প্রস্তুত স্বপ্নের ‘বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু’

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি, দৈনিক চট্টগ্রাম >>>
পার্বত্য খাগড়াছড়ির সাবেক মহকুমা শহর সীমান্তঘেঁষা রামগড়ে ফেনী নদীর ওপর নির্মিত বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু-১ এর নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার পথে।  আগামি ৫ জানুয়ারির মধ্যে শেষ হবে এর নির্মাণ কাজ।  জানুয়ারিতেই এই সেতুর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এদিকে, স্বপ্নের মৈত্রী সেতু নির্মাণ হওয়ার পরপরই বহুল কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশের রামগড়ে স্থলবন্দরের নির্মাণ কাজ শুরু হবে।  এরই মধ্যে স্থলবন্দরের জন্য প্রায় ১০ একর ভূমি অধিগ্রহণের কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে।  স্থলবন্দর নির্মিত হলে গতিশীল হবে পাহাড়ের অর্থনীতি।  দু’দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, পর্যটন, কর্মসংস্থান, আমদানি-রফতানিসহ অর্থনীতর নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে এমনটাই মনে করছে স্থানীয়রা।
রামগড় স্থলবন্দর হবে দেশের ১৫তম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রথম স্থলবন্দর।  এদিকে ভারত সরকার দক্ষিণ এশিয়ার সঙ্গে তাদের সেভেন সিস্টারখ্যাত উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাতটি রাজ্যের গেটওয়ে হিসেবে দেখছে রামগড় স্থলবন্দরকে।
ভারতের ন্যাশনাল হাইওয়েস অ্যান্ড ইনফ্রাস্টাকচার ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেড (এনএইচআইডিসিএল) এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তানিশ চন্দ্র আগারভাগ ইনপাকন প্রাইভেট লিমিটেডের তত্ত্বাবধানে ৮২ দশমিক ৫৭ কোটি রুপি ব্যয়ে রামগড়ের মহামুনিতে ২৮৬ একর জমির ওপর ৪১২ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১৪ দশমিক ৮০ মিটার প্রস্থের দু’লেন বিশিষ্ট এক্সট্রা ডোজড, ক্যাবল স্টেইড আরসিসি মৈত্রী সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু করে।
১২টি পিলার সম্বলিত স্বপ্নের মৈত্রী সেতুটির বাংলাদেশ অংশে নির্মাণ করা হয়েছে আটটি এবং ভারতের অংশে চারটি পিলার।  এছাড়া স্প্যান রয়েছে ১১টি।  এরমধ্যে বাংলাদেশ অংশে সাতটি ও ভারত অংশে চারটি।  নদীর অংশে ৮০ মিটারের স্প্যান এবং নদীর দু’পাড়ের ৫০ মিটারের দুটিসহ মোট ১৮০ মিটার দৈর্ঘ্যের এ তিনটি স্প্যানই হচ্ছে মেইন স্প্যান।
এরই মধ্যে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে বাণিজ্য বাড়ানোর লক্ষ্যে গেল ১৮ আগস্ট ২০২০ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় খাগড়াছড়ির রামগড় থেকে হেয়াকো-বারৈয়াইয়ারহাট সড়কের জন্য ৮৪৫ কোটি ৫৩ লাখ টাকার একটি উন্নয়ন প্রকল্পসহ সাতটি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়।  প্রকল্পটিতে সরকার দেবে ২৬৪ কোটি ৩৩ লাখ টাকা এবং ভারতীয় ঋণ ৫৮১ কোটি ২০ লাখ টাকা।  ২০২২ সালের জুনের মধ্যে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে।  এরইমধ্যে রামগড়-বারৈয়ারহাট সড়কের বেশ কয়েকটি দু’লেন বিশিষ্ট ব্রিজ নির্মাণাধীন রয়েছে।
এ বিষয়ে রামগড় পৌরসভার মেয়র কাজী মোহাম্মদ শাহজাহান রিপন বলেন, বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার মধ্য দিয়ে দু’দেশের সীমান্তবাসীরা আশার আলো দেখছেন।  দ্রুত স্থলবন্দরের অবকাঠামো নির্মাণ হলে বাড়বে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ কর্মসংস্থান।
উল্লেখ্য, ২০১০ সালের জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিল্লি সফরকালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে রামগড়-সাবরুম স্থলবন্দর চালুর যৌথ সিদ্ধান্তের পর বাংলাদেশ-ভারত দু’দেশের মধ্যে ট্রানজিট সুবিধা, যাতায়াত ব্যবস্থা সহজতর করা এবং আমদানি-রফতানি বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০১৫ সালের ৬ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু-১ নামে ফেনী নদীর ওপর নির্মিত সেতুটির ভিত্তি প্রস্থর ফলক উন্মোচন করেন।  ২০১৭ সালের ২৭ অক্টোবর থেকে মৈত্রী সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়।

ডিসি/এসআইকে/এমএএইচ