কর্ণাটকে মোদির বিজেপির ভরাডুবি, সরকার গঠনের পথে কংগ্রেস

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
বাকি দিনটা কেমন যাবে, তা যদি সকাল দেখেই বোঝা যায়, তাহলে বলতে হয় আজ শনিবারের সকালটা কংগ্রেসের জন্য অন্য রকম বার্তা নিয়ে এসেছে। বিজেপিকে হারিয়ে ভারতের দক্ষিণের রাজ্য কর্ণাটকে সরকার গড়তে যাচ্ছে দলটি। বিধানসভায় পেতে যাচ্ছে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা।
কর্ণাটক বিধানসভায় মোট আসন ২২৪। সকাল ১০টা পর্যন্ত প্রাপ্ত ফলাফলে কংগ্রেস এগিয়ে ১১৮ আসনে।
বিজেপি এগিয়ে আছে ৭৯টি আসনে। আর ধর্মনিরপেক্ষ জনতা দল (জেডিএস) ২৪টি আসনে এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা পাঁচটি আসনে এগিয়ে আছে। রাজ্যে সরকার গড়তে প্রয়োজন ১১৩টি আসন।
রাজ্যের ৩৬টি কেন্দ্রে শুরু হয়েছে ভোটগণনা। প্রাথমিক ইঙ্গিতে দেখা যাচ্ছে, বিজেপির আটজন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী ভোটের লড়াইয়ে পিছিয়ে রয়েছেন। একমাত্র উপকূলবর্তী এলাকায় বিজেপি দখল ধরে রাখতে পেরেছে। রাজ্যের অন্যত্র দলটির মুঠো আলগা হয়ে গেছে। বিশেষ করে রাজধানী বেঙ্গালুরু ও শহরাঞ্চলে বিজেপি পিছিয়ে রয়েছে।
কর্ণাটকের দক্ষিণাঞ্চলে ওল্ড মাইসুরু (মহীশূর) এলাকায় ভোটের ফল অনেককেই অবাক করেছে। এখানকার ৬৪টি আসনের মধ্যে কংগ্রেস এগিয়ে আছে ৩৫ টিতে। অথচ একসময় এসব আসনে জেডিএসের প্রভাব ছিল প্রশ্নাতীত। এবারের নির্বাচনে এই ৬৪ আসনের মধ্যে বিজেপি ১১টিতে এগিয়ে রয়েছে। পাঁচ বছর আগেও এখানে বিজেপির অবস্থান ছিল না বললেই চলে।
ভোটের ফলের এই গতিপ্রকৃতি ঠিক থাকলে কয়েকটি বিষয় স্পষ্ট হয়েছে। প্রথমত, কর্ণাটকের বিধানসভা নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ম্যাজিক্যাল (মোদি ম্যাজিক) ভাবমূর্তি কাজে এল না। এই রাজ্যে বিজেপি পুরো প্রচারপর্ব চালিয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর ‘ক্যারিশমার’ ওপর ভর করে। রাজ্যবাসী তা প্রত্যাখ্যান করেছে।
দ্বিতীয়ত, কংগ্রেস এই নির্বাচনকে পুরোপুরি ‘হাইপার লোকাল’ করে তুলেছিল। ব্যাপক মাত্রার দুর্নীতিকে তারা হাতিয়ার করেছে। বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী বাসবরাজ বোম্মাই সরকারকে ‘৪০ শতাংশ কমিশন সরকার’ বলে অভিহিত করেছেন। মানুষ তা গ্রহণ করেছে। ব্যালটে দুর্নীতিবিরোধী অবস্থান নিয়েছে।
তৃতীয়ত, বিজেপির ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতিতে কর্ণাটকের মানুষ প্রভাবিত হয়নি। দেড় বছর ধরে বিজেপি ‘হিজাব–হালাল–আজান–আমিষের’ রাজনীতি করে এসেছে। প্রচারপর্বের শেষের দিকে বজরঙ্গ দল–পিএফআইয়ের মতো উগ্র ধর্মান্ধ দলকে নিষিদ্ধ করার যে প্রতিশ্রুতি কংগ্রেস দিয়েছিল, বিজেপি তাকে হাতিয়ার করেছে। বজরঙ্গ দল এবং বজরঙ্গবলীকে (হিন্দু দেবতা হনুমান) সমার্থক করে প্রধানমন্ত্রী মোদি পর্যন্ত সরব হন। শেষ দিকে তিনি ভাষণ শেষ করেছেন ‘জয় বজরঙ্গবলী’ বলে। এই মেরুকরণ কাজে দেয়নি।
চতুর্থত, বিজেপির ‘ডাবল ইঞ্জিন’ তত্ত্ব রাজ্যবাসী খারিজ করেছে। ফলে প্রধানমন্ত্রী মোদি ব্যাপক উন্নয়নের যে প্রতিশ্রুতি শুনিয়েছেন, তাতে মানুষ ভরসা রাখতে পারছে না।
পঞ্চমত, কংগ্রেস জনমুখী যে পাঁচ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, সাধারণ মানুষ তা গ্রহণ করছে। যেমন ‘গৃহলক্ষ্মী’ প্রকল্পে দরিদ্র পরিবারের নারী গৃহকর্ত্রীকে মাসে ২ হাজার রুপি, ‘যুবনিধি’ প্রকল্পের আওতায় বেকার স্নাতকদের মাসে ৩ হাজার রুপি ও ডিপ্লোমাধারীদের দেড় হাজার রুপি, ‘গৃহজ্যোতি’ প্রকল্পের আওতায় দরিদ্র পরিবারের জন্য মাসে ২০০ ইউনিট বিদ্যুৎ বিনা মূল্যে দেওয়া, ‘অন্নভাগ্য’ প্রকল্পে দরিদ্র পরিবারে মাথাপিছু মাসে ১০ কেজি করে পছন্দের দানাশস্য দেওয়া, পুরো রাজ্যে সরকারি বাসে নারীদের বিনা ভাড়ায় ভ্রমণের সুযোগ প্রভৃতি। শহর ও গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র মানুষ তা গ্রহণ করেছে। কংগ্রেসের প্রতিশ্রুতি, নতুন সরকারের মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকেই এই প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তব রূপ পাবে।
কর্ণাটকে সর্বশেষ বিধানসভা নির্বাচন হয়েছিল ২০১৮ সালে। ওই নির্বাচনে বিজেপি জয়ী হয় ১০৪ আসনে, ভোট পায় সাড়ে ৩৬ শতাংশ। কংগ্রেস প্রায় ২ শতাংশ বেশি ভোট টেনেও আসন জেতে ৮০টি। ১৮ শতাংশ ভোট পেয়ে জেডিএস জেতে ৩৭টি আসন।
ওই সময় কর্ণাটকে বিজেপিকে ঠেকাতে কংগ্রেস–জেডিএস জোট সরকার গড়েছিল। কিন্তু ১৪ মাসের মধ্যে বিজেপি দুই দলের বিধায়কদের ভাঙিয়ে নিয়ে সরকার গঠন করে। মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন বি এস ইয়েদুরাপ্পা। দুই বছর পর তাঁকেও সরিয়ে দেওয়া হয়। মুখ্যমন্ত্রী করা হয় বাসবরাজ বোম্মাইকে।

ডিসি/এসআইকে/এমএসএ