দৈনিক চট্টগ্রাম ডেস্ক >>>
শেতাঙ্গ আমেরিকান ক্রিস হোগল ভালোবেসে বিয়ে করেছেন রবি ঠাকুরের ‘কৃষ্ণকলি’র কালো মেয়েকে। এই ‘কালো মেয়ে’ যশোরের কেশবপুর উপজেলার মেহেরপুর গ্রামের আবুল খাঁর মেয়ে রহিমা খাতুন। ক্রিস হোগলের বাড়ি যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানে। শুধু সাদা-কালোই নয়; ব্যবধান ছিল বিত্তেরও। ক্রিস হোগল পেট্রোলিয়াম ইঞ্জিনিয়ার; আর রহিমা জীবিকার সন্ধানে মুম্বাইয়ের বস্তির বাসিন্দা। সব ব্যবধান ঘুচে তারা বাঁধা পড়েছেন অমর প্রেমের বন্ধনে।
এক যুগ আগে ভারতের মুম্বাইয়ে তাদের পরিচয়। এরপর প্রেম আর বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হন তারা। চার বছর আগে ঘর পেতেছেন যশোরের কেশবপুরের মেহেরপুর গ্রামে।
কৃষ্ণকলি কবিতায় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন, ‘কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি/কালো তারে বলে গাঁয়ের লোক/মেঘলা দিনে দেখেছিলেম মাঠে/কালো মেয়ের কালো হরিণ-চোখ…’। ১২ বছর আগে যেন সেই কালো হরিণ-চোখেই বাঁধা পড়েছেন ক্রিস হোগল। সেই স্মৃতি তুলে ধরেন ক্রিস হোগল ও রহিমা খাতুন।
ক্রিস হোগল জানান, তিনি তখন ভারতের মুম্বাইয়ে অনিল আম্বানির রিলায়েন্স ন্যাচারাল রিসোর্সেস লিমিটেড কোম্পানিতে পেট্রোলিয়াম ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ঘটনাচক্রে একদিন মুম্বাইয়ের রাজপথে রহিমার সঙ্গে তার দেখা হয়।
রহিমা খাতুন জানান, শৈশবেই তার বাবা আবুল খাঁ ও মা নেছারুন নেছা অভাবের তাড়নায় ভারতে পাড়ি দেন। তাদের সঙ্গী হন তিনিও। পশ্চিমবঙ্গের বারাসাতে তার মা অন্যের বাড়িতে কাজ করতেন। বাবা শ্রম বিক্রি করতেন। ১৩-১৪ বছর বয়সেই কিশোরী রহিমাকে তার বাবা বিয়ে দেন। সেখানে তার তিন সন্তান জন্ম নেয়। অভাবের তাড়নায় স্বামী তাকে ছেড়ে চলে যান। বাধ্য হয়ে জীবিকার তাগিদে রহিমা চলে যান মুম্বাই। কাজের সন্ধানে সেখানেই আশ্রয় নেন পূর্বপরিচিত এক ব্যক্তির বস্তির খুপড়িতে।
হঠাৎ একদিন সন্ধ্যায় মুম্বাইয়ের রাস্তায় পরিচয় হয় ক্রিস হোগলের সঙ্গে। হোগল একদৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে ছিলেন। হোগল সামান্য হিন্দি বলতে পারতেন, রহিমাও পারতেন। দু-একটি বাক্য বিনিময়েই পরিচয়। এরপর প্রায়ই দেখা হতো। ছয় মাস পর তারা রেজিস্ট্রি করে বিয়ে করেন। প্রায় তিন বছর সেখানে সংসার করেন। এরপর কর্মসূত্রে চীনে চলে যান ক্রিস হোগল। তার সঙ্গী হন রহিমা। সেখানে পাঁচ বছর থাকার পর স্বামীকে নিয়ে বাপের ভিটায় ফিরে আসেন। ক্রিস হোগলও নামধারণ করেন মো. আয়ুব। তা-ও চার বছর হতে চলল।
মেহেরপুর গ্রামে ফিরে আসার পর রহিমা খাতুনের বাবা আবুল খাঁ মারা যান। বাড়ির উঠানের পাশে তাকে কবর দেয়া হয়। মোজাইক পাথর দিয়ে প্রায় ১২ লাখ টাকা খরচ করে বাবার কবর বাঁধাই করেন তারা। রহিমার মা নেছারুন নেছা এখনো জীবিত। রহিমার প্রথম স্বামীর তিন সন্তানও তাদের সঙ্গে থাকে।
ক্রিস হোগল জানান, তার শখ বই পড়া ও মোটরসাইকেল রেসিং। যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানে মোটরসাইকেল রেসিং করতেন। যুক্তরাষ্ট্রে তার মা, মেয়ে ও ছেলে। সেখানে স্ত্রীর সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়েছে অনেক আগে।
ক্রিস হোগল এখন মেহেরপুরে জমি কিনেছেন। প্রায় ১০-১২ বিঘা জমির মালিক তিনি। নিজেই চাষাবাদ করছেন। পুরোদস্তুর কৃষক বনে গেছেন। বর্তমানে বাংলাদেশে সুন্দর একটি পরিবার পেয়ে সুখী এই শেতাঙ্গ আমেরিকান। এখানে তিনি বাড়ি তৈরি করছেন। বাড়ির কাজ শেষ হলে যুক্তরাষ্ট্র থেকে মা ও ছেলেমেয়েকে নিয়ে আসবেন।
বহুদেশ ঘুরেছেন হোগল। তবে বাংলার প্রকৃতিকে ভালোবেসে বাকি জীবনও এখানে কাটাতে চান তিনি। পাশাপাশি এই এলাকার মানুষের কর্মসংস্থান ও আধুনিক চিকিৎসা সেবার জন্য কিছু করতে চান এই আমেরিকান। সূত্র- জাগোনিউজ
ডিসি/এসআইকে/এমএসএ