজেদের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়ে জিম্বাবুয়ে।  হারারে স্পোর্টস ক্লাব মাঠে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ওয়েসলি মাধভিরে এবং সিকান্দার রাজার ঝড়ো ইনিংসে ভর করে ৩ উইকেট হারিয়ে ২০৫ রান সংগ্রহ করে স্বাগতিকরা।
বাংলাদেশের বিপক্ষে এর আগে টি-টোয়েন্টিতে জিম্বাবুয়ের সর্বোচ্চ রান ছিল ১৯৩।  এবার সেটাকে ছাড়িয়ে গেছে তারা।  আর নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসে টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ রান ছিল ২৩৬, সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে।
ওয়েসলি মাধভিরে এবং সিকান্দার রাজা মিলে চতুর্থ উইকেট জুটিতে ৯১ রান যোগ করেন স্বাগতিকদের ইনিংসে।  ৪৬ বলে ৬৭ রান করে দলীয় ১৯০ রানের মাথায় আহত হয়ে মাঠ ছাড়েন ওয়েসলি মাধভিরে।  ২৬ বলে ৬৫ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন সিকান্দার রাজা।  ৭টি বাউন্ডারির সঙ্গে ৪টি ছক্কার মার মারেন তিনি।
এছাড়া ৩৩ রান করেন শন উইলিয়ামস, ২১ রান করেন ক্রেইগ আরভিন এবং ওপেনার রেগিস চাকাভা করেন ৮ রান।  বাংলাদেশের হয়ে মোস্তাফিজুর রহমান নেন ২ উইকেট এবং মোসাদ্দেক হোসেনের শিকার বাকি ১ উইকেট।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ