ভ্যাকসিন আসায় মাস্কে বেড়েছে অনিহা

দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
মগবাজারের একটি ওষুধের দোকানে গত ২৩ জানুয়ারি ঢুকে দেখা যায় সেখানে ক্রেতা-বিক্রেতা কারও মুখে মাস্ক নেই।  করোনার এই সময়ে মাস্ক ছাড়া কেন প্রশ্ন করতেই একজন বলেন, ভ্যাকসিন এসে গেছে, আর মাস্ক দরকার নেই।
রাজধানীর হাতিরঝিলে বিকেল বেলাতে বেড়াতে আসেন প্রায় কয়েকশ’ মানুষ।  তাদের মুখে মাস্ক থাকে না, সামাজিক দূরত্বের বালাই নেই।  জানতে চাইলেই উত্তর আসে-ভ্যাকসিন এসেছে, আর করোনার ভয় নেই।
অথচ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভ্যাকসিন কার্যক্রম শুরু হলেও মাস্ক পরতে হবে।  একইসঙ্গে মানতে হবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নিয়ম, নিয়মিত ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধোয়ার মতো সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি।  যতক্ষণ পর্যন্ত না দেশের মোট জনসংখ্যার ৭০ থেকে ৮০ ভাগ মানুষকে টিকা দেওয়া হচ্ছে ততদিন সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে।
বিশ্বের ৫৪তম দেশ হিসেবে করোনা সংক্রমণের ৩২৭ দিন পরই বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন প্রদান শুরু হলো।
বুধবার রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ২৫ জনকে করোনা ভাইরাসের টিকা দেওয়া হয়।  আজ বৃহস্পতিবার (২৮ জানুয়ারি) এ হাসপাতালের সঙ্গে আরও চারটি হাসপাতাল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় ও মুগদা জেনারেল হাসপাতালে মোট ৫০০ জনকে টিকা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের পরিচালকরা।
টিকা দেবার পরও যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অবশ্যই মেনে চলতে হবে, এর কোনও বিকল্প নেই বলে জানান রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর।  তিনি বলেন, ভ্যাকসিন দিলেও স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে যতক্ষণ পর্যন্ত না পৃথিবীর ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ মানুষকে ভ্যাকসিনেটেড না হয়।
তবে এটা কেবল বাংলাদেশের ক্ষেত্রেই নয় মন্তব্য করে ডা. আলমগীর বলেন, পৃথিবীর একটি দেশেও যদি একজন করোনাতে আক্রান্ত মানুষ থাকেন তাহলে সারা পৃথিবীতে মাস্ক পরা থেকে শুরু করে সবধরনের স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে।  কারণ যেকোনও দেশে যেকোনও সময় সেটা আউটব্রেক হতে পারে।
টিকা দেওয়া হচ্ছে এটা অবশ্যই একটি শুভ উদ্যোগ মন্তব্য করে মহামারী বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন বলেন সবাই যেন টিকা নেবার উদ্দেশ্যে নিবন্ধন করেন।  আর যারা নিবন্ধন করতে পারবেন না, তাদেরকে সহযোগিতা করতে হবে।
তবে ভ্যাকসিন এলেও কিন্তু মাস্ক পরতে হবে-এর কোনও ব্যত্যয় করা যাবে না বলে জানান মুশতাক হোসেন।
তিনি আরও বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে সবাইকেই-পরবর্তী বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা নিরীক্ষার সফলতা না আসা পর্যন্ত।  কারণ, এ টিকার কার্যকারিতা কতদিন থাকবে, কতজনকে টিকা দিলে হার্ড ইমিউনিটি তৈরি হবে এসব কিছুই এখনও অজানা, কাজেই কোনও ঝুঁকি নেওয়া যাবে না, বলেন ডা. মুশতাক হোসেন।
তিনি বলেন, যিনি টিকা নেবেন তিনি সুরক্ষিত থাকবেন কিন্তু তাকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে এ কারণে যে তার থেকে যেন অন্য কেউ সংক্রমিত না হন, তিনি যেন সংক্রমণ না ছড়ান।
ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা কতদিন থাকবে না অথবা ভ্যাকসিন নেবার পর আর ইনফেকশন হবে না-এসব তথ্য আমাদের কাছে নেই এখনও জানিয়ে জনস্বাস্থ্যবিদ চিন্ময় দাস বলেন তাই এখনও রিস্ক থেকে যেতে পারে। আর স্বাস্থ্যবিধি মানলে কেবল ভ্যাকসিনের জন্যই নয়, অন্যান্য উপকারিতাও রয়েছে।  এই করোনাকালে যেহেতু এই ভ্যাকসিন খুব দ্রুত তৈরি করা হয়েছে, যদিও অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি কোভিশিল্ড সবচেয়ে নিরাপদ জানিয়ে চিন্ময় দাস বলেন, সবাইকে যেহেতু একসঙ্গে ভ্যাকসিন দেওয়া যাচ্ছে না তাই সে কারণেও স্বাস্থ্য বিধি মানতে হবে।
আর যেসব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা বলা হচ্ছে, সেগুলো মেজর কিছু নয়।   যেকোনও ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রেই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়-যেটা এতদিন ধরে আমাদের দেশের ইপিআই কার্যক্রমেও হয়েছে বলে জানান তিনি।

ডিসি/এসআইকে/এমএনইউ