৬০ পৌরসভায় ভোট গ্রহণ শুরু

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
স্থানীয় সরকারের পৌর নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে ২০ লাখেরও বেশি ভোটারের ৬০ পৌরসভায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে।  শনিবার সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরুর পর বিভিন্ন কেন্দ্রে শীত উপেক্ষা করেই ভোটারদের সারি দেখা গেছে।  বিকাল ৪টা পর্যন্ত এসব পৌরসভায় ভোট চলবে।  এর মধ্যে ২৯টি পৌরসভায় ভোটগ্রহণ হবে ইভিএমে, ৩১ পৌরসভায় ব্যালট পেপারে ভোট নেওয়া হবে।
এসব পৌরসভার জন্য মেয়র, সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে নতুন প্রতিনিধি বেছে নেবেন ভোটাররা।  নির্বাচন কমিশন বলছে, করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে সব স্বাস্থ্যবিধি মেনেই ভোটের সব আয়োজন করা হয়েছে।  বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশ ও আনসারসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে নির্বাহী ও বিচারিক হাকিমরাও মাঠে রয়েছেন।
মেয়র পদে সব মিলিয়ে মোট নয়টি দলের প্রার্থী রয়েছে এই ধাপে। তবে বরাবরের মতই মূল লড়াই হবে নৌকা ও ধানের শীষের প্রার্থীদের মধ্যে।
পৌর ভোটের দ্বিতীয় ধাপে অংশ নিচ্ছে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশের কনিউনিস্ট পার্টি-সিপিবি, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম, জাসদ, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি-এনপিপি, লিবারেল ডেমোক্রোটক পার্টি-এলডিপি।  মেয়র পদে দলীয় প্রার্থীর বাইরে স্বতন্ত্র প্রার্থীও রয়েছেন।
দলের মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থীদের অবস্থান এবং কাউন্সিলর প্রার্থীদের দ্বন্দ্বে কিছু পৌরসভায় দ্বিতীয় ধাপের ভোটের প্রচারে সংঘাত ও প্রাণহানিও ঘটেছে।
২৮ ডিসেম্বর প্রথম ধাপের ভোট অনেকটা শান্তিপূর্ণ হলেও দ্বিতীয় ধাপের ভোট কেন্দ্র করে বেশ উত্তেজনা দেখা দেয় কয়েকটি এলাকায়।  ফরিদপুর, শৈলকুপা ও চট্টগ্রামের প্রচারে বাধা ও সহিংসতার ঘটনাও ঘটেছে।
নৌকা-ধানের শীষের ভোটের লড়াই দেখতে প্রস্তুত দ্বিতীয় ধাপের ৬০ পৌরসভা
কয়েকটি এলাকায় সংঘর্ষ, সহিংসতা ও পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে কিছুটা উত্তাপ ছড়ালেও সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে ‘উদ্বেগ বা শঙ্কা’ নেই বলে আশ্বস্ত করেছেন নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা।
ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ শুক্রবার বলেন, “নির্বাচনী এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে।  কোনো উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা নেই।  সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোটের সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।  পরিস্থিতি বিবেচনায় কিছু এলাকায় অতিরিক্ত সংখ্যক বিজিবি সদস্য মোতায়েন রাখা হয়েছে”।
আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ‘ভালো রয়েছে’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, ইভিএম ও নির্বাচনী সামগ্রী পৌঁছে গেছে সব কেন্দ্রে।  ভোটের দিন সকালে ব্যালট পেপারও পৌঁছে যাবে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রগুলোতে।
প্রিজাইডিং কর্মকর্তাদের অনুরোধের কারণে ভোট শুরুর আগে সকালে ব্যালট পেপার পৌঁছানো হবে।  এতে করে রাতে অনিয়মের কোনো অভিযোগ ওঠার সুযোগ থাকবে না বলে মন্তব্য করেন অশোক।
তিনি বলেন, “আমরা সব শেষ পরিস্থিতির খোঁজ খবর রাখছি।  স্থানীয় প্রশাসন, এসপিদের সঙ্গে কথা হয়েছে।  ভোটের দিন আপডেট থাকব।  সুষ্ঠু ভোটের জন্য যা করা দরকার তা নিশ্চিত করা হচ্ছে।  স্বাস্থ্যবিধি মেনে ভোটাররা নির্বিঘ্ন পরিবেশে ভোট দিতে পারবেন”।
স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচনে মেয়র, কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণে ভোটার উপস্থিতিও প্রথম ধাপের মতো ‘ভালো’ হবে বলে প্রত্যাশা করেন ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ।
কথার লড়াই
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, অতীতের মতো এবারও সরকার নির্বাচন কমিশনকে ‘সর্বাত্মক সহযোগিতা’ দেবে।
“এটা সরকারের দায়িত্ব।  ভোটাররা যাতে শান্তিপূর্ণভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে সে লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে”।
ওবায়দুল কাদেরের সংসদীয় এলাকায় নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাট পৌরসভায় শনিবারই ভোট হচ্ছে।  সেখানে মেয়র পদে নৌকার প্রার্থী আবদুল কাদের মির্জা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ভাই।
স্থানীয় রাজনীতি ও ভাইকে নিয়ে কাদের মির্জার সাম্প্রতিক বিভিন্ন বক্তব্য সারাদেশেই আলোচিত হচ্ছে।  তার তির্যক বক্তব্যের সূত্র ধরে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শুক্রবার বলেছেন, ওবায়দুল কাদেরের উচিৎ ‘নিজের দিকে তাকানো’।
বিএনপির এ নেতা বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, যদি সুষ্ঠু নির্বাচন হয়, ভোটাররা যদি ভোট কেন্দ্রে যেতে পারে, ভোট দিতে পারে, ভোট চুরি ও ডাকাতি করে যদি না হয়, তাহলে অবশ্যই বিএনপির মনোনীত প্রার্থী জয়লাভ করবে”।
এবার পৌরসভাগুলোতে ভোট হচ্ছে চার ধাপে।  প্রথম ধাপে গত ২৮ ডিসেম্বর ২৪টি পৌরসভায় ভোট হয়, অধিকাংশ পৌরসভায় আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা জয়ী হন।
১৬ জানুয়ারি দ্বিতীয় ধাপের পর তৃতীয় ধাপে ৩০ জানুয়ারি ও চতুর্থ ধাপে ১৪ ফেব্রুয়ারি ভোট হবে।
দ্বিতীয় ধাপের ভোট তথ্য
৬০টি পৌরসভায় তিন পদে ৩২৮৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এর মধ্যে মেয়র পদে ২২১, সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৭৪৫ জন এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৩২০ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এই ধাপে ১০৮০টি ভোটকেন্দ্রে রয়েছে ৬৫০৮ ভোটকক্ষ।
ভোটার রয়েছেন ২২ লাখ ৪০ হাজার ২২৬ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ১১,০৮,৪৩১ জন এবং মহিলা ভোটার ১১,৩১,৮৩১ জন।
মেয়র পদে সিরাজগঞ্জের কাজিপুর, পাবনার ভাঙ্গুরা, পিরোজপুরের পিরোজপুর সদর এবং নারায়ণগঞ্জের তারাব পৌরসভায় একক প্রার্থী আছেন। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এই চার জায়গায় মেয়র নির্বাচিত হয়েছে। এছাড়া সাতজন সাধারণ কাউন্সিলরও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমার শেষ ছিল ২০ ডিসেম্বর, বাছাই ২২ ডিসেম্বর, প্রত্যাহারের শেষ সময় ছিল ২৯ ডিসেম্বর। ভোট ১৬ জানুয়ারি।
ইভিএমে যেসব পৌরসভায় ভোট
দিনাজপুরের বীরগঞ্জ, বগুড়ার সারিয়াকান্দি ও সান্তাহার, নওগাঁর নজিপুর, রাজশাহীর কাকনহাট ও আড়ানী, নাটোরের নলডাঙ্গা, সিরাজগঞ্জের কাজীপুর, পাবনার ফরিদপুর, মেহেরপুরের গাংনী, কুষ্টিয়ার কুমারখালী, ঝিনাইদহের শৈলকুপা, বাগেরহাটের মোংলা, মাগুরা সদর, পিরোজপুর সদর, টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী, ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া, নেত্রকোণার কেন্দুয়া, কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর, ঢাকার সাভার, নরসিংদীর মনোহরদী, নারায়ণগঞ্জের তারাবো, শরীয়তপুর সদর, সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর, কুমিল্লার চান্দিনা, ফেনীর দাগনভূঞা, নোয়াখালীর বসুরহাট, খাগড়াছড়ি সদর ও গাজীপুরের শ্রীপুর।

ডিসি/এসআইকে/এমএনইউ